সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ পালনে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নানা আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন যাপন গ্রামীন। তাদের আচার ব্যবহার চালচলন এদেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে অতি চেনা। তাই বলা যায় আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতির সাথে রয়েছে দেশবাসীর নাড়ির সম্পর্ক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের জীবন যাপনেরও আজ আমুল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে যন্ত্রনির্ভর এক শ্রেণীর মানুষের রুচির পরিবর্তনের সুযোগে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি ঢুকে আজ হারিয়ে যাচ্ছে এদেশের সংস্কৃতির নিজস্বতা। নিজেদের উন্নয়ন ও অতীতের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের উপজেলা প্রশাসন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছে। সরকারী নির্দেশনায় উপজেলা পর্যায়ে সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ পালন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর উপজেলা চত্বরে হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
সকালে উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি,পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ কয়েকশত শিক্ষার্থী, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বাংলাদেশের অতীত সংস্কৃতি তুলে ধরে নানা বেশের পোশাক পরে এক র‌্যালী বের করেন। র‌্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গনে কলসী কাঁকে, কুলা হাতে কৃষাণীর বেশে, রং বেরঙের শাড়ী পরে পল্লীবধু সেজে, কাস্তে হাতে মাথাল মাথায় বাংলার কৃষক সেজে উপজেলার শিল্পকলা একাডেমির সদস্য ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। নজর কাড়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের কর্মিদের কাঁধের অতীতের ঐতিহ্যবাহী পালকী। এরপর মঞ্চে শুরু হয় বিলুপ্তপ্রায় সাপুড়েদের সাপ খেলা, বানরের খেলা, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা আবহমান বাংলার ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, বাউলসহ বাংলার শেকড়ের গান পরিবেশন করেন।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য স্থানীয় নূর আলী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত নন্দী জানান,আজকের দিনে মানুষ যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। কর্মব্যস্ততায় বিনোদন বিমূখ হয়ে পড়েছেন গ্রামবাংলার মানুষও। তাছাড়াও বিদেশী অপসংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতিকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। সে কারনেই সংস্কৃতিকে বাঁচাতে এবং সরকারের উন্নয়নের কর্মকান্ড তুলে ধরতেই এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা জানান,সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ শিরোনামের মেলায় অপসংস্কৃতিকে রুখতে গ্রামবাংলার কৃষিজীবি মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তব চিত্র ও সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় খেলা লাঠিখেলা, সাপের ঝাঁপান খেলা, হাডুডু, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবাধাসহ বিভিন্ন দেশীয় খেলা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ভাওয়া, ভাটিয়ালী, জারি-সারি বাউল এ সকল শেকড়ের গান গ্রাম থেকেই আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এটা ধরে রাখা এবং আমাদের সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.