বয়োবৃদ্ধ দম্পত্তির উপর হুমকী অব্যহত, নিরাপত্তার অভাবে লুকিয়ে চলছেন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঘরের মধ্যে গুমরে কাঁদছেন বৃদ্ধ নির্মল কুমার বিশ^াস (৮৫) আর তার স্ত্রী প্রীতি রাণী বিশ^াস (৭৫)। বাড়ির বাইরে বের হলেই জীবন হারানোর আশংকা। সারাক্ষন বাড়িতে শুয়ে-বসেই সময় কাটছে তাদের। সেখানেও কম আতংকে নেই এই দম্পত্তি। আশংকা করছেন কেউ এসে আবারো বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে না যায়। এই অবস্থা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পানামী গ্রামের অসহায় নির্মল-প্রীতি দম্পত্তির।
তাদের ছোট ছেলে বাদল কুমার বিশ^াস তিন মাস পূর্বে খুন হবার পর অজ্ঞাত আসামীদের নামে মামলা করেন নির্মল কুমার। পুলিশ এই মামলায় ৭ জনকে প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। সেই মামলা মিটিয়ে নিতে আসামীরা পরিবারটির উপর চাপ দিচ্ছেন। আর গ্রামের সামাজিকতায় আরেকটি পক্ষ তাকে দিয়ে জোর করে আদালতে নারাজি দাখিলের চেষ্টা করছেন। এই পক্ষ চাচ্ছেন মামলায় আরো কিছু মানুষের নাম অন্তভুক্ত করাতে। ইতিমধ্যে একদফা বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নেবার চেষ্টা করা হয়েছে।
নির্মল কুমার বিশ^াস ও প্রীতি রাণী বিশ^াস ছাড়া পানামী গ্রামে কেউ থাকেন না। নির্মল কুমার বিশ^াস জানান, তার দুই ছেলে নিহার রঞ্জন বিশ^াস ও সত্যরঞ্জন বিশ^াস অনেক পূর্বেই ভারতে চলে গেছেন। আরেক মেয়ে সঙ্করী বিশ^াসের ভারতে বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে বাদল বিশ^াস আর তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ছিল তাদের সংসার। বাদল বিশ^াসের নাবালক যমজ দুই পুত্র জয় (৯) ও বিজয় (৯) কে রেখে আনুমানিক ৭ মাস হলো তাদের মা রীতা রাণী বিশ^াস মারা গেছেন। ঠাকুরদা-দিদা বাদলের যমজ দুই সন্তান জয় (৯), বিজয় (৯) কে বড় করে তুলছিলেন। বাদল পাশ^বর্তী গোয়ালপাড়া বাজারে অশোক অধিকারীর মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন।
নির্মল কুমার বিশ^াস আরো জানান, গত ১৭ জুলাই রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে তারা বাড়ির সবাই খাওয়া সেরে ঘরে ঘুমাতে যান। ওই রাতেই আনুমানিক ৩ টার দিকে তার পুত্র বাদল কুমার (৩৫) বাথরুমে যাবার প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হন। পরদিন সকাল ৯ টার দিকে গ্রামের লোকজন খবর দেন বাদল গ্রামের জনৈক ফজলুর রহমানের কলার ক্ষেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। তাৎক্ষনিক ভাবে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। এ সময় তার পুত্র তাদের জানান, বাথরুমে যাবার জন্য ঘর থেকৈ বের হলে ১০ থেকে ১২ জন তাকে কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে নিয়ে যায়। তারা ব্লেড দিয়ে অন্ডকোষ কেটে ফেলে রেখে যায়। নির্মল কুমার জানান, ঝিনাইদহ হাসপাতালে ছেলের অবস্থা খারাপ হলে ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে ৩০ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
নির্মল কুমার জানান, ঘটনার পর ১৮ জুলাই তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তিনি কাউকে আসামী করেননি, অজ্ঞাত আসামী করে এই মামলা দেন। ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই শিকদার মনিরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি দুইজন আাসমী আটক করেন। যারা পরবর্তীতে জবানবন্দিতে ঘটনা স্বীকার করেন। প্রকাশ করেন তাদের সঙ্গে আরো যারা ছিল। পুলিশ ৭ জনকে প্রাথমিক অভিযুক্ত করে ২২ আগষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এরা হলেন দিনু, বিপ্লব, তপন, মজনু, সুবোধ, আলম ও সাগর মোল্লা। এই ঘটনা ঘটানোর কারন হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদলকে ভয় দেখানোর জন্য এটা করা। এই ভয় দেখালে তারা ভারতে চলে যাব, এরপর তাদের জমি দখল করা যাবে।
নির্মল কুমার জানান, এই অভিযোগপত্র দেওয়ার পর থেকে তার উপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। পুলিশ যাদের আসামী করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তারা একের পর এক চাপ দিচ্ছেন মামলা মিটিয়ে নিতে। নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। আসামীরা তাদের পাড়ার হওয়ায় শত্রতা বেড়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর থেকে তাদের ইউনিয়নের সামাজিক একটি পক্ষ একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে চলেছেন। আদালতে নারাজি দেওয়ার জন এই স্বাক্ষর নিতে চান তারা। এ জন্য তাকে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারুকুজ্জামান ওরফে ফরিদ বাড়ি থেকে প্রাইভেট গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান। জোর করে স্বাক্ষর নিতে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ওই পক্ষ। নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে, কিন্তু তিনি স্বাক্ষর দেননি। এই স্বাক্ষর নিতে এখনও চাপ দেওয়া হচ্ছে। স্বাক্ষর না দিলে খারাপ হবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আসামীদের মামলা মিটিয়ে নেওয়ার চাপ ও নারাজি দেওয়ার চেষ্টায় স্বাক্ষর নেওয়ার হুমকীতে তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে খন্দকার ফারুকুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে যাওয়া যায়নি, তিনি ভারতে আছে বলে স্থানিয়রা জানিয়েছেন। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন জানান, বিষয়টি তারা অবগত এবং সেভাবে দেখা হচ্ছে বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.