কালীগঞ্জে এক দরিদ্র কৃষকের ৪০ শতক জমির ধানগাছ কীটনাশক দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃত্তরা

এম শাহজাহান আলী সাজু॥
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে জামির হোসেন নামের এক কৃষকের ৪০ শতক জমির ধান কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃত্তরা। শনিবার কোনো এক সময় এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। রবিবার ক্ষেতে গিয়ে যা দেখতে পান ওই কৃষক। ঘটনাটি উপজেলার বারোইপাড়া গ্রামের মাঠে।
কৃষক জামির হোসেন জানান, স্বামী-স্ত্রী দু’জনই কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালান। পরের ক্ষেতে কাজ করে ঠিকমতো চলা যায় না। তাই দু’জনে সিদ্ধান্ত নেন নিজেরা কিছুটা চাষ করবেন। এরপর বারোইপাড়া গ্রামের মাঠে গ্রামেরই দুই ব্যক্তির নিকট থেকে দুই খন্ড জমি বর্গা নেন। যার ৪০ শতকে ধানের চাষ করেছেন। বাকি ২০ শতকে পান। এই ধানের চাষ করতে তার প্রায় ১৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা ছিল ২৬ মন ধান পাবেন, যা বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকা আয় হবে। কিন্তু তার সব ধানই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আর এক মন ধানও বাড়িতে আসবে না বলে কান্নাকন্ঠে জানান।
তার স্ত্রী কৃষাণী পারভীনা বেগম জানান, স্বামী জামির হোসেন হাপানী রোগে আক্রান্ত। ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। নিজেদের কোনো জায়গা জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কামলার কাজ করেন তিনি। মাঝে মধ্যে অসুস্থ স্বামীও তার সঙ্গে কাজ করেন। তিনি আরো জানান, তাদের থাকার মতো কোনো জায়গাও ছিল না। এই অবস্থায় তার বাবা গোয়ালখালী গ্রামের মৃত বাবর আলী পাশ^বর্তী বারোইপাড়া গ্রামে ৫ শতক জমি ক্রয় করে দেন। সেই জমিতে একটা টিনের চালা তৈরী করে তারা স্বামী-স্ত্রী বসবাস করেন। তাদের একমাত্র ছেলে সুমন হোসেনকে (১৮) একটি ব্যংক থেকে ঋণ নিয়ে ৮ মাস হয়েছে সৌদি পাঠিয়েছেন।
জামির হোসেন আরো বলেন, রবিবার সকালে তিনি মাঠে গিয়ে ক্ষেতের এই অবস্থা দেখতে পান। কে বা কারা ঘাস মরা ঔষধ স্প্রে করে তার ক্ষেতের সব ধানগাছ পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ধানের গাছে মোঁচা হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই ধান কাটা যেতো। ঠিক সেই সময় এভাবে অতিরিক্ত ঘাষ মারা ঔষধ স্প্রে করা হয়েছে। যে কারনে ধান গাছগুলো মারা যাচ্ছে। এই ঘটনায় তিনি স্থানিয় কৃষি বিভাগকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শাহীন আলম জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তিনি নিজে সরেজমিনে ক্ষেত দেখে ওই দম্পত্তিকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। এছাড়া উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, কৃষক দম্পতি পুড়ে যাওয়া ধান গাছ কৃষি অফিসে সোমবার সকালে নিয়ে আসেন্ বিষয়টি খুবই কষ্টকর। তিনি নিজেও ক্ষেত পরিদর্শনে যাবেন। পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্তা নেওয়া হবে বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.