৬শত শিক্ষার্থীকে ঝুঁকিতে রেখে শিক্ষকরাও আছেন ঝুঁকিতে

স্টাফ রিপোর্টার :
মাথায় চিন্তা, ভবনটি কখন ভেঙ্গে পড়ে। এই বুঝি ভবনের ছাদ থেকে প্লস্টার খোশে পড়লো। নানা স্থানে ফাটল ধরেছে ভবনটির। প্রকৌশল বিভাগ থেকেও ভবন ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই সহশ্রাধিক ছাত্রীর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। ছাত্রীরাও আছেন আতংকে। কখন কি ঘটে যায়। এই অবস্থা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের।
শিক্ষকরা জানান, তাদের প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১ শত। সেই তুলনায় শ্রেণী কক্ষের সংখ্যা কম। যে কারনে ৪ বছল পূর্বে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা হলেও ঝুকিপূর্ণ অবস্থাতেই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে এতোগুলো শিক্ষার্থীকে ঝুকির মধ্যে রেখে তারাও আছেন ঝুকিতে। কিছু একটা ঘটে গেলে অভিভাবকদের কি কৈফিয়ত দেবেন। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্ট হয়ে পড়ছে।

১৯৫৩ সালে কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য স্থানিয় কিছু শিক্ষানুরাগী জমি দান করে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১০৫১ জন ছাত্রী পড়ালেখা করছে। আর ৩৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারি আছেন। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ২.০৯ একর জমির মধ্যে ৪৯ শতকে বিদ্যালয় ভবন ও খেলার মাঠ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়টি টিনের ঘর থাকলেও ১৯৬০ এর দশকে সেখানে একটি পাঁকা ঘর নির্মান করা হয়। দৈঘ্য ১৪০ ফুট আর প্রস্থ ২৯ ফুটের এই ভবনটি বিদ্যালয়ের উত্তরে অবস্থিত। এই ভবনে ১২ টি কক্ষ রয়েছে, যার মধ্যে ৮ টি শ্রেণী কক্ষ, তিনটি ল্যাব ও ১ টি অফিস কক্ষ। যে ভবনে নিয়মিত ৬ শত শিক্ষার্থী পড়ালেকা করছে। এছাড়া ল্যাব ও পাঠাগার ব্যবহার করছে মেয়েরা। এই ভবনটিই বর্তমানে পরিত্যাক্ত। এছাড়া দক্ষিনে আরেকটি দ্বিতল ভবন রয়েছে, যার মোট কক্ষ ৬ টা, এর মধ্যে বিজ্ঞানাগার ১ টি ও ল্যাব ১ টি। এই ভবনে প্রায় ৫ শত শিক্ষার্থী ক্লাস করেন।
বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসাহক আলী জানান, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী এই বিদ্যালয়ে আসেন। ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বিদ্যালয়টি পরীক্ষা করে রির্পোট দেন এটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহার অনুপযোগি। এমনকি ওই দপ্তর থেকে তাদের চিঠি দিয়ে ভবনটি ব্যবহার না করার জন্য জানিয়ে দেওয়া হয়। ইসাহক আলী আরো জানান, এরপর একদিনের এক মৃদ ভুমিকম্পে ভবনটি আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। পলেস্তারা খুলে খুলে পড়তে তাকে। এই অবস্থায় ২০১৭ সালে ১৩ নভেম্বর কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুমিকম্পে ভবনটির ক্ষতির কারন যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আজো নতুন ভবন নির্মানের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে তারা সেই ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবনেই ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষক ইসাহক আলী জানান, বাচ্চারা যখন ক্লাসে ক্লাস করে তখন তারা আতংকে সময় পার করেন। সারাক্ষন তাদের ভাবনা কখন ভবনটি ধসে পড়ে। তিনি জানান, মাঝে মধ্যেই ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খুলে পড়ে। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ছাদ থেকে পলেস্তারা খুলে মেয়েদের মাথায় পড়ে। এতে ৫ টি মেয়ে মারাত্বক আহত হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে দ্রুত একটি ভবন নির্মান জরুরী।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তারা যখন ক্লাসে থাকেন তখন চোখ থাকে মাথার উপর। কখন ছাদ থেকে কিছু খুলে পড়ে। তাছাড়া ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ এটা শোনার পর তাদের মধ্যে আতংক কাজ করে। তাদের এই আতংকের কথা শিক্ষকদের বললে তারা নতুন ভবনের জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানান। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও ভবন না হওয়ায় মেয়েদের মধ্যে আতংক রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রতন মিয়া জানান, উচ্চ পর্যায় থেকে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন প্রয়োজন এগুলো তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা এগুলো তালিকা করে পাঠিয়ে দেন। নতুন ভবন বরাদ্ধের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্থানিয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চেষ্টা করে থাকেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে বলে তিনি শুনেছেন।


No comments

Powered by Blogger.