পরিত্যক্ত ঘোষনার পরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির নিচে ৬ বছর ধরে ব্যবসা করছেন দেড়শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি, বিকল্প না থাকায় সরানো যাচ্ছে না তাদের

এনামুল হক সিদ্দীক কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে -
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ শহরের বাজার চাঁন্দিনাটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে সেটাও ৬ বছর পূর্বে। এখনও সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচেই ব্যবসা করছেন দেড় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। যে দোকানগুলোতে সব সময় খরিদ্দার থাকেন আরো কমপক্ষে তিন শতাধিক। যারা সকলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনাবেচা করেন।
ইতোমধ্যে এই চাঁন্দিনা ভবনের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়ে এক ব্যবসায়ির মৃত্যুও হয়েছে। মাঝে মধ্যেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। মূল ভবনটিও যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। সম্পূর্ণ ভবনটি ধসে পড়লে বড় ধরণের জীবনহানি ঘটতে পারে এমন আশংকা ব্যবসায়িদের ও স্থানিয় পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের। কিন্তু ব্যবসায়িরা বিকল্প কোনো জায়গা পাচ্ছেন না, ফলে ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর স্থানিয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বার বার ভবনটি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ৩০ আগষ্ট ঝুকিঁপূর্ণ চান্দিনা ভবনটি খালি করে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হলেও আজো কেউ জায়গা ছাড়েনি।
ব্যবসায়িরা বলছেন, তারা সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। এখানে ব্যবসা করেই তাদের সংসার চলে। এখান থেকে সরে গেলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন বাজেট না থাকায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। তবে একটি বড় ধরনের চারতলা চান্দিনা ভবন নির্মানের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন পেলে তারা নকশা তৈরী করে অর্থ বরাদ্ধের জন্য প্রেরন করবেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের সবচে বড় এবং প্রধান কাঁচা বাজারটি ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে ভবন নির্মান করা হয়। হাট-চাঁদনী বলে পরিচিত এই চাঁন্দিনাতে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। যার বেশির ভাগ সবজী ব্যবসায়ি। এই চাঁন্দিনার দুই পাশে রয়েছে আরো দুইটি টিনসেডের চাঁন্দিনা। যার একটিতে আটা-ময়দা আর অপরটিতে মাছ ও মাংশ বিক্রি হয়। তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম রফি উদ্দিনের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যায়ে এই চাঁন্দিনা নির্মিত হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেষ্টারা খুলে খুলে পড়ছে। ব্যবসায়িরা মাথা বাঁচাতে বাঁশের খুটি লাগিয়ে চাটাই দিয়ে আড়াল করে রেখেছেন। চাঁন্দিনার দোকানদার তাহাজ্জেল হোসেন জানান, এতো ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। নিচে কেনাবেচা করলেও চিন্তা থাকে ছাদের দিকে। তিনি আরো জানান, ব্যবসার প্রয়োজনে অনেক টাকা মার্কেটে ছড়ানো রয়েছে। এই ব্যবসা ছেড়ে দিলে টাকাগুলো ফেরত পাবেন না। যে কারনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবাস করে যাচ্ছেন। আরেক ব্যবসায়ি আমিরুল ইসলাম জানান, মাঝে মধ্যে মনে হয় প্রতিষ্ঠান ফেলে চলে যায়। জীবন হাতের মুঠোই নিয়ে ব্যবসা করা যায় না।
ব্যবসায়িরা জানান, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর দোকানে বসে ছিলেন চাউল ব্যবসায়ি অজয় কুমার। হঠাৎ ছাদের একটি অংশ ধসে তার মাথার উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ সময় আরো দুইজন আহত হন। এখনও মাঝে মধ্যেই ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে।
বাজার চাঁন্দিনা ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভবনটির ছাদের পাশ দিয়ে রেলিং করায় বৃষ্টি সময় পানি জমে থাকতো। যে কারনে অল্প সময়ে ভবনটি নষ্ট হয়েছে। তিনি আরো জানান, এখানে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের এখানে ব্যবসা করেই সংসার চলে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়িরা আছেন জীবনের ঝুঁকিতে। এই চাঁন্দিনাটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মানের প্রয়োজন। তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্যবসায়ি সমিতির নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সংবর্ধনা সভায় তিনি স্থানিয় সাংসদের কাছে এই স্থানে একটি বহুতল মার্কেট নির্মানের দাবি জানিয়েছেন। সাংসদ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব জানান, ২০১৩ সালের ২ মে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। এরপর ব্যবসায়িদের ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে, কিন্তু তারা যাননি। একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা যচ্ছেন না। তিনি আরো জানান, এই চাঁন্দিনাটি ভেঙ্গে সেখানে চারতালা একটি ভবন নির্মানের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এটি বিএমডিএফ এ

No comments

Powered by Blogger.