করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গ্রামবাসির উদ্যোগে কালীগঞ্জের আনন্দবাগ গ্রাম লকডাউন

স্টাফ রিপোর্টার-
গ্রামে প্রবেশের তিনটি রাস্তা, তিন রাস্তার মোড়েই বসানো হয়েছে তল্লাসী চৌকি। যারাই গ্রামে প্রবেশ করছেন তাদের পরিচয় এবং প্রয়োজন নিশ্চিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে জীবানুনাশক দিয়ে গোটা শরীর স্প্রে করে দিচ্ছে। আর গ্রামের মানুষগুলোর প্রয়োজন ছাড়া বেরুতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরী প্রয়োজন বুঝে বেরুতে দিলেও ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে জীবানুনাশক।
পাশাপাশি গ্রামের হতদরিদ্র ২০ জনের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। যাদের বাড়িতে খাবার পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আনন্দবাগ গ্রামবাসি। পালাক্রমে গ্রামের লোকজন এই তল্লাসী চৌকির দায়িত্ব ছাড়াও গ্রামটি লকডাউন করতে যা যা করনিয় সবই তারা করছেন। গত তিনদিন তারা এভাবে নিজেদের গ্রামটিকে সুরক্ষা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামবাসির দাবি করোনাভাইরাস এর প্রকোপ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চলবে তাদের এই কার্যক্রম।
শনিবার সরেজমিনে আনন্দবাগ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় পাইকপাড়া মোড়ের তল্লাসী চৌকিতে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষক রুহুল আমিন। তাদের কাছে পৌছানো মাত্র দুই যুবক ছুটে আসেন। কোনো কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই জীবানুনাশক দিয়ে সমস্ত শরীর স্প্রে করে দেওয়া হলো। এরপর সাংবাদিক শুনতেই যুবকদ্বয় বললেন কিছু করার নেই এভাবেই তারা দায়িত্ব পালন করছেন। যিনিই আনন্দবাগ গ্রামে প্রবেশ করবেন তাকেই এই স্প্রে’র মুখোমুখি হতে হবে।
একটু দুরে দেখা গেল গ্রামের আরেক মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল ওয়াদেহ। তার সঙ্গেও রয়েছেন কয়েকজন যুবক। নিজেরা মুখে মাস্ক পরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রামের খয়েরতলা মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন মেহেরুল ইসলাম। সকলেই স্ব-উদ্যোগে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
আনন্দবাগ গ্রামের একটি চৌকিতে বসে কথা হয় শিক্ষক রুহুল আমিন ও আব্দুল ওয়াহেদ এর সঙ্গে। তারা জানান, ২৫ মার্চ তারা গ্রামের মসজিদে বসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় সরকারের পাশাপাশি নিজেরাও গ্রাম তথা দেশ বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে ২৬ মার্চ থেকে আনন্দবাগ গ্রামটি স্থানীয় ভাবে লকডাউন করেছেন। ওই দিন বৃহস্পতিবার থেকে দুপুর থেকে গ্রামের কেউ খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বেরুতে পারছেন না। নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু মালামাল গ্রামবাসিকে কেনার জন্য সকালে ২ ঘন্টা সময় দেন। এরপরও তাৎক্ষনিক প্রয়োজনে কেউ বাইরে গেলে তার সার্বিক খবর গ্রামবাসি রাখছেন। তাকে জীবানুনাশক স্প্রে করে বাহির এবং প্রবেশ করতে হচ্ছে।
তারা আরো জানান, আনন্দবাগ গ্রামে ১৪০ টি পরিবার আর ২ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। গ্রামে প্রবেশের তিনটি রাস্তা রয়েছে। সবগুলো রাস্তার মোড়ে তাদের ছেলেরা কাজ করছেন। মোড়ে বাঁশ বেঁেধে চলাচল নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। যে কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে হলে এই চৌকিতে থামতে হবে। সেখঅনে পটাশ মিশ্রিত পানি, স্যাভলন মিশ্রিত পানি, সাবান আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে বসে আছেন যুবকরা। কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে স্প্রে করানো হচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা মোবাশ্বের হোসেন জানান, এভাবে গ্রামটি লকডাউন করে দেওয়ায় নিত্য আয়ের মানুষগুলোর কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এই কথা চিন্তা করে তারা হতদরিত্র নিত্য আয়ের মানুষের একটা তালিকা তৈরী করেছেন। এর সংখ্যা রয়েছে ২০ জনের অধিক। যাদের এই অবস্থা যতদিন চলবে ততদিন গ্রামের অন্যরা সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। গ্রামের এনামুল হক কৃষি কাজ করে সংসার চালান। একদিন মাঠে না গেলে তার ঘরে রান্নার চাউল থাকবে না। তাই তাকে এই কর্মসুচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মহাসিন আলী রিক্সা চালান। তিনি জানান, প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে তার কমপক্ষে ৩ শত টাকা আয় হয়। এই দিয়ে চলে তার চার জনের সংসার চলে। একদিন আয় না থাকলে তার পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে থাকতে হবে। এই অবস্থায় গ্রামবাসি সহযোগিতা করলে তার কোনো চিন্তা থকাবে না। আপাতত বেঁচে থাকার মতো ব্যবস্থা হলেই চলবে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুলতান আহমেদ বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। যেহেতু সারা দেশে লকডাউন চলছে, সেখানে গ্রামবাসির এই উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। তবে সতর্ক থাকতে হবে কোনো ভাবেই যেন জরুরী প্রয়োজন বাঁধাগ্রস্থ না হয়।

No comments

Powered by Blogger.