দেড় বছরেও শেষ হয়নি খালিশপুর-যাদবপুর ভায়া জিন্নানগর সড়ক উন্নয়ন কাজ, মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই

স্টাফ রিপোর্টার - দ্বিতীয়দফা বৃদ্ধি করা মেয়াদেও ঝিনাইদহের মহেশপুরে ৭৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ না হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। চলমান ওই সড়কের সংষ্কার কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। স্থানিয়রা বলছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুবই ধীরগতিতে কাজ করছেন, আবার মাঝে মধ্যেই কাজ বন্ধ রাখছেন। ফলে ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। 
বর্তমানে মহেশপুরের খালিশপুর থেকে যাদবপুর ভায়া জিন্নানগর সড়কটি চলাচলের কোনো অবস্থা নেই। অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কয়েকটি জায়গা এতোটা খারাপ যে, সেখান দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা।

অবশ্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছেন, সড়কটি সংষ্কারের জন্য যে সময় প্রাক্কলন তৈরী করা হয়, বর্তমানে তার চেয়েও খারাপ অবস্থা। যে কারনে তারা পূর্বের বাজেটে কাজ করতে পারবেন না বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবি এবং সরেজমিনে যাচাই করে অতিরিক্ত বরাদ্ধের জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা অনুমোদন না হওয়ায় পুনরায় টেন্ডার করার জন্য পক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আশা করছেন, দ্রতই বাকি কাজ শেষ করতে পারবেন।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগে খোজ নিয়ে জানাগেছে, মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজার থেকে মহেশপুর-দত্তনগর-জিন্নানগর হয়ে যাদবপুর সড়কচি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরই প্রাক্কলন তৈরী করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ওই সড়কটি মেরামতের জন্য একনেকে ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এরপর তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে তিনটি প্যাকেজের কাজ পান যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টার প্রাইজ। যার মধ্যে রয়েছে কালিশপুর থেকে সেজিয়া, সেজিয়া থেকে ভোলাডাঙ্গা ও ভোলাডাঙ্গা থেকে যাদবপর সড়ক। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ কাজটি শুরু হয়ে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর শেষ করার কথা। ঠিকাদার সেভাবেই কাজ শুরু করেন, কিন্তু আজো শেষ করতে পারেননি। প্রথম দফায় কিচুটা কাজ করে বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবারো শুরু করলেও দত্তনগর থেকে জিন্নানগর আনুমানিক ১২ কিলোমিটার ও সামন্তা থেকে মমিনতলা ৫ কিলোমিটার কাজ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই স্থানের কাজে হাত দিচ্ছে না।
ওই কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, যে দুইটি স্থান তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন সেখানে শুধুমাত্র ভেঙ্গেচুরে যাওয়া জায়গা মেরামত করে কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু সড়কটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে ওই স্থানে কোনো ভাবেই গর্ত ভরাট করে কার্পেটিং করলে থাকবে না। স্থানটি সম্পূর্ণ খুড়ে নতুন করে করতে হবে। কাজ করে সেটার স্থায়িত্ব না হলে একদিকে যেমন সরকারের টাকার অপচয় হবে, অন্যদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের বদনাম হবে। যে কারনে তারা ওই দুইটি স্থানে কাজ করবেন না বলে সওজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি সওজ এর কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে তারাও নতুন করে করার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু বিভাগীয় কিছু সমস্যা থাকায় বিষয়টি বিলম্ব হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যে অতিরিক্ত কাজ এবং বাজেট অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিলেন তা অনুমোদন মেলেনি। এখন নতুন করে টেন্ডার করার প্রত্রিয়া চলছে বলে তারা জেনেছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেকা যায় দত্তনগর থেকে জিন্নানগর ও সামন্তা থেকে মমিনতলা পর্যন্ত সড়কে বর্তমানে চলাচলের কোনো উপায় নেই। সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে ২/১ টি যানবাহন গেলেও প্রায়ই গর্তে আটকে থাকছে। স্থানিয় সামন্তা বাজারের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, একটু বর্ষা হলেই তারা এলাকা থেকে বের হতে পারছেন না। বিশেষ করে সামন্তা থেকে মমিনতলা পর্যন্ত এতোটাই খারাপ যে ওই ৫ কিলোমিটার কোনো ভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে না। জিন্নানগর এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, মহেশপুর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ এই রাস্তার কারনে বর্তমানে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তারা মাঠে উৎপাদিত কৃষি পন্যও বাজারে নিতে পারছে না। দ্রুত এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।
বিষযটি নিয়ে ওই সড়ক সংষ্কার কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দার রহমান জানান, ওই সড়কের সংষ্কার কাজের প্রাক্কলন তৈরীর সময়ের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা অনেক পার্থক্য। যে কারনে ঠিকাদার কাজটি করছেন না। সওজের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও এসে দেখে গেছেন। তারাও নতুন করে প্রাক্কলন তৈরীর মাধ্যমে কাজটি করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এখন সেই পত্রিয়া চলছে, আর এই জন্য কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছেন দ্রুত সব পক্রিয়া শেষ করে সড়ক মেরামতের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.