রোজার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও উপকারিতা



  তরিকুল ইসলাম :                 
রোজা বলতে ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভকে বুঝালেও ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মেও বিভিন্ন ধরনের উপোস থাকার ধর্মীয় রীতি-নীতির প্রচলন আছে৷ যেমন - অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানদের ক্যালরী রেস্ট্রিকটেড ফাস্টিং , যেখানে দৈনন্দিন গৃহীত খাবারের ৪০% কমিয়ে আনা হয়৷ আর অলটারনেটেড ডে ফাস্টিং এর ক্ষেত্রে একদিন পর পর ২৪ ঘন্টার জন্য পানি ব্যতীত সব ধরনের খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হয়৷গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য হিসেবে গৃহীত মোট ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে আনা হলে জীবনকাল বাড়ে৷তাছাড়া এটি শারীরিক স্থায়িত্ব বাড়ায়, বেশ কিছু জটিল অসুখের ফলে সৃষ্ট সমস্যা দূরীভূত করে৷ যেমন - রক্তনালীতে চর্বি জমে সৃষ্ট এথেরেস্লোরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ, কিডনী রোগ , নিউরোডিজেনারেটিড রোগ ইত্যাদি৷
রোজার বৈজ্ঞানিক সুফলসমূহঃ
১. বার্ধক্য রোধ করেঃ বার্ধক্য শরীর ও মন দুটিকেই ভারাক্রান্ত ও অসহায় করে তোলে ৷ রোজা রাখলে আয়ু বাড়ে , পাশাপাশি এটি বার্ধক্য সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোকে দূর করে৷
২. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিঃ পবিত্র মনে রোজা রাখলে দেহে ও মনে এক ধরণের ইতিবাচক মনোভাবের উদ্ভব ঘটে, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে৷গবেষণায় দেখা গেছে, দুইদিন রোজা রাখলে দেহে হরমোন বৃদ্ধির হার পাঁচগুন বেড়ে যায়৷ রোজা রাখার মাধ্যমে মস্তিষ্কে নতুন নতুন কোষের জন্ম হয় , ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়৷
৩. চর্বি কমাতে সহায়কঃ কোন কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়৷তেমনি অতিরিক্ত খাবার খেলে রোগব্যাধি বৃদ্ধির সম্ভাবনাই বেশী থাকে৷ কেননা , এতে দেহে প্রচুর জর্বি জমে , কখনও অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়৷ যা স্বাভাবিক জীবন যাপনে অস্বস্তি এনে দেয় ৷ কিন্তু রোজা রাখলে শরীরে জমে থাকা চর্বি শরীরের কাজে ব্যবহৃত হয় , ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় ৷
৪.স্ট্রেস কমায়ঃ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এর গবেষণায় দেখা গেছে , উপবাস করলে অর্থাৎ রোজা রাখলে স্ট্রেস কমিয়ে দেয় এবং সুস্থতা ও দীর্ঘজীবি করে তোলে৷
৫. রক্তচাপ কমায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ব্যায়ামের চাইতেও বেশী হার্ডবিট ও রক্তচাপ কমাতে সক্ষম৷
৬. ডায়াবেটিকস এর ঝুকি কমায়ঃ ডায়াবেটিকস রোগীদের ক্যালরি গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয় ৷রোজা রাখলে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন পড়ে না৷ তাই রোজা রাখলে ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি কম থাকে ৷
৭. হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধিঃ মানুষের শারীরিক মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে হরমোন বেশি প্রয়োজন হয় তা রোজা রাখলে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷
৮. নিয়মানুবর্তীতা ও শৃঙ্খলার সৃষ্টিঃ নিয়মিত খাবার গ্রহণের ফলে খাদ্য গ্রহণ নীতির কোন অনিয়ম হয় না , তাই এটি শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়৷
৯. ওজন কমানো সহজঃ রোজা রাখলে নিয়মানুবর্তীতার দরূণ খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে , ফলে ওজন কমে ৷ যাদের বডি ম্যাস ইনডেক্স আদর্শ নীতির উপরে অর্থাৎ যা ২৪ কিংবা তার বেশি তাদের জন্য ওজন কমানোর ক্ষেত্রে রোজা একটি উত্তম পন্থা হতে পারে৷
১০. ক্যান্সার এর ঝুকি কমঃ গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা রাখলে অসংখ্য জীবাণু ধবংস হয়৷ তন্মধ্যে ক্যান্সারসহ বহু রোগের জীবাণু রয়েছে৷ রোজার কারণে টিউমার, ক্যান্সার প্রতৃতির কোষ মারা যায়৷ ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কম৷
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, আমি ২০০৯ ইং (১২+) হতে নিয়মিত সব রোজা রাখার চেষ্টা করি৷কোন দুর্ঘটনা ব্যতীত রোজা সব রোজাই থাকার চেষ্টা করেছি৷ ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এটি রোগব্যাধি দূর করে৷ তাই অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করলেও এই মাসেই বেশি সুস্থ ও স্বস্তিবোধ করি৷ এছাড়া অন্যান্যদের তুলনায় রোগব্যাধিও আমার কম হয়৷চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে , রোজা রাখার ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ধবংস হয়ে যায়৷ তাই বর্তমানে দেখা যায়, অনেক গবেষক ও চিকিৎসাবিদগণ নিয়মিত রোজা রাখার চেষ্টা করেন৷
লেখক

মোঃ তরিকুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া -ঝিনাইদহ , বাংলাদেশ ৷

No comments

Powered by Blogger.