ফেসবুকে নোমানীর ব্যতিক্রমি ছবি পোস্ট, অসহায়দের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বার্তা



মিজানুর রহমান॥
প্রথমে বিশ। তারপর হলো পঞ্চাশ। টার্গেট এখন এক’শ পরিবার। দয়াময়ের দয়া ছাড়া আমাদের কোন আলাদা পুঁজি নেই, কিন্তু অভাবি মানুষের প্রয়োজন ব্যকুল করে তুলছে। শহরের মানুষের মাঝে পঞ্চাশ বস্তা খাবার বিরতণ হলো। ইনশাল্লাহ্ আগামীকাল যাব গ্রামে। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে। রহমান, তোমার রহমতই আমাদের ভরসা... এই লেখার পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে মুফতি ফারুক নোমানী কয়েকটি ছবিও ছেড়েছেন নিজ ফেসবুক ওয়ালে। ছবিতে রয়েছে ভিন্নতা। যাদেরকে খাদ্য দ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দান করা হচ্ছে তাদের মুখ-মন্ডল ঢেকে দিয়েছেন। ব্যতিক্রমি এই ছবি নজর কেড়েছে অনেকের। সহায়তা গ্রহণকারীদের আত্মমর্যাদা রক্ষা করে ছবি পোস্ট করায় মুফতি ফারুক নোমানীকে ধন্যবাদের পাশাপাশি অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই প্রথমে ২০ জনকে সহায়তা করার ইচ্ছা থাকলেও এখন তা বেড়ে ১০০ জনে পৌঁছেছে। আরো সাহায্য পেলে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।

মসজিদের মুয়াজ্জিন, খাদেম ও অসহায় নারীদের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মুফতি ফারুক নোমানী। এ কাজে তিনি একা নন, সাথে আছেন তার গড়া আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ। আজ পর্যন্ত (মঙ্গলবার) ১০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য দ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছেন। 

নোমানী জানান, মসজিদের একজন ইমাম হিসেবে আমি জানি, অধিকাংশ ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের নিয়মিত বেতন হয়না। আবার যে বেতন তাদের দেয়া হয় তা দিয়ে সংসারও চলে না। সংসারের প্রয়োজনে বাড়তি আয়ের জন্য অন্য কাজ করতে হয় তাদের। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারীভাবে লকডাউন ঘোষনার পর তাদের বাড়তি আয়ের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই প্রথমে ভেবেছিলাম নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে অল্প কয়েকজন মুয়াজ্জিন ও খাদেমকে খাদ্য-দ্রব্য সহায়তা করবেন। পরে বিষয়টি নিয়ে তার ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দেও সাথে কথা হলে তারাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। প্রথম দিন আমরা ২০ জন মুয়াজ্জিন ও খাদেমকে এই খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করি। এলাকায় গিয়ে বুঝতে পারি মুয়াজ্জিন ও খাদেম ছাড়াও সমাজে অসহায় মানুষের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে বিধাব নারী, সন্তান আছে কিন্তু সন্তানরা মায়ের খোঁজ নেয় না এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

ওই দিনই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফেসবুকে পোস্ট দেই। অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাই মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের পাশাপাশি অন্যদেরও এই খাদ্য-দ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপ্রত্র সহায়তা করার চেষ্টা করছি।
তিনি জানান তাদের সরবরাহকৃত খাদ্য-দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আটা, তেল, আলু, সাবান, লবন, পেয়াজ, রসুন ইত্যাদি।

ফেসবুকে সাহায্য গ্রহণকারীদের মুখ-মন্ডল ঢেকে দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই মানুষগুলো কখনো কারো কাছে হাত পাতে নি। আজ পরিস্থিতির স্বীকার। সাহায্য গ্রহণ করছেন এমন ছবি তাদের সন্তান-সন্তুতি ও আত্মীয় স্বজন দেখলে তারা লজ্জাবোধ করতে পারেন এই চেতনাবোধ থেকেই তাই আমি তাদের মুখ-মন্ডল ঢেকে দিচ্ছি।

এই ব্যাপারে কালীগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট্য কম্পিউটার ব্যবসায়ী মাজাহারুল ইসলাম শিপন বলেন, ‘‘মুফতি ফারুক নোমানী সাহেবের পোস্টকৃত ছবিগুলো আমার নজরে এসেছে। অসহায় দুঃস্থ মানুষগুলোর আত্ম-সম্মানবোধ সমুন্নত রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করায় আমি ফারুক নোমানীকে অভিনন্দন জানাই।’’ তিনি বলেন, নোমানী সাহেবের এই ব্যতিক্রমি ছবি পোস্ট অসহায়দের প্রতি বিত্তবানদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে ।  যদি ছবি পোস্ট করতেই হয় তবে নোমানী সাহেবের মতো সহায়তা গ্রহণকারীদের মুখ-মন্ডল ঢেকে দিয়ে ছবি পোস্ট করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। 

No comments

Powered by Blogger.