মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আ.লীগে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ছে

চিত্রা নিউজ ডেস্ক:  বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় দল মনোনীত প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সড়ক-মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও অনশন কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দলের হাইকমান্ডের কঠোর হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করে কোনো কোনো আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকার ঘোষণাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। 


এদিকে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের মুখে অবশেষে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চেধুরীকে প্রার্থী তালিকায় ফেরানো হয়েছে। ফরিদপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চিঠি দেয়া হয়েছে দলের দুঃসময়ের এ কাণ্ডারিকে। এর আগে এ আসনটি মহাজোট শরিক জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়। 










সৈয়দা সাজেদা চেধুরী

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুর রহমান পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমদাদুল হক নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনিও পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এম রায়হান শাহের কাছ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এর আগে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) জামালপুর-৫ (সদর), কুড়িগ্রাম-২ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ), ময়মনসিংহ-৮, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্ণপুর), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এবং কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনসহ বিভিন্ন আসনে দল ও মহাজোট প্রার্থীদের বিরোধিতা করে ব্যাপক বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিল, সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একই কারণে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া), ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ), শেরপুর-১ (সদর), নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা), নরসিংদী-৩ (শিবপুর), নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব),কুমিল্লা-৪, মেহেরপুর-২ (গাংনী)।
দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সভায় ৭০ জন এমপি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল বলে আলোচনা হয়েছিল। ওই সভা থেকে শতাধিক এমপি এবার ‘লাল কার্ড’ পেতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছিলেন। তবে চূড়ান্ত মনোনয়নে যেসব এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হাইব্রিডদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, বহিরাগতদের লালন করা এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগ ছিল তাদের নাম তালিকায় দেখে হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, একটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১৩ জন করে মনোনয়ন তুলেছেন। এক আসনে মনোনয়ন পাবেন মাত্র একজন। সবাইকে তো খুশি করা যাবে না। তবে কিছু আসনে আমরা এখনো জরিপ করছি। যদি এমন যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায় তবে নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমাদান ও প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত তা পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দলের সিদ্ধান্ত কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজীবন বহিষ্কার করা হবে। তাকে আর দলে নেয়া হবে না।’

No comments

Powered by Blogger.