রাস্তার ছেলে- নাজমুল হাসান রাজীব

-এই ছেলে! তুমি এতটুকুন বয়সে ভিক্ষা কর ক্যান ? আব্বু আম্মু নেই তোমার ?
- মা আছে আর নানী আছে। আর ভিক্কে না করলে খাওয়াইবো ক্যাডাই? আপনে খাওয়াইবেন?
- হুম। খাওয়াব। কি খাবি? বল..
ছেলেটার নাম জসীম। দশ-এগারো বছর বয়স। ওর মত থাকতে আমি ক্লাস ফাইভে পড়তাম। মায়ের সাথে স্কুলে যেতাম। খেলাধুলা করতাম। কি খাব, কে খাওয়াবে এসব নিয়ে কখনও চিন্তা করতে হয় নি। তাই ওর সাথে আমার চিন্তাভাবনার মিল হবে না এটাই স্বাভাবিক। ওদের জীবন যাত্রা একটু কাছ থেকে দেখতে চাচ্ছিলাম।
অন্য সময় হলে কলেজে থাকতাম।একসপ্তাহ অটো ভ্যাকেশন থাকার কারণে সময় ছিল হাতে অনেক। তাই ওকে খাওয়ানোর পর ওদের বাড়ি যেতে চাইলাম। এতক্ষণে ও একটু একটু বিশ্বাস করতে শুরু করেছে আমাকে। তাই নিয়ে গেল ওদের বাড়িতে। রাস্তার পাশের পুরোটা জুড়ে ওদের থাকার জায়গা। ওরা নাকি এখানকার সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা। ওর মা ছিল না। ভিক্ষা করতে গেছে। নানী ছিল। আমাকে পিঁড়িতে বসতে বলল। পিঁড়িতে ধুলা ছিল দেখে জসীম ফুঁ দিয়ে পরিস্কার করে দিল। কথা হল ওর নানীর সাথে । ওর বাবার নামও নাকি ছিল জসীম। ওর জন্মের আগেই ওর বাবা ওদের ছেড়ে চলে যায়। জসীমের জন্মের পর নাকি একদিন এসেছিল। আর আসেনি। জসীম নামটা ওর মায়ের রাখা। আগে ওরা রাস্তার ওইপাশে থাকত। ওর জন্মও নাকি ওখানেই। বছর তিনেক হল এইপাশে এসেছে।
তাবুর মধ্য থেকে আরেকটা শিশুর কান্নার আওয়াজ পেলাম। জিজ্ঞেস করে জানলাম শিশুটি জসীমের ছোট ভাই। আকরাম। এগারো মাস বয়স।ওর বাবা নাকি ছয় মাস হল ওদের ছেড়ে গেছে। নানী বলল জসীমের বাবার চেয়ে আকরামের বাবা নাকি ভাল ছিল অনেক। ওদের দুইবেলা করে খাইতে দিত। আকরাম নামটা নাকি ওর বাবাই রেখেছিল।
একটু ভাবুনতো। একটা ছেলে। যার জন্ম রাস্তায়। দশটা বছর ধরে বড় হয়েছে রাস্তায়। জন্মের পর থেকেই তার খাওয়া নিয়ে টেনশন করা লাগে। বাবার স্নেহ পায়নি কখনও। স্কুলের বারান্দায় যায়নি কোনদিন। চার বছর বয়স থেকে ভিক্ষা করে। মারা গেলে হয়ত বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে দাফন হবে।
আর আরেকটা ছেলে। যার জন্ম স্কয়ার হসপিটালে। বড় হয়েছে প্রাসাদে। অতিরিক্ত খাওয়ার দরুণ যার শরীরে মেদ জমেছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়েছে। চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা মায়ের সাপোর্ট পেয়েছে।
এ দুটো ছেলের হিসাব কি আল্লাহর কাছে একরকম হবে? আপনার কি মনে হয়? আল্লাহ কি এদের কাছে সমান হিসাব চাইবেন? ওয়াল্লাহি! কক্ষনও নয়। জসীম আর আমার হিসাব একরকম হতে পারে না। আকরাম আর আপনার হিসাব একরকম হবে না।
জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত লাভ করেছি। তাই মাঝে মাঝে ভয় হয়..কিয়ামতের হিসাব না জানি কঠিন হয়ে যায়। তোমার দেয়া নিয়ামতের কথা স্বীকার করছি মাবুদ। তোমার নিয়ামতের যেন শোকর আদায় করতে পারি সে তাওফীক দিও মাবুদ। আমাদের হিসাবগুলো সহজ করে দিও হে মালিক।

No comments

Powered by Blogger.