ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অতীতের জীবনযাত্রা তুলে ধরার একটি উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ সুইতলা মল্লিক পুরের বটবৃক্ষের তলে মিলন মেলা

মানিক ঘোষ কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ থেকে :
অতীতের গ্রামীন জীবনে চাঁদনী রাতে বাড়ির উঠানে গোল হয়ে বসে লণ্ঠন জ্বালিয়ে সব বয়সী মানুষের সামনে মুরব্বীরা রুপকথা, রাজারানী-রাজকণ্যা-রাজপুত্রদের নিয়ে গল্প বলা সহ পুথিপাঠ করতেন। আবার গ্রামের হাঠখোলা বা স্কুল মাঠে প্রায়ই সকলে মিলেমিশে আয়োজন করতেন পালাগান,গুনাইবিবি,রুপবানসহ নানা নামের যাত্রাপালার। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজা কৃষকেরা ক্লান্তি দূর করতে জারি সারি গান গেয়ে সারা মাঠ মাথায় করতেন। চৈত্রের দুপুরে রাখাল গাছের ছায়ায় বসে মনের সুখে বাজাতেন বাঁশের বাঁশি। নতুন ধান ঘরে উঠার পর গ্রামে আয়োজন করা হতো নবান্নের উৎসবের। বিয়ে হলে বর বউ যেতেন পালকিতে চড়ে। পরিবারের মেয়েরা শশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িসহ আত্বীয় বাড়িতে বেড়াতে যেতেন ছই দিয়ে ঘেরা সাজানো গরুগাড়িতে করে। বনভোজন বা দুরে কোথাও কাজে যেতে বাহন হিসেবে ব্যবহার হতো একমাত্র গরুগাড়িই। গ্রামের যে কোন খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানে মাটিতে শীতলপাটি পেতে লম্বা সারিতে বসিয়ে খাবার পরিবেশন করা হতো কলাপাতা অথবা পদ্মপাতায়। কালের বিবর্তনে গ্রামীন জীবন থেকে আজকের দিনে এ সব হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নতির কারনে এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। দেশের উন্নতির কারনে মানুষের চাওয়া পাওয়া রুচিসহ জীবনযাত্রার আমুল পরিবর্তন হয়েছে কিন্ত আমাদের অতীত ভ’লে গেলে চলবেনা। তাই গ্রামীন কৃষি নির্ভর সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিকে আজকের প্রজন্মকে জানানোর জন্য ব্যতিক্রমধর্মী বনভোজনের আয়োজন করেছেন তারা। অনুষ্ঠানটির নানা আয়োজনের মাধ্যমে অতীতের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা যেমন ছিল তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মাত্র। কথাগুলো ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মরহুম কাজী আব্দুল ওয়াহেদ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক কাজী এমদাদুল হক এমদাদের।


বনভোজনের দাওয়াত পেয়ে সরেজমিনে গেলে আয়োজকরা জানান,তাদের গ্রামের মাত্র দুইটি গ্রাম পরেই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ এদেশের জাতীয় সম্পদ ঐতিহাসিক সুইতলা মল্লিকপুরের বটবৃক্ষ। এখানে অতীতে অন্য এলাকা থেকে বনভোজনে আসতেন দুর-দুরান্তের দর্শনার্থীরা। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরও এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তারপরও অতীতের মানুষের সাথে মিল রেখে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ বৃক্ষের তলেই তাদের বনভোজন হবে। রবিবার সকাল ৯ টায় শুরু হয় তাদের গ্রাম থেকে ৫০ জনের বহর নিয়ে বনভোজনের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বাহন হচ্ছে একটি পালকি ও ছই করে সাজানো ৬ টি গরুর গাড়ি। সকলের মধ্যে রয়েছে অতীতের গ্রামীন জীবনের সাজ। কাঁধে গামছা,পরনে লুঙ্গি পায়ে স্যানেø। কেউ কেউ মাথায় দিয়েছেন কৃষকদের মাথার টোপর বা মাথাল। বটবৃক্ষের তলে বেলা ১০ টায় পৌছানোর পর শুরু হয় নানা খেলাধুলা। গ্রামীন সমাজ থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বউচি,কানামাছি,কুতকুত,ডাঙ্গুলী,কাচের বল বা মার্বেল। যারা খেলায় অংশ নিচ্ছেন না তারা ছায়ায় গোল করে বসে এক মুরব্বী কৃষকের মুখের অতীতের নানা গল্প শুনে মজা করছেন।
এ সব কিছুর পরে খাওয়া দাওয়া হলো খেচুড়ি,ডিম ভাজি সাথে দেয়া হয়েছে কাঁচা মরিচ ও পেয়াজ। খাবার পরিবেশন করা হলো কলা পাতায়। প্রত্যেকের হাতে ছিল মাটির তৈরী পানির গ্লাস।

No comments

Powered by Blogger.