ভোলায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে নিহত ৪, গুলিবিদ্ধ ৯

চিত্রা নিউজ অনলাইন ডেস্ক-
 ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করা নিয়ে ভোলায় জনতার বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত ও ১০ পুলিশসহ প্রায় দের শতাধিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৯ জন।
এদের মধ্যে আহত প্রায় শতাধিক মুসল্লিকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে এবং ৪০ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ১০-১৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানে হয়েছে।পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসাছাত্র মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌর সভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।
গুলিবিদ্ধরা হলেন নান্টু মিস্ত্রি (৪০), মাকসুদুর রহমান (১৮), তানভির (৩০), অলিউল্লাহ (২৪), সিদ্দিকুর রহমান (২৮), মিজানুর রহমান (৩০), আবু তাহের (৩০), শামীম (১৮), সোহরাব সরদার (২৪), আল আমিন (১৮), জামাল (২৫) ও সিদ্দিকুর রহমান (২৩)।
জানা যায়, গত শুক্রবার ফেসবুকে রসুল (সা.) নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ পোস্ট করা হয়। এনিয়ে রবিবার বেলা ১১টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের তৌহীদ জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলটি না করার জন্য বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে পুলিশ অনুরোধ জানায়। সাধারণ মানুষ আসার আগে বিক্ষোভটি বন্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়। তাদের অনুরোধে এ দুই ইমাম সকাল ১০টার দিকেই যে সকল লোক আসছে তাদেরকে নিয়ে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি সমাপ্ত করেন।
কিন্তু ততক্ষণে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে ঈদগাহে জড়ো হয়। একপর্যায়ে তারা ওই দুই ইমামের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং সেখানে থাকা পুলিশের উপর চড়াও হয়। এতে পুলিশ-জনতার মধ্যে সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে চার মুসল্লি নিহত হন। ১০ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লি আহত হন।
আহতরা জানিয়েছেন, বিপ্লব নামের এক যুবক ফেসবুকে মহানবী (সা.) ও বিবি ফাতেমাকে নিয়ে ‘অবমাননাকর মন্তব্য’ পোস্ট করে। এর প্রতিবাদে শনিবার (১৯ অক্টোবর) বোরহানউদ্দিনে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয় মুসল্লিরা। এর পরপরই সন্ধ্যার দিকে বিপ্লব নামের ওই যুবককে আটক করে পুলিশ।
এদিকে বিপ্লবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন স্থানীয় মুসল্লিরা। শুরুতেই পুলিশ সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করার জন্য বলে। এ নিয়ে পুলিশের সাথে মুসল্লিদের কথা-কাটাকাটি হয়। সেই মুহূর্তে কোনো এক ব্যক্তি পেছন থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করে। এ জন্য পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে অতর্কিত গুলি ছুড়তে শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলে ৪জন নিহত এবং পুলিশ, সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ গুলিবিদ্ধ ও আহত হন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ডা. মুহাম্মদ রাসেল জানান, ভোলা থেকে এখন পর্যন্ত যে ১২ জন শেবাচিমে ভর্তি হয়েছেন, তারা সবাই গুলিবিদ্ধ। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, কী ধরনের গুলি লেগেছে, সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছে তাদের শরীরে শর্টগানের গুলি লেগেছে। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.