ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গ্রামবাসির ব্যবহারের সরকারি রাস্তা গিলে ফেলেছে প্রভাবশালীরা, চলছে চাষাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার:দুই ভাটপাড়ার যোগাযোগ, আর মাঠের ফসল ঘরে উঠানোর সরকারি কাঁচা রাস্তাটি এখন প্রভাবশালীদের দখলে। জায়গাটি দেখলে এখন আর বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় রাস্তা ছিল। আছে একটি আইল। গোটা রাস্তার জায়গা দখল করে সেখানে প্রভাবশারীরা চাষাবাদ করছেন। এই অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের মাঠের একটি রাস্তার।স্থানিয়রা বলছেন, তাদের প্রয়োজনিয় এই মাঠের রাস্তা পর্যায়ক্রমে কাটতে কাটতে সম্পূর্ণরুপে গিলে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। রাস্তা না থাকায় এখন গরুরগাড়ির পরিবর্তে মাথায় করে ফসল ঘরে তুলতে হচ্ছে। দখলকারীদের কবল থেকে সরকারি রাস্তা উদ্ধারের চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি সকরারি কর্মকর্তারাও রাস্তার সিমানা নিদ্ধারন করে খুটি গেড়ে গেছেন, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। দখলকারীরা খুটি তুলে জায়গাটি নিজেদের করেই রেখেছেন। রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জের ছালাভরা নামক স্থান থেকে বের হয়ে একটি পাঁকা সড়ক নলডাঙ্গা বাজার হয়ে কোলাবাজারে মিশেছে। ছালাভরা থেকে কিছুদুর যাবার পর বসুন্ধরা নামক একটি মোড় রয়েছে। এই মোড়ের উত্তরে ছোট-ভাটপাড়া আর দক্ষিনে বড়-ভাটপাড়া নামের দুইটি গ্রাম। ছোট-ভাটপাড়া গ্রামের উত্তরে রয়েছে বেগবতি নদী। দুইটি গ্রামেই রয়েছে দুইটি মাঠ। এই দু’টি মাঠের মাঝ দিয়ে চলে গেছে আনুমানিক ২২ ফুট চওড়া কাঁচা রাস্তা। যার একটি ছোট-ভাটপাড়া গ্রাম পেরিয়ে বেগবতি নদীতে মিলেছে। আরেকটি বড়-ভাটপাড়া হয়ে আনন্দবাগ গ্রামের মাঝ দিয়ে কালীগঞ্জ শহরে মিশেছে। বর্তমানে ছোট-ভাটপাড়া গ্রামের মাঠের মাঝ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটির কোনো অসিস্ত নেই। বড়-ভাটপাড়ার মাঝ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি ব্যবহার করছেন স্থানিয়রা। এ বিষয়ে ছোট-ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর মন্ডল জানান, সিএস, এসএ ও আর.এস তিনটি ভুমি জরিপে এই রাস্তাটি রয়েছে। ম্যাপে এখনও এখানে ২২ ফুট চওড়া একটি সরকারি রাস্তা দেখা যায়। যে রাস্তাটি দিয়ে তারা মাঠে নামতেন। দুই ভাটপাড়ার যোগাযোগও সহজ ছিল। ছোট-ভাটপাড়ার মানুষ মাঠ পেরিয়ে বড়-ভাটপাড়ায় প্রবেশ করতেন। একই ভাবে বড়-ভাটপাড়ারা আসতেন ছোট ভাটপাড়ায়। এছাড়া মাঠের ফসল গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে উঠাতেন। এখন দখলকারীরা গোটা রাস্তা দখল করে নেওয়ায় তাদের কষ্টের শেষ নেই। মাঠের ফসল ঘরে তুলতে মাথায় করে বোঝা বইতে হয়। পাঁকা রাস্তায় উঠতে হলে গ্রাম ঘুরতে হয়। নাম প্রকাশ না করে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, তাদের গ্রামের আব্দুর রউফ, আব্দুস সবুর, সাইফুল ইসলাম, গোলাম রহমান জোয়ার্দ্দার ও খোকন মালাকারের দখলে চলে গেছে গ্রামের রাস্তাটি। তারা পর্যায়ক্রমে রাস্তাটি কেটে চাষযোগ্য জমি বানিয়ে ফেলেছে। সেখানে চলছে চাষাবাদ। রাস্তার মাঝে বসানো হয়েছে গভীর নলকুপ। স্থানটি দেখলে বোঝার উপায় নেই এখানে রাস্তা ছিল। স্থানিয় বাসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিখিল দত্ত জানান, রাস্তাটি বের করার জন্য তারা কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী ভুমি কমিশনার এর নিকট লিখিত আবেদন করেছেন। সহকারী কমিশনার (ভুমি) যাদব সরকার নিজে এসে সার্ভেয়ার দিয়ে মাপার পর রাস্তার সিমানা নিদ্ধারন করে দিয়েছিলেন। সেখানে খুটিও গাড়া হয়েছিল, কিন্তু কয়েকদিন পরই সেই খুটি উঠিয়ে ফেলা হয়েছে।

দকলকারীদের একজন সাইফুল ইসলাম জানান, এক সময় এই স্থানে রাস্তা ছিল এটা ঠিক। তবে এখন গ্রামের দুই পাশ দিয়ে রাস্তা হয়ে গেছে। যে কারনে মাঠের মাঝ দিয়ে আর কোনো রাস্তার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে রাস্তাটি চাষের জমির মধ্যে চলে গেছে। তাদের দখলে সামান্য আছে বলে জানান। তিনি বলেন, রাস্তার জন্য সবাই জমি ছেড়ে দিলে তারাও ছেড়ে দেবেন।এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) যাদব সরকার জানান, ওই স্থানে একটি সরকারি রাস্তা রয়েছে। যা ম্যাপেও বিদ্যমান। রাস্তাটি স্থানিয়রা চাষযোগ্য করে ফেলেছেন। তারা সেটা উদ্ধারের জন্য প্রাথমিক একটা মাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু পানি থাকায় দখলমুক্ত করতে পারেনি। এবার পানি সরে গেলে রাস্তাটি বের করা হবে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.