মহিলা সমিতির সদস্যদের তৎপরতায় সরকারি বাওড়ের জমি সরকার ফেরত পেলেন, এখন প্রয়োজন দখল বুঝে নেওয়া

স্টাফ রিপোর্টার-
নাছিমা খাতুন, শেফালী খাতুন, সারেজা বেগম, এরা সবাই মহিলা সমিতির সদস্য। অসচ্ছল পরিবারে স্বল্প উপার্যনকারী স্বামীদের পাশাপাশি নিজেরা আয়ের পথ করতে গঠন করেন এই সমিতি। বাড়ির পাশের সরকারি বাওড় বন্দোবস্ত নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। সফলতাও আসতে শুরু করে পরিবারগুলোর।
ঠিক সেই সময় সরকারি বাওড়টির কিছু জায়গা দখল করেন স্থানিয় এক প্রভাবশালী শিবেন্দ্রনাথ হালদার ওরফে শিবেন হালদার। তিনি ব্যক্তি নামে সরকারি জমি রেকর্ড করিয়ে এই দখল করেছেন। যার বিরুদ্ধে সরকারের হয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন বিত্তহীন ওই মহিলারা। ইতিমধ্যে ব্যক্তি নামে রেকর্ড করা জমি আবার সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়েছে, কিন্তু দখলদার এখনও জমি ছাড়েনি। শুধু তাই নয়, দখলদার একই বাওড়ে আরেকটি সমিতির সদস্য হয়ে সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। ঘটনাটি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নস্তি বাওড়ের।
উপজেলার পদ্মরাজপুর গ্রামের মোঃ নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মোছাঃ নাছিমা খাতুন জানান, তাদের গ্রামটির বেশির ভাগ বাসিন্দা হতদরিদ্র। তাদের স্বামীরা যা আয় করেন তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। নিজেদের মাঠে চাষযোগ্য জমি আছে নামমাত্র। কিন্তু তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে আছে সরকারি এক বাওড়, যার নাম নস্তি বাওড়। এটি নস্তি মৌজায় ৬৯.১৫ একর ও উজ্জলপুর মৌজায় ৯৩.৭৫ একর জমির উপর অবস্থিত। ১৬২.৯০ একর জলাকার এই বাওড়টি ইতিপূর্বে পড়ে থাকতো। ১৯৮৮ সালে সরকার এটি নস্তি গ্রামের একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে প্রথম ইজারা দেন। ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে স্থানিয় নাটিমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাওড়ের জায়গার উপর দিয়ে একটি মাটির রাস্তা তৈরী করেন। পদ্মরাজপুর থেকে উজ্জলপুর হয়ে নস্তি যাওয়ার জন্য তৈরী হয় এই রাস্তা।
নাছিমা খাতুন আরো জানান, রাস্তাটি তৈরীর কারনে বাওড়ের পশ্চিম পাশে উজ্জলপুর মৌজার ৯৩.৭৫ একর জমিটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। রাস্তার পশ্চিমে থাকা ২৩.৮৫ একর জলাকার ক্রমেই শুকিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে সেখানে আর পানি ছিল না। তিনি জানান, এরপর ১৯৯২ সালে বাওড়টি জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে মৎস্য বিভাগ শর্ত সাপেক্ষে বাওড়টি গ্রহন করেন। আর ১৯৯৫-৯৬ সালে ইফাদ প্রকল্পের আওতায় বাওড়টির উজ্জলপুর মৌজার শুকিয়ে যাওয়া সেই ২৩.৮৫ একর জমিতে ১৩ টি পুকুর কাটা হয়। পুকুরগুলি তাদের মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। তারা বিত্তহীন মহিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি গঠন করে এই বাওড়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। ২২ জন সদস্য তারা মাছ চাষ করেন।
সমিতির সভাপতি নাছিমা খাতুন আরো জানান, উজ্জলপুর মৌজার ২৩.৮৫ একর জমির মধ্যে ৬.৫০ একর জমিতে থাকা তিনটি পুকুর স্থানিয় নস্তি গ্রামের শিবেন হালদার নামের এক প্রভাবশালী দখল করে নেন। তারা জানতে চাইলে শিবেন্দ্রনাথ হালদার তাদের জানান, এই জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। এই জমির মালিক তারাই। এক পর্যায়ে জোর করে সেখানে মাছ চাষ শুরু করেন। তিনি জানান, সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন আর সরকারি সম্পদ দখলদার দখল করবেন এটা তারা সমিতির সদস্যরা চাননি। জমি সরকারের ঘরে ফেরত যাওয়ার জন্য শুরু করেন আইনী পক্রিয়া। বিভিন্ন অফিসে ধর্ণা দেন, সরকারি কর্মকর্তারা আইনগত পক্রিয়া সম্পন্ন করেন। অবশেষে দখলদারের রেকর্ড বাতিল করে সরকার বাওড়ের সব জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করেন। কিন্তু আজো ওই দখলদার তার দখলে থাকা সরকারি জমি ছাড়েনি।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেফালী খাতুন জানান, মাঝে দখলদার ওই জমিতে পুকুর কাটার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের বাঁধার কারনে পারেনি। এরপর স্যালো মেশিন বসিয়ে পানি দিতে গিয়েছিলেন, তারা সেটাও করতে দেননি। তবে দখলদার হুমকী দিচ্ছেন যে কোনো সময় জমিতে তিনি মাছ ছাড়বেন।
এ বিষয়ে মহিলা সমিতির সদস্যদের পক্ষে সরকারি অফিসগুলোতে সারাক্ষন যিনি ছুটাছুটি করেছেন তাদের একজন রেজাউল করিম জানান, সরকারের জমি সরকারের ঘরে ফেরত নিয়ে আসতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। দখলদার ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে দখল রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তবে এটা করতে গিয়ে তারা আর্থিক ভাবে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এখন প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে জায়গাটি দখল নেওয়া।
এ বিষয়ে নাটিমা ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ^াস জানান, বাওড়ের জমির কিছু অংশ ভুল করে ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছিল। পরে সেটা সংশোধন হয়েছে। এটা বর্তমানে সরকারের ১ নম্বর খাতিয়ানভুক্ত। তিনি বলেন, এই জায়গা এখন আর কোনো ব্যক্তি তার নিজের জমি বলে দাবি করতে পারবে না। সকরারের ঘরে দখল বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলেন এটা সরকারের বাওড়ের দখলেই আছে।
দখলদার শিবেন্দ্রনাথ হালদার অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি আইনগত ভাবেই এই জমির মালিক। সরকার তার সঙ্গে মামলা করে হেরে গেছেন। জমিও তার দখলে আছে। তিনি দ্রুতই সেকানে পুকুর কাটবেন বলে জানান। এছাড়া সরকারি খাস খতিয়ানে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন এটাও সংশোধন হয়ে যাবে।



No comments

Powered by Blogger.