ডিনামাইট টু নোবেল পুরস্কার

তরিকুল ইসলাম, ইবিঃ আলফ্রেড নোবেল নামে ফলিত রসায়নবিদ হিসাবে যে বিজ্ঞানী নিজেকে আবিষ্কার করেন , তিনিই বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও স্বীকৃতি 'নোবেল পুরস্কার' এর স্রষ্টা ৷ যিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে বা উচ্চ শিক্ষা না নিয়েও নিজের চেষ্টায় জ্ঞানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে সুইডেনের আফসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন, তিনি বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ করে রসায়নবিদ কিংবা ফলিত রসায়নবিদদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের৷
বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, অস্ত্রনির্মাতা ও ডিনামাইট ব্যবসায়ী সুইডেনে ১৮৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং আমেরিকা ও রাশিয়াতে শিক্ষালাভ করেন৷ ১৮৯৬ সালে ১০ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷ ১৯০৩ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনেই নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়৷
ডিনামাইট আবিস্কারঃ
আলফ্রেড নোবেল গ্লিসারিনের সাথে নাইট্টিক এসিড মিশিয়ে প্রথমে নাইট্রোগ্লিসারিন তেরি করেন, যা বিস্ফোরক জাতীয় তেল এবং সামান্য আঘাতেই বিস্ফোরিত হয়৷ নাইট্রোগ্লিসারিন এর সাথে কিজেলগাড় জাতীয় এক ধরণের পদার্থ (টিএনটি) মিশিয়ে ডিনামাইট এর আবিষ্কার ঘটান৷ ডিনামাইটের রাসায়নিক সংকেত C6H2(NO2)3CH3.
ডিনামাইটের ব্যবহারঃ
ডিনামাইট কিভাবে কাজ করে তা জেনে রাখা ভাল৷ ডিনামাইট প্রধানত নাইট্রোগ্লিসারিন ও টি এন টি দিয়ে তৈরি একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রাসায়নিক বিস্ফোরক ৷ একটি ডিনামাইটের ক্ষমতা প্রায় দুই মিলিয়ন জুলের উপরে। ডিনামাইটকে সাধারনত তার দিয়ে দূর থেকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালের সাহায্য বিস্ফোরণ করানো হয়। যেমন কোন পাহাড় পর্বতের বিরাট আকারের পাথরকে ভাঙ্গার জন্য প্রথমে পাথরটিতে ড্রিল মেশিন দিয়ে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি করবে৷প্রতিটি ছিদ্রে একেকটি ডিনামাইট প্রবেশ করিয়ে সবগুলো ডিনামাইট সংযুক্ত করে বা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় ডিনামাইট থেকে উচ্চ তাপমাত্রার বিরাট আকারের গ্যাস দ্রুত গতিতে এক মুহুর্তে বের হয়ে আসে। এ থেকে যে পার্শ্বচাপের সৃষ্টি হয় তাতেই বিরাট আকারের পাথরটি ভেঙ্গে যায়। গঠনে কিছুটা পরিবর্তন এনে ডিনামাইট যুদ্ধে ল্যান্ড মাইন হিসেবেও ব্যবহার হয়। ডিনামাইট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পাহাড় ভাঙ্গা,টানেল তৈরি ও খনিতে। কারণ খুব সহজে ও কম খরচে ডিনামাইট দিয়ে এসব কাজ করা যায়। এছাড়া যুদ্ধের কাজে শত্রু পক্ষের ভবন, সেতু, রেললাইন উড়িয়ে দিতে ডিনামাইট ব্যবহার করা হয়৷
তাঁর উইল করে যাওয়া অর্থে পদার্থ ও রসায়নে স্টকহোমের বিজ্ঞান একাডেমীর তত্ত্বাবধায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়৷ এছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যারোলিন মেডিকেল ইনস্টিটিউড এর তত্ত্বাবধায়নে, সাহিত্যে সুইডিশ একাডেমীর তত্ত্বাবধায়নে এবং শান্তিতে নরওয়ের পার্লামেন্ট কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যের কমিটির তত্ত্বাবধায়নে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে৷ নোবেল বিজয়ীদের একটি মোটা অঙ্কের চেক, নোবেলের প্রতিকৃতি অংকিত একটি সোনার মেডেল এবং একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে৷
মহান এই বিজ্ঞানী নিজের আত্মজীবনীতে তিনি নিজেকে এভাবেই উপস্থাপন করেছেনঃ
১. আলফ্রেড নোবেলঃ কোন ডাক্তারের উচিত ছিল জন্ম মুহূর্তে তার শোচনীয় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানো৷
২. প্রধান গুণাবলীঃ নিজে কখনো কারো পক্ষে বোঝা স্বরূপ ছিলেন না৷ তিনি রীতিমত নখ পরিষ্কার রাখতেন৷
৩. প্রধান দোষাবলীঃ তাঁর কোন পরিবার ছিল না ৷ তিনি ছিলেন বদমেজাজি ও পেটরোগা৷
৪. একমাত্র ইচ্ছাঃ জীবন্ত সমাধিস্থ হতে চান নি৷
৫. সবচেয়ে বড় পাপঃ তিনি অর্থ লোলুপ ছিলেন না৷
৬. স্মরণীয় ঘটনাঃ কিছুই না ( ঘটনার অভাব নেই) ৷
মরেও অমর এই ব্যক্তিটিকে বিশ্বের মানুষ চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্বরণ রাখবে৷ থাকবে গুণীজনদের অন্তরে প্রেরণার বাতি হয়ে জ্বলবে চিরকাল৷
(সূত্রঃ ১১১ বিজ্ঞানীর জীবনী ও ইউকিপিডিয়া৷)
লেখক - তরিকুল ইসলাম মাসুম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়৷

No comments

Powered by Blogger.