ঝিনাইদহে ব্যবসায়ী মিজানুর হত্যাকে পুজি করে স্ত্রী-ভাইয়ের অর্থবাণিজ্য, বাড়ি-ঘর ছাড়া করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহে ব্যবসায়ী মিজানুর হত্যাকে পুজি করে স্ত্রী-ভাইয়ের অর্থবাণিজ্য বাড়ি-ঘর ছাড়া ও মিথ্যা আসামী করার প্রতিবাদে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগী ঝিনাইদহ পৌর এলাকার হামদহ খোন্দকার পাড়ার সাজেদুল আলমের স্ত্রী নাজমা সাজেদ ও শৈলকুপার দিঘলগ্রামের জরিনা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ঝিনাইদহে সদর উপজেলার মিজানুর রহমান (৪০) নামের এক ব্যক্তি ২০১৮ সালে ১০ আগস্ট রাতে বাস টার্মিনালের ফিরোজ ফার্মেসী নামক ওষুধের দোকানে খুন হয়। এই খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহতের স্ত্রী রেসমা ও ভাই জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে রমরমা অর্থবানিজ্য, বাড়ি-ঘর ছাড়া ও মিথ্যা আসামী করাসহ প্রতারনার অভিযোগ করা হয়েছে। সকালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন দইু গৃহবধু নাজমা সাজেদ ও জরিনা খাতুন। অভিযোগে বলা হয় রেশমা ও জাহাঙ্গীর আরাপপুর মাষ্টার পাড়া হক কলোনী এবং দীঘলগ্রামের বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাজমা সাজেদ ও জরিনা খাতুন দাবি করে বলেন, মৃত মিজানুর রহমানের খুনের এজাহারভূক্ত আাসামী হচ্ছে ভুটিয়ারগাতি আব্দুর রশীদ এর ছেলে আমিরুল ইসলাম তার নিজের স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দীতে সে নিজেই খুনের কথা স্বীকার করেছে এবং জেল হাজতে আছে। এই মামলায় ঝিনাইদহ সদর থানা ও গোয়েন্দা শাখার সি.আই.ডি থেকে পৃথকভাবে দুটি ফাইনাল চার্জশীটও হয়েছে।
মিজানুর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় তার সাথে আমার স্বামী সাজেদল আলম এর ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল এবং আমাদের সাথে তার পরিবারিক সু-সম্পর্ক বজায় ছিল। এই সুম্পর্কের কারনে এই মিজানুর রহমান আমার স্বামী সাজেদুল আলমের নিকট থেকে গত ১২/০৭/২০১৭ ইং তারিখে ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, লিমিটেড, মোহাম্মদপুর শাখা ঢাকার ব্যাংক একাউন্ট সঞ্চয়ী হিসাব নং-১২২০০০০৩২৮৭, চেক নং- ৮৯৫১৫৭২, টাকা ১৩,০০,০০০/- (তের লক্ষ) টাকার চেক বাসা থেকে নিয়ে আসেন। মিজানুর রহমান এই চেকটি এনে ঝিনাইদহের ব্যাংকের শাখা থেকে এই ১৩,০০,০০০/- (তের লক্ষ) টাকা উত্তোলন করেন। যাহার ব্যাংক ডকুমেন্ট স্টেটমেন্ট আছে। আমার বড়ভাই আব্দুর রশীদ পরবতীর্তে মিজানুর রহমানের নিকট থেকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রজেক্টের কাজের জন্য নেন। আমার স্বামী সাজেদুল আলম একটি মামলায় আটক হওয়ার কারণে কারনে দু-দফায় মিজানুরের কাছ খেকে ৫ লক্ষ ও ৫লক্ষ ৫০ হাজার করে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋন নেন। এই টাকা গ্রান্টি হিসাবে মিজানুর আমার ও আমার ছাট ভাই তোফায়েল হোসেনের স্বাক্ষরিত দুটি ফাঁকা চেক রেখে দেয়। এরই কয়েক মাস পর এই মিজানুর রহমান খুন হন। মিজানুর খুন হওয়ার কিছ দিন পর মৃত মিজানুর রহমান এর বড় ভাই আনোয়ার হোসেন, মেঝো ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন এবং চাচা মাহাতাবসহ আরো অন্যান্য ৭/৮ জন আমার কাছে সেই টাকা ফেরত চায়। আমি এই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে এক যাস সময় চায়। পরবর্তীতে মৃত মিজানুর রহমানের মেঝ ভাই জাহাঙ্গীর আমাকে টাকা পরিশোধ করার জন্য তাগিদ দিতে থাকে । পরবর্তীতে আমার মেয়ে নুজহাত জারিন এবং নাসিমা সিদ্দিকী বুলবুলিকে সাথে নিয়ে আমি মৃত মিজানুর এর বাসায় যায়। ঐ সময় বাসায় মিজানুরের শ্বশুর উপস্থিত ছিলেন। আমরা ফাঁকা চেকে টাকার অংক লিখতে চাইলে রেশমা রাজি হয়না । পরে আমি সাথে করে ১০০/- (একশত) টাকার একটি সাদা ষ্ট্যাম্প যার নং- ক ন- ৯১১৪০২৩ লেখায় যে, আমি মিজানুরের নিকট থেকে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়েছি, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের একটি ফাঁকা চেকের বিনিময়ে। যেখানে ষ্ট্যাম্পে আমারও মৃত মিজানুরের স্ত্রী রেসমার স্বাক্ষর আছে। মিজানুরের শ্বশুর ষ্ট্যাম্পটি ফটোকপি করে আনে এবং ফটোকপি ষ্ট্যাম্পটি আমাকে দেয়। ঐ দিন মিজানুরের স্ত্রী ও শ্বশুরের সাথে আমাদের যে কথা হয়েছিল আমার মোবাইল ফোনে তার কল রেকটিং আছে। এর সমস্যার সুরাহা কেউ দিতে না পারায় পরে আমি পর্যায়ক্রমে আমার আত্মীয়দের মাধ্যমে মৃত মিজানুর রহমানের ভাই জাহঙ্গীর নিকট নগদ ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা দিই।
পরে আমার স্বামী সাজেদুল আলমসহ পরিবারে সদস্যরা মৃত মিজানুরের ভাগ্নে আওয়াল (জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক) ভাই জাহাঙ্গীর ও তাদের আটোবির ফার্নিচারের শো-রুমে বসি। এর পর আমার ম্বামী মৃত মিজানুরের ভাইদের বলেন যে, এই দেখেন মিজানুর আমার কাছ থেকে ১৩,০০,০০০/- (তের লক্ষ) টাকার চেক নিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। যাহার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেন। এই ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর সাথে তারা উত্তেজিত হয়ে আওয়াল ও জাহাঙ্গীর আমার স্বামী সাজেদুল আলমের শাটের কলার ধরে টানাটানি করেন ও অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করেন। বলেন যে, আমরা এই ব্যাংক স্টেটমেটন্ট মানিনা। আমাদেরকে মৃত মিজানুরের ডাইরীতে লেখা পাওয়া ১২,০০,০০০/- (বার লক্ষ) টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে আমিও তাদের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করি। আমার এই মামলার উকিল নোর্টিশ পাওয়ার পর আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মৃত মিজানরের ভাগ্নে আওয়াল (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক), ভাই জাহাঙ্গীর আমার নামেও একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। পরবর্তীতে এই ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। পরবর্র্তীতে বাদী পক্ষের লোকজনেরা তাদের যোগ সাজসে পি.বি.আই (চ.ইও) তে নারাজী পিটিশন দিয়ে নতুন করে তাদের ইচ্ছামত লোকদের নাম ঢুকিয়ে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং জাহাঙ্গীর ও রেসমা তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা না আমাদেরকেও নতুন করে মামলায় আসামী করবে বলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়াল এর মা রুজিয়া বেগম আমাদের গ্রামের বাড়ী দীঘল গ্রাম গিয়ে আমাদের গাছের ফলমূল পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে যে তোরা সবাই বাড়ী খালি করে দে। এই বাড়ী আমি দখল নিব। এটা আমাদের বাড়ী। এছাড়া মাঠের জমাজমিও চাষ করতে দিচ্ছে না। অন্য দিকে গ্রামে থাকাবস্থায় মেঝ ভাই আঃ বারীকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে গ্রাম ছাড়া করেছে এবং বলছে যে, আজ গ্রাম ছাড়া করলাম, কাল তোদের শহরের বাড়ী দখল করে শহর ছাড়া করবো এবং খুনের মামলায় পিবিআই (চ.ই.ও) দিয়ে পুনঃরায় তদন্ত করে এই মাডার কেচে তোদের নাম অর্ন্তভূক্ত করব বলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
অন্যদিকে পৃথক লিখিত অভিযোগে শৈলকুপা উপজেলার দিঘলগ্রামের মোছাঃ জরিনা খাতুন দাবি করে বলেন, দীর্ঘল গ্রাম শৈলকুপা মৃত মনোয়ারা হোসেনের ছেলে মৃত মিজানুর রহমান সম্পর্কের আমাদের চাচা মৃত মিজানুর বেচে থাকা কালীণ সে সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। মিজানুর খুনের পর এই খুনের আসামী ফিরোজা ফার্মেসীর মালিক মোঃ আমিরুল ইসলাম এই খুনের সাথে জড়িত। বর্তমানে সে জেলে আটক। মৃত মিজানুরের ভাই জাহাঙ্গীর আমার স্বামী জামাল হোসেন এবং আমার দেবর কাসেমকে মিথ্যা মামলায় পি.বি.আই ধরে নিয়ে গেছে। তাদের প্রচন্ড মার-ধর করে ক্রসের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়েছে। পি.বি.আই অফিসের ভিতরে গিয়ে জাহাঙ্গীর তাকে প্রচন্ড মারধর করে মিজানুরের খুনে জড়িত থাকার কথা জোর পূর্বক স্বীকার করিয়েছে। মৃত মিজানুরের হত্যা করার জন্য আমার শশুর ও আমার চাচা শশুরের নিকট থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। আমাকে প্রচন্ড মারপিট করে এই সব মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.