মিশ্র ফল চাষে স্বাবলম্বী মাগুরার প্রগতিশীল চাষী নাসির

মিজানুর রহমান, মাগুরা ঘুরে এসে॥
ফুল চাষ দিয়ে শুরু করলেও নাসিরের সফলতা এসেছে ফল চাষে। তিনি এখন মাগুরার বেকার যুবকদের মাঝে একজন অনুকরণীয় চাষি। তার দেখাদেখি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক কৃষি কাজ শুরু করেছে। মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাউতড়া গ্রামের জামির হোসেনের ছেলে প্রগতিশীল চাষী নাসির হোসেন (৩২) ১৫ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন নাসির এগ্রো ফার্ম। কলা, পেপে, লিচু, পেয়ারা, ড্রাগন, কাশ্মীরি কুল ও মাল্টা ফল চাষে সীমাবদ্ধ নয় মৌসুমী ফসলের চাষও করছেন তিনি।
নাসির বলেন, “কৃষি কাজের শুরুটা ফুল চাষ দিয়ে। কিন্তু ফুল বাজার জাতকরণে ভোগান্তিতে পড়ায় ফুল চাষ ছেড়ে ফল চাষে ঝুকে পড়ি। কলা, পেপে, লিচু, পেয়ারা, ড্রাগন, কাশ্মীরি কুল ও মাল্টা ফল চাষে সাজিয়েছি আমার এগ্রো ফার্ম। এর মধ্যে কলা, পেপে, লিচু, ড্রাগন ও পেয়ারা বাজারজাত করা হচ্ছে। আগামী বছরের শুরু থেকেই কাশ্মীরিকুল বিক্রি করা যাবে। মাল্টা গাছে ফল আসবে ২ বছর পরে। বর্তমানে লিচু, পেয়ারা ও ড্রাগন ফল বিক্রি করে প্রতিবছর কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। কুল ও মাল্টা ফলের ধরন শুরু হলে বছরে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা আয় হবে।”
সৃজনশীল শিক্ষিত চাষী নাসির বলেন, ‘‘ ২০০২ সালে ফুল চাষের মাধ্যমে কৃষিকাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। নিজের অল্প জমিতে(২০শতাংশ)গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করে বাজারজাত করণে সমস্যায় পড়ে খুব বেশি লাভবান হতে পারি নি। এক পর্যায়ে কৃষি কাজ ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করি। এমন সময় পরিচয় হয় উদ্যানতত্ত্ববিদ ড.খান মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামানের সাথে। তার পরামর্শে লিচু, পেয়ারা, কুল, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করি। ড্রাগন ও পেয়ারা থেকে আশার থেকে বেশি মুনাফা পাই। ফলে নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষের পরিধি বাড়িয়ে ১৫ একরে উন্নীত করি।’’ নাসির জানান, বর্তমানে তার প্রায় এক একর জমিতে লিচু, ১০বিঘা(৪৬শতাংশের বিঘা) জমিতে পেয়ারা, ৩৩ শতাংশ জমিতে ড্রাগন, ৬ বিঘা জমিতে কাশ্মীরি কুল, ২০ শতাংশ জমিতে মাল্টার চাষ রয়েছে। বাকি জমিতে মৌসুমী ফসলের চাষ করেন। এর মধ্যে নিজের জমি ৫ একর এবং লিজ নেয়া ১০ একর। প্রতি বিঘা(৪৬শতাংশ)জমি বছরে ১২ হাজার টাকা দরে লিজ নিয়েছেন। কুল ও মাল্টায় এখনও ফল আসেনি। বাগানের সব রকম ফল গাছ থেকে ফল আসা শুরু করলে বছরে তিনি কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। তার কৃষি ক্ষেতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪জনের। এর মধ্যে ৭জন নিয়মিত এবং ৭জন অনিয়মিত। নাসির জানান, তার দেখাদেখি মাগুরার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেছেন। তিনি তাদেরকে নিয়মিত কৃষি পরামর্শ দিচ্ছেন।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা জানান, রাউতড়া গ্রামের নাসির হোসেন একজন প্রগতিশীল কৃষক এবং তিনি বিভিন্ন সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চাষের কাজ করেছেন। এই চাষ করে তিনি মাগুরা জেলার মডেল কৃষক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরা চাই তার দেখা দেখি এলাকার আরও যুবক এই চাষে ঝুঁকে পড়–ক এবং তারাও কৃষক নাসির হোসেনের মত স্বাবলম্বী হোক।
মাগুরা হর্টিকালচারের উদ্যানতত্ত্ববিদ ড.খান মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার প্রগতিশীল উচ্চ শিক্ষিত যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফল, ফুল উৎপাদনের কলাকৌশল সম্পর্কে সম্মুখ অবহিত করার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে । এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষিত চাষী নাসির ফল চাষের পাশাপাশি তার কৃষি প্রজেক্টে মিশ্র ফসল উৎপাদন করেছে। তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারে অল্প সময়ে ও অল্প পুঁজিতে মিশ্র ফল বাগান বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক পরিমানে ফল উৎপাদন করার লক্ষে সরকারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নাসিরের মতো আরো অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এগিয়ে আসছে এবং তারা চাকুরীর পিছনে না ছুটে কৃষিতে সম্পৃক্ত হয়ে লাভবান হচ্ছেন। এটি আমাদের কৃষির জন্য তথা আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক দিক।



No comments

Powered by Blogger.