বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় বাওড় ছিল, ভাবদিয়া বাওড়ের সরকারি ১২৬ বিঘা জমির পুরোটাই দখলদারদের কবলে

স্টাফ রিপোর্টার-
ঝিনাইদহ মহেশপুরের ভাবদিয়া বাওড়ের সরকারি ১২৬ বিঘা জমিই সরকারের হাত ছাড়া হতে চলেছে। ইতিমধ্যে এই জমির পুরোটাই বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। যা ছাপা পরচা তৈরীর জন্য পাঠানো হয়েছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন। সকরারি দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন তারা একাধিক মামলা করেও সরকারি এই জমি রক্ষায় এখনও সমর্থ হয়নি, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে স্থানিয়রা বলছেন, কর্মকর্তা মামলা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। অদৃশ্য কারনে কর্মকর্তারা মামলায় কোনো ভুমিকা রাখেন না। যে কারনে সরকারি জমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় দেখা দেয়। আর দলখদাররা বলছেন জমিটি এক সময় সরকারি বাওড় ছিল। তারা চাষাবাদ করে আসছিলেন। এরপর আর.এস রেকর্ডের সময় তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। সরকার দখল নিলে তারা ছেড়ে দেবেন।
সরেজমিনে মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গাড়াপোতা আর ভাবদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে একটি বাওড় বয়ে গেছে। যার নাম ভাবদিয়া বাওড়। ৪২ একর ৭ শতক সরকারি জমি রয়েছে এই বাওড়ে। এই বাওড়টি দিয়ে পাশ^বর্তী ৩২৬ টি মৌজার মাঠের পানি বড়বিল হয়ে কোদলা নদীতে নেমে যেতো। বর্তমানে বাওড়ে বড় বড় পুকুর কাটা হয়েছে। দুই গ্রামের অর্ধশত ব্যক্তি এই পুকুরগুলো কেটেছেন। সেখানে তারা মাছের চাষ করেন। এই পুকুর কাটার কারনে এখন আর বাওড়ে শ্রোত বয়ে যায় না। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাঠে পানি জমে। এতে কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে যায়।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবদিয়া বাওড়টি সরকারি বাওড়। এই বাওড়ে ৪২-০৭ শতক জমি আছে। এস.এ ও সিএস রেকর্ডে এই জমি সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানে ছিল। ৬২১ দাগের এই জমিটি আর.এস রেকর্ডের প্রায় ৭১ জনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। বিষয়টি ভুমি অফিসের নজরে আসলে রেকর্ড সংশোধনের মামলা দেওয়া হয়। বর্তমানেও ৭১ টি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তবে ব্যক্তি মালিকের নামে রেকর্ড হওয়া জমির ছাপা পরচা তৈরীর জন্য পাঠানো হয়েছে এ বিষয়ে তিনি সঠিক কিছু বলতে পারেননি। তবে তিনি জানান, ছাপা পরচা আসার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে জমি সরকারের আছে কি নেই। বাওড়ের জমি ব্যক্তি মালিকের নামে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে তিনি জানান, ছাপা পরচা আসার পরও জমি ফেরত নেওয়া সম্ভব।
ভাবদিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর বেলাল হোসেন জানান, দেখতে দেখতে বাওড়টি বে-দখল হয়ে গেল। এই বাওড় দিয়ে ৩২৬ মৌজার মাঠের পানি বের হতো। যা পুকুর কাটার কারনে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দুই গ্রামের মানুষগুলো বাওড়ের জমি দখল করেছে। প্রথমে তারা বাওড়ের পাড়ে চাষাবাদ শুরু করে। এরপর পুকুর কাটতে থাকেন। আনুমানিক ২৫ বছর পূর্বে এই পুকুরগুলো কাটা হয়। অল্প দিনেই অসংখ্য পুকুর তৈরী হয়ে যায়। এভাবে গোটা বাওড়ের জমি সরকারের দখল থেকে দখলদারদের কবলে চলে যায়। তিনি আরো জানান, দখলদাররা জমি দখলে রাখার পর আর এস রেকর্ডের সময় রেকর্ড কর্তাদের সঙ্গে আতাত করে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। সেই থেকে তারাই জমির মালিক বলে প্রচার দিচ্ছেন। সরকারের কোনো জমি এখানে নেই বলে বলা হচ্ছে। গাড়াপোতা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, একটি সময় ছিল তারা বাওড়ে মাছ ধরতে নামতেন। মাছ ধরার উৎসব চলতো। দেশিয় সব মাছ পাওয়া যেতো। বাওড় পাড়ের মানুষের মাছ ক্রয় করে খেতে হতো কম। আবার অনেকে এই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। যা এখন ভাবলে এগুলো স্বপ্নের মতো মনে হয়।
এ ব্যাপারে দখলদারদের একজন আব্দুল হক জানান, জায়গাটি বাওড়ের ছিল। তারা প্রথমে বাওড়ের ধারে চাষাবাদ করতেন। কিছু জমি ভুমিহীনদের নামেও বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে তারা ভুমিহীনদের নিকট থেকে ক্রয় করেন। এভাবে তারা জমির মালিক হয়েছেন। বর্তমানে তারা ওই জমিতে পুকুর কেটে চাষাবাদ করছেন। তিনি আরো জানান, আর.এস রেকর্ডে জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে জমি তাদের দখলে আছে। সরকার সকলের দখল থেকে বাওড়ের জায়গা ফেরত নিলে তিনিও ছেড়ে দেবেন। তিনি অবশ্য স্বীকার করেন এই বাওড়ের উপর দিয়ে বড় বিলের পানি কোদলা নদীতে যেতো। এখন আর পূর্বের মতো পানি হয় না। ফলে বিলের পানি বেশিদিন জমে থাকে না। বাওড়ে পুকুর আছে এমন আরেকজন মোমেনা খাতুন জানান, জমিটি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। তারাই এই জমির মালিক। আরেক দখলদার নাম প্রকাশ না করে জানান, এভাবে বাওড় দখল হয়ে যাবে সেটা তিনিও চাননি। কিন্তু সকলে দখল করছে দেখে তিনিও করেছেন। তবে বাওড় তার পূর্বের জায়গায় ফিরে যাবে এটা তিনিও প্রত্যাশা করেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস জানান, তারা বাওড়ের জমি ফেরত পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ৭১ টি মামলা চলমান রয়েছে। আশা করছেন সরকারের জমি সরকারের ঘরে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.