টিএসপি ও ইউরিয়া সারের অভাবে মোবারকগঞ্জ সুগার মিল এলাকায় আখ চাষ ব্যাহত

শাহ আলম কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি :
 ঝিনাইদহের  মোবারকগঞ্জ সুগার মিল এলাকায় টিএসপি ও ইউরিয়া সারের অভাবে এবার আখ চাষ ব্যাহত হবার আশংকা করছে মিল কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-১৯ আখ রোপন মৌসুমে ১০ হাজার ৫০০ একর আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে রোপন করা হয়েছে মাত্র ৬শ একর। আর ১ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি ও ইউরিয়া সারের বিপরীতে সুগারমিল  পেয়েছে মাত্র ৬৩ মেট্রিক জন আর অন্য মিল থেকে ৫০ মেট্রিকটন ধার করে  কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করতে পেরেছে। মিল কতৃপক্ষ বলছে  টিএসপি আর  ইউরিয়া সার   না পেলে কৃষকরা আখ রোপন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তবে মিলের একটি সুত্র বলছে মিলে টাকা না থাকায় সার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুগার মিল সুত্র থেকে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার মোবারকগঞ্জ সুগারমিলে ২০১৮-২০১৯ আখ মাড়াই মৌসুমে  কেডিটের আওতায় ৯  হাজার ৫শ একর জমিতে এবং নন কেডিটে ১ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে। এর আওতায় রয়েছে পায় ৫ হাজার আখ চাষী। ৬টি সাবজোনের আওতায় ৩৮টি আখ  ক্রয় সেন্টার রয়েছে এই সুগার মিলের।  অক্টোবর থেকে আখ রোপন মৌসুম শুরু হয়ে চলে মার্চ মাস পর্যন্ত।   এবার এই মৌসুমে মাত্র ৫শ একর জমিতে আখ রোপন করেছে কৃষকরা। তবে আখ রোপন করতে গেলে কৃষক মাঝে ঋনে  টিএসপি আর ইউরিয়া সার প্রদান করতে হয়। কিন্তু এবার আখ রোপনের আগেই সার সংকট দেখা দিয়েছে। ১ হাজার মেট্রিক  টনের বিপরীতে মাত্র ৬৩ মেট্রিকটন সার পাওয়া গেছে। কৃষকরা আখ রোপনে আগ্রহ হারাচ্ছে। কারন হিসেবে প্রধান  সংকট সার। মিল সুত্র থেকে আরো জানান যায়, প্রতি একরে সুগার মিল থেকে একজন চাষীকে  ১শ কেটি টিএসপি প্রদান করা হয়। আর এই সারের টাকা নেওয়া হয় আখ বিক্রির সময়। কৃষককে সার,বীজ,সেচসহ নানা সহযোগিতা করতে হয় । দীর্ঘমেয়াদী ফসল আখ চাষে অনেক কৃষক আগ্রহ দেখালেও সারের কারনে তা  করছে না। গত ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মৌসুমে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্র ছিল ১০ হাজার ৫শ একর। কিন্তু সর্বশেষ আখ রোপন করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬৫ একর জমিতে। মিল গেট এলাকার বেশ কয়েকজন চাষী জানান, তারা গত মৌসুমে ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবার তারা আখ লাগাতে উৎসাহ দেখিয়েছেন। আখ রোপনের আগেই মিল কর্তৃপক্ষ সার দিতে  পারছে না। যার কারনে তাদের জমিতে আখ রোপন বন্ধ রয়েছে। তারা বলেন, সঠিক সময়ে যদি মিল কর্তৃপক্ষ কৃষকদের মাঝে সার দিতে না পারে তাহলে কৃষকরা অন্য ফসল লাগিয়ে ফেলবেন।মোবারকগঞ্জ সুগারমিল আখ চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মন্টু জানান, গত ১ মাস ধরে আখ চাষীদের মাঝে সার সরবরাহ করতে পারছে না মিল কর্তৃপক্ষ। যার কারনে আখ চাষ ব্যাহত হচ্ছে।মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ব্যবস্থাপক (ইক্ষু) নইম সিদ্দিক জানান, আমরা সার সংকটের কারনে কৃষকদের আখ চাষে উব্ধুদ্ধ করতে পারছি না। গত ১ মাস ধরে ইউরিয়া ও টিএসপি সার সংকট রয়েছে। তিনি বলে মাত্র ৫শ  একর জমিতে আখ রোপন করা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে চিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টিএসপি আর ইউরিয়া সার সংগ্রহের জন্য চিটাগাং এ যোগাযোগ করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই  সার পাওয়া যাবে ।
উল্লেখ্য মোবারকগঞ্জ  সুগার মিলে প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী গত ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। মিলে টাকা নেই তার বেতন বন্ধ। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  কর্মচারীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন  চিনি বিক্রি না হলে টাকা দেওয়া সম্ভব না। একদিনে টাকার অভাবে শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে  না অপর দিকে টাকার অভাবে মিল কর্তৃপক্ষ সার ক্রয় করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগ্রই সুগারমিলটি মুখ থবড়ে পড়বে বলে ধারণা করছে আখচাষী ও শ্রমিককর্মচারীরা।

No comments

Powered by Blogger.