কাশিপুর ঘাটে সেতুর জন্য অপেক্ষা, ৫০ বছরের অধিক সময় মানুষ পারাপার হন নৌকায়

স্টাফ রিপোর্টার-
অর্ধশত বছর অপেক্ষার পরও কপোতাক্ষ নদের মহেশপুরের কাশিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মান হয়নি। ঘাটের দুইপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষেরা আজো নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। এতে কমপক্ষে ১০ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি শেষ নেই। তারা দীর্ঘদিন সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে সরকারি দপ্তরগুলোতে ধর্ণা দিলেও কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে পারাপারে নিয়োজিত নৌকার মাঁঝি রবি বিশ^াস দুঃখ করে বলেন, এখন আর মানুষ পার করে পয়সা পাওয়া যায় না। সঠিক ভাবে কেউ পয়সা দিতে চান না। তারপরও মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রেখেছেন। একটি সেতু হলে এলাকার মানুষের সঙ্গে তারাও বেঁচে যেতেন।
সরেজমিনে ঘাট এলাকা গিয়ে দেখা যায় একটি ডিঙ্গি নৌকায় একজন বাইসাইকেল নিয়ে পার হচ্ছেন। অপরদিকে অপেক্ষায় আছেন আরো একজন। তিনিও পার হবেন। স্থানিয় সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানিয় সুন্দরপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মজনুর রহমান জানান, মহেশপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদটি। এই নদের উত্তর পাড়ে রয়েছে সুন্দরপুর গ্রাম আর দক্ষিনে কাশিপুর গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝে ঘাটের অবস্থান হলেও এটি কাশিপুরের ঘাট বলে পরিচিত। তিনি আরো জানান, এই ঘাট দিয়ে পাশ^বর্তী কমপক্ষে ১০ গ্রামের মানুষ নিয়মিত চলাচল করে। এছাড়াও মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজার ও যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলা শহরের সঙ্গে দ্রুততম সময়ে এই ঘাট পার হয়ে যাওয়া যায়। তিনি জানান, সুন্দরপুর, বলিভদ্রপুর, কাশিপুর, সৈয়দপুর, রামচন্দ্রপুর, খালিশপুর, মালাধরপুর, আজমপুর, নওদাগা ও ভালাইপুর গ্রামের মানুষ এই নৌকায় পার হয়ে থাকেন। এপার থেকে ওপার আর ওপার থেকে এপার যাওয়া-আসা রয়েছে তাদের।
নৌকায় পার হওয়ার অপেক্ষায় সুন্দরপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তারা এই ঘাট পার হয়ে চৌগাছা পর্যন্ত চলে যান। এই ঘাটটি পার হতে পারলে তাদের কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার পথ দুরত্ব করে যায়। সুন্দরপুর গ্রাম থেকে মহেশপুর শহর পেরিয়ে চৌগাছা শহরে যেতে কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা হয়। আর এই ঘাট পেরিয়ে গেছে ১৫ কিলোমিটার হয়। একই ভাবে কাশিপুর-রামচন্দ্রপুর এলাকার মানুষগুলোর খালিশপুর যেতে পারে এই ঘাট পেরিয়ে। এতে তাদের অনেকটা রাস্তা কম হয়। যে কারনে তারা নৌকায় পাড়াপার হয়ে থাকেন। তবে তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানে একটা সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তারা ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ফলে তাদের কষ্ট কষ্টই রয়ে গেছে।
গ্রাম পুলিশ মজনুর রহমান জানান, স্থানিয় এসবিকে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম এক সময় এই স্থানে সেতু করার জন্য এলজিইডিতে যোগাযোগ করেন। আর যুদ্ধকালীন সময়ের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এফ.আর চৌধুরী জানান, তারা এই ঘাটের পাশে বসবাস করেন। ইতিপূর্বে এই ঘাটে একটা সেতু হোক এই দাবি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছিলেন। স্থানিয় অফিসগুলোতে লিখিত আবেদনও করেছেন, কিন্তু এখনও সেতুটি নির্মান হয়নি। তিনি এই স্থানে একটি সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে বলেন, সেতুটি হলে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন।
ঘাটের নৌকার মাঝি রবি বিশ^াস জানান, তিনি কমপক্ষে ৩০ বছর এই নৌকার বৈঠা বইছেন। মানুষ পার করা তার কাজ। ইতিপূর্বে তার বাবা নিলমনি বিশ^াস এই কাজ করতেন। এই কাজ করে এখন আর সংসার চালানো যায় না। কিন্তু ঘাটে সেতু না থাকায় তাকে করতে হচ্ছে। মানুষগুলো পার না করলে তাদের কষ্টের শেষ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে এই নৌকা বন্ধ হয়ে যাবে। তার পরবর্তী প্রজন্মের কেউ এই বৈঠা ধরবে এমন আশা করা কষ্টকর।
এ বিষয়ে স্থানিয় এসবিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আরিফান হাসান চৌধুরী জানান, তারা পরিষদের পক্ষ থেকে ইউড্রেন-কালভার্টের কাজ করে থাকেন। বড় বড় সেতু নির্মান করতে হলে সরকারের অন্য দপ্তরপুলোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তারা পরিষদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিপূর্বে আবেদন-নিবেদন করেছেন। জনগনের চাহিদা অনুযায়ী তারা চান এই কাশিপুর ঘাটে একটা সেতু নির্মান হোক।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মোঃ সেলিম চৌধুরী জানান, তারা এই ঘাটে সেতু নির্মানের জন্য বেশ কিছুদিন পূর্বে থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করছেন দ্রুতই একটা সেতু নির্মান করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.