শ্রমিক দিবসঃ শ্রমিকের মর্যাদা

- শ্রমিক ছাড়া আপনার একটি দিন কল্পনা করে দেখুনতো!!
পারবেন চলতে?
- তাহলে সম্মান করতে শিখুন তাদেরকে।
আমরা অনেক সময় বয়স্ক শ্রমিকদের সাথে তুই, তুমি সম্বোধন করে থাকি  অথচ তারা আমাদের থেকে বয়সে বড়। সমাজের অন্য সাধারণ বয়স্কদের সাথে আমরা এ ধরনের আচরণ করি না। শুধু পদমর্যাদায় ছোটদের সাথে আমরা এ আচরণ করে থাকি। শ্রমিকদের সঠিক মর্যাদা দিতে চাইলে এ ধরণের আচরণ অবশ্যই আমাদের পরিহার করা উচিত ।

আমরা অনেক সময় রিক্সা চালক, সবজি বিক্রেতা বা ছোট ছোট ব্যবসায়ী বা কাজের সাথে জড়িতদের সাথে দাম-দর করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাক-বিতন্ডা করি। আবার আমরাই অনেক জায়গা আছে সেখানে অযথা অপব্যয় করে থাকি। তাই এ সকল শ্রমিকদের আমাদের মধ্য যাদের সামর্থ্য আছে তাদের দুই-পাঁচটাকা বেশি চাওয়ার জন্য খারাপ ব্যবহার না করাই উত্তম।

আমরা অনেক সময় ঋণ নিয়ে অনেক কাজ করে থাকি। তাই অনুরোধ থাকবে কাছে টাকা নেই এই কারণে কোন শ্রমিককে মজুরী দিতে আমরা যেন দেরী না করি। প্রয়োজনে  ঋণ বা অন্যকোন উপায়ে ম্যানেজ করে হলেও শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা জরুরী। শ্রমিক  ভাইদের মধ্যে বেশিরভাগই দিন আনে দিন খাই। আমাদের কাছে তাদের মজুরীর পরিমাণ অনেক কম মনে হলেও এ টাকা পাওয়ার উপরই তাদের সে দিনের খাবার নির্ভর করে।  রাসূল (স.) এ হাদিসটি সবসময় মনে রাখা দরকার-

“শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ কর।”

আমাদের অনেকের বাসায় কাজের লোক থাকে। আমাদের অনেকেই তাদের সাথে  একসাথে বসে খেতে পছন্দ করি না, তাদের জন্য আলাদা খাবার ও পানীয়ের পাত্র রেখে দেই, তাদেরকে নিম্নমানের জামা কাপড় কিনে দেই। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন আপনার থেকে বড় পদমর্যাদর কেউ যদি আপনার সাথে একই আচরণ করে তাহলে আপনার কেমন লাগবে? আর রাসূল (স.) এ হাদিসটি মনে রাখুন- 

“তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তা-ই খেতে দাও, যা তুমি নিজে খাও, তাকে তা-ই পরিধান করতে দাও, যা তুমি নিজে পরিধান কর।” (বুখারী, আবু হুরায়রা রাঃ)

মানুষ হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত ভুল করি। শ্রমিকরা বা আমাদের বাসার কাজের মানুষেরাও মানুষ। তারাও ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তাদেরকে মারধোর করার আগে রাসূল (স:) এ হাদিসটি মনে রাখুন-

হযরত আবুবকর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “ক্ষমতার বলে অধীন চাকর-চাকরানী বা দাস-দাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (ইবনে মাজাহ) তিনি আরো বলেন, “কেউ তার অধীন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কেয়ামতের দিন তার থেকে এর বদলা নেয়া হবে।”

আসুন আমরা সবাই শ্রমিকদের ভালোবাসি। পাশাপাশি কোন পেশাকে ছোটভাবে না দেখি। উন্নত দেশগুলোতে কোন কাজকেউ ছোট হিসেবে দেখা হয় না। আর এ কারণেই তারা উন্নত। আমার এক বন্ধু ছিল সে নিজের কাপড় নিজে পরিস্কার করতো না। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় পিএইচডি করতে যাবার পর সে ক্ষেতে ফসল তোলা ও লাগানো কাজও করেছে। তার কথা এখানে কোন কাজকেই ছোট মনে করা হয় না। আর কোন কাজ ছোট না বলেই সেসকল দেশে শ্রমিকদের বেতন অনেক বেশি। আমাদের দেশের এ ধরণের সংস্কৃতি পরিহার করা উচিত।  

আসুন আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে কোন পেশাকেই ছোট করে দেখা হবে না, শ্রমিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে, সকলে মিলে মিশে সুখ-দুঃখকে ভাগ করে নিবে। কেউ না খেয়ে থাকবে না, কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, কেউ অর্থের অভাবে লেখাপড়া থেকে ঝড়ে পড়বে না।  
তবে পরিবর্তন শুরু হোক নিজ থেকে।

N. Sadat
RU.

No comments

Powered by Blogger.