মেহেরপুরের ঐতিহাসিক "আমঝুপি নীলকুঠি"র ইতিহাস সন্ধানে আমাদের একদিন

তরিকুল ইসলাম :
আমঝুপি নীলকুঠি মেহেরপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন৷আর আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থিদের পরিচালিত "উদ্ভাস ইন্ভেস্টিগেটর টিম" এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮মার্চ, ২০১৮ইং আমরা যাই মেহেরপুর জেলায়৷আমাদের নিয়মিত সদস্যের মধ্যে পাঁচজন আগের দিন কুষ্টিয়ায় অবস্থান করি৷পরেরদিন বৃহঃপতিবার সকাল আটটায় আমরা কুষ্টিয়া বাস টার্মিনাল থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী বাসের টিকিট কেটে বাসে চড়ে রওয়ানা দেই আমঝুপির পথে৷
কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গা হয়ে আমরা চুয়াডাঙ্গা শহরে পৌঁছালাম বেলা এগারটার দিকে৷ তারপর চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরগামী বাসে চড়ে রওয়ানা দিলাম আমঝুপির উদ্দেশ্যে এবং বেলা প্রায় বারটায় আমরা আমঝুপি বাজারে পৌঁছাই৷ সেখান থেকে একটি অটোরিকসা রিজার্ভ করে আমরা মহাসড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভিতরে সেই আকাঙ্খিত ঐতিহাসিক 'আমঝুপি নীলকুঠি' তে পৌঁছালাম৷ নীলকুঠির মূল স্থাপনায় যাওয়ার পথে রাস্তার দুপার্শ্বে সারি সারি আমগাছ চোখে পড়বে৷মূলত মেহেরপুর জেলার যেখানেই পা পড়বে সেখানেই দেখা মিলবে বিস্তৃত অসংখ্য আম্রকানন৷
আমঝুপি নীলকুঠি মেহেরপুর শহর থেকে মাত্র ৬কিলোমিটার আর চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ২০কিলোমিটার দূরে আমঝুপি নামক গ্রামে অবস্থিত৷ কুঠির পাশ দিয়ে দক্ষিণে দিকে চোখে পড়বে সরু একটি নদী যা কাজলা নদী নামে পরিচিত৷ গ্রীষ্মে পানির দেখা মিললেও শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়৷ স্থানীয়দের মতে, পানির সুবিধার জন্য কাজলা নদীর তীরে এই কুঠিটি নির্মাণ করে ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী৷ সম্ভবত ১৮০০এর দশকে এটি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকে নীলকুঠি হিসাবে ব্যবহৃত হত৷ ক্রমেই এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস হিসাবে ব্যবহার হতে থাকে৷
কথিত আছে যে, তৎকালীন মোঘল সেনাপতি এই পথ ধরে ময়মনসিংহ গিয়েছিলেন আর যাবার পথে এখানে বিশ্রামের জন্য অবস্থান করেন৷ নবাব আলিবদ্দী খাঁর স্মৃতি মিশে আছে এই কুঠির সাথে৷ এখানেই রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে মীরজাফর ও ষড়যন্ত্রকারীদের শেষ বৈঠক হয়েছিল৷ যার ফলে শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছিল তা নয় বরং বাঙালি জাতি হারিয়েছিল তাদের স্বাধীনতা৷
এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে পর্যটনকেন্দ্র করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালের ১৩ই মে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের সভায় " আমঝুপি অধিবেশন" এ এটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয় এবং তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ভূইয়া 'র তত্বাবধায়নে ১৯৭৯ সালে প্রায় ষোল লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঐতিহ্যটি সংরক্ষণের কাজ করা হয়৷
এই কুঠিটিতে দেখা মিলবে আম্রকানন, সংরক্ষিত ভবন, ধ্বংস স্তুপ, নদীতে নামার সিড়ি প্রভৃতি৷ পর্যটকগণ সারা বছরই কমবেশী এখানে আসেন , ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের দেখা মিলে সবচেয়ে বেশী৷ ঝিনাইদহ - চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়ক হয়ে ঝিনাইদহ থেকে ৫৫কিলোমিটার এবং কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা- মেহেরপুর হয়ে কুষ্টিয়া প্রায় ৮০কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান৷ ইতিহাসপ্রেমী দর্শনাথীগণ বাসযোগে যেতে পারেন এই ঐতিহাসিক "আমঝুপি নীলকুঠি" দেখতে আর উপভোগ করতে পারেন গ্রামীণ পরিবেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ৷সরকার নতুন করে উদ্যাগ নিলে এটিকে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব৷ তাতে সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসীও উপকৃত হবে আর ইতিহাস ঐতিহ্য থাকবে চির অমলিন৷

No comments

Powered by Blogger.