গুপ্তধনের খোঁজে ২০ ফুট কুয়ো খুঁড়লেন তান্ত্রিক, তার পর…


  • চিত্রা নিউজ ডেস্ক:অ্যাসবেস্টসের ছাউনির ঘুপচি ঘরের মাটির তলায় নাকি লুকিয়ে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ধনসম্পত্তি! এমনই স্বপ্নাদেশ পেয়ে চুপিসারে ১৫ দিন ধরে খুঁড়ে ফেলা হয়েছিল প্রায় ২০ ফুট গভীর কুয়ো। কিন্তু, শেষ রক্ষা হল না। গুপ্তধনের খোঁজ মেলার আগেই পড়শিদের নজরে আসায় পুলিশ আটক করে নিয়ে গেল তান্ত্রিক ও তাঁর সাগরেদকে। বেপাত্তা বাড়ির কর্তাও। বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার লেগোর বুটবাড়ি গ্রামের এই ঘটনা সামনে আসতেই বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে লোকজন ভেঙে পড়ছেন সেখানে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাশ বলেন, ‘‘দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, গুপ্তধনের স্বপ্নাদেশ পেয়ে না কি খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রোহিত নন্দীর অ্যাসবেস্টসের ছাউনির দু’টি ঘরের মধ্যে একটি ঘিরে জটলা। সেই ঘরের মেঝে খুঁড়েই চলছিল গুপ্তধনের সন্ধান। ছ’ফুট চওড়া ও ছ’ফুট দীর্ঘ গর্ত খোঁড়া চলছিল। পাছে মাটি ধসে পড়ে, তা রুখতে গর্তে ঠেসে দেওয়া হচ্ছিল শক্ত মোটা কাঠের ফ্রেম। গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ নন্দী, বৈদ্যনাথ নন্দীরা জানান, গত ক’দিন ধরে রোহিতের বাড়িতে সকালে মোটরবাইকে হেলমেট পরা লোকজন আসছিল। রাতে গ্রাম ছাড়ত। দিনভর তাঁরা ওই বাড়িতে কী করত কেউ জানতে পারতেন না। সন্দেহ হলেও কেউ এত দিন মুখ খোলেননি। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়িতে প্রচুর কাঠ নিয়ে আসার পরে ড্রিল মেশিন চলার শব্দ কানে যেতেই বাসিন্দাদের সন্দেহ গাঢ় হয়। তাঁরা ডেকে আনেন ভিলেজ পুলিশকে। ওই ঘরে ঢুকে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ! ত্রিপল ঢেকে, আলো জ্বালিয়ে ও পাখা চালিয়ে মেঝেয় কুয়ো খোঁড়া চলছিল। বিশাল গর্তে বসানো হচ্ছিল কাঠের ফ্রেমও। খবর পাঠানো হয় থানায়। কামারপুকুরের বাসিন্দা ওই তান্ত্রিক ও গর্তের ভিতরে থাকা এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মাঝবয়সি রোহিত ততক্ষণে চম্পট দিয়েছে। রোহিতের দুই মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে শুধু রয়েছেন তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী। পুলিশের দাবি, তান্ত্রিক তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, রোহিত গুপ্তধনের স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁদের ডেকে এনেছিলেন। যদিও জয়ন্তীর দাবি, ‘‘ওই তান্ত্রিক এসেই বলেছিলেন, আমাদের ঘরের নীচে নাকি মূল্যবান ধাতু রয়েছে। তার কথাতেই চুপিসারে খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। কিন্তু, গুপ্তধন তো পেলাম না, স্বামীও কোথায় গেল কে জানে!’’ এই ঘটনায় অস্বস্তিতে গ্রামের অনেকেই। তাঁদের মধ্যে সুজিত নন্দী, অভিজিৎ নন্দীরা বলেন, ‘‘গ্রামে নব্বই শতাংশই শিক্ষিত। এই গ্রামেরই এক ছেলের নাম ডাক্তারির প্রবেশিকায় তালিকার প্রথম দিকে ছিল। আর সেই গ্রামেই এই বুজরুকি আমরা মানতে পারছি না। আশপাশের গ্রাম ভেঙে লোকজন আসছে। গুপ্তধনের গর্ত দেখার আসায় দুষ্টু লোকও গ্রামে ঢুকছে।’’ গ্রাম ষোল আনা কমিটির সভাপতি কার্তিক নন্দী জানান, গ্রামের সবাই ওই ঘর চাবি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুলিশ গর্ত বোজাতে বলেছে। তবে রোহিত ওই কুয়ো কেটেছে, ওকেই বোজাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.