নদী দখলমুক্ত করার সাথে সাথে দূষনমুক্ত করাও অত্যন্ত জরুরী।

এম এ.কাদের-
দেশে নদ-নদী দখল ও দূষণের চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগ জনক। দীর্ঘদিন ধরে এদিকে খেয়াল না দেওয়ায় দেশের ২৩০টি নদ-নদী আজ মৃতপ্রায়। এ সমস্ত নদ-নদী, প্রায় ১০ হাজার প্রভাবশালী ভূমি দস্যু দখলবাজরা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আসছে। তাছাড়া নদীগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, মিল কলকারখানার বজ্যর্, নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহর, নগরের মানুষের ব্যবহারের দূষিত নোংরা পানি, শহর বাজারের (মাছ , মাংশ বাজারের নোংরা বর্জ্য ) ড্রেনে দীর্ঘদিন জমে থাকা দূষিত বর্জ্য সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে নদীর সাথে সংযোগ রাখার কারনে সাংঘাতিকভাবে নদী দূষণ হচ্ছে। মৃত প্রায় এ সমস্ত নদ-নদীগুলো দেখলে মনে হয় এ যেন বর্জ্য রাখার ভাগাড়। এসমস্ত নদ-নদী ধ্বংস করার পিছনে কাজ করছে এক ধরনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা । সম্প্রতি সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ৪ ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৮৯ পৃষ্টার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে (সুত্রঃ সংবাদ১৩-০৩-২০২০)। এতে বলা হয়েছে , নদ-নদী দখলবাজদের সঙ্গে অধিকাংশ স্থানীয় ভুমি অফিস ও বি আই ডব্লিউ টি এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজস রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ক্ষমতাধর প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের দৌরাত্মও রয়েছে। সারা দেশে নদী দখল ও দূষনের চিত্রটি অত্যন্ত উদ্বেগ জনক।
নদী দূষন ও দখল এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিনত হয়েছে। আমাদের প্রায় প্রতিদিনই নদী দূষনের ও দখলের খবর মিডিয়ার মাধ্যমে চোখে পড়ে। বি আই ডব্লিউ টি এ সমস্ত বিষয়ে দেখভাল করার কথা থাকলেও তারা সেটা না করে অনেক ক্ষেত্রে দখলদারদের সহযোগিতা করে আসছে। সারা দেশে নদীনালা খাল বিল অবৈধ ভাবে দখল হওয়ার কারনে পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ মিল কলকারখানার বর্জ্য ও বসতবাড়ি, হাট-বাজারের নোংরা দূষিত পানি, মৃত প্রাণী, প্রাণীর পঁচা উচ্ছিষ্ট অংশ অহরহ নদ-নদীতে ফেলা হচ্ছে। শহর এলাকায় বস্তিবাসীদের অপরিকল্পিত অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ভবনের টয়লেট ড্রেনের সাথে সংযোগ করে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী ও জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। নদী দূষণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, বড় বড় শহরের পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে খাল নদীর সাথে সংযোগ রাখায়। ঢাকা শহরের পরিবেশ দূষণ অস্বাস্থ্যকর বুড়িগঙ্গার দূর্গন্ধযুক্ত পানি ও বিভিন্ন খাল ডোবার দিকে তাকালেই এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এভাবে নদী দূষণ ও দখলের কারনে নদীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। তাছাড়া নদীর প্রবাহ না থাকায় প্রতি বছরই বর্ষাকালে মারাত্মক বন্যার সুষ্টি হচ্ছে। নদী দূষণকারী শুধু প্রভাবশালী কলকারখানার মালিকরাই নয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন ভাবে নদ-নদী দূষন করছে। দেশের নদীগুলোর পাড়ে গড়ে ওঠা সিটি শহর ও শত শত পৌর এলাকায় বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে । ্এছাড়াও দেশে সুগারমিলগুলো অ-স্বাস্থ্যকরু বর্জ্য, রোগ জীবানু বহনকারী মশা-মাছির উপদ্রব ও বংশ বিস্তারের সাহায্য করে। এই বর্জ্যগুলি ড্রেনগুলির মাধ্যমে সরাসরি নদীতে সংযোগ করা হয়, যা নদী দূষনের অন্যতম প্রধান কারন। দেশের বেশির ভাগ মিল কলকারখানার বজ্যর্, নিজস্ব শোধনাগার না থাকায় দূষনকারীরা নদীগুলো কে তাদের নিজস্ব সম্পদ মনে করে নদী দূষন করে পরিবেশ নষ্ট করছে। নদী দখল ও দূষণকারীরা এতই শক্তিশালী যে রাষ্ট্্রীয় সব উদ্যোগ তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে। তাছাড়া নদী দখল এবং দূষণ ঠেকানোর জন্য সরকারী যে সমস্ত সংস্থারগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া আছে, দৃশ্যমান এ সমস্ত অনিয়ম দেখেও তাদের চুপ থাকার রহস্য উন্মেচিত হওয়া দরকার। অনেক সময় আমরা দেখেছি, সরকারের পক্ষ থেকে নদ-নদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে প্রভাবশালীদের বাঁধার সম্মুখীন হয়ে আর বেশিদুর এগোতে পারে না, থেমে যায়। ক্ষমতাশীল, প্রভাবশালীদের স্বার্থের কাছে নদী উদ্ধারের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হোক দেশের ১৭ কেটি মানুষ তা আশা করে না। 
নদী রক্ষায় শুধু প্রকল্প গ্রহন করলেই হবেনা, বাস্তবায়নও করতে হবে। নদীর তীরে মিল কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। ইতিপূর্বে যে সমস্ত মিল কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার নাই সেগুলোর শোধনাগার তৈরি বাধ্যতামূলক করতে হবে। দেশের বড় বড় শহর , সিটি শহর, জেলা শহর, পৌর এলাকা দূষিত বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে নদীর সাথে সংযুক্ত না করে শোধনাগারের মাধ্যমে শোধন করতে হবে। সমুদ্রের পাড়ে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প নদী দূষন ও পরিবেশ দূষনের কারনে বন্ধ করতে হব্ েঅথবা নদী দূষন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। লঞ্চ ষ্টিমার নির্মাণ ও মেরামতকালে নদী ও সমুদ্রের পাড়ে তৈলাক্ত বর্জ্য নিঃসরণ বন্ধ করতে হবে।
পানিই জীবন, কথাটি মনে রেখে সর্বদা পানির প্রবাহ সচল রাখতে হবে এবং যে কোন মূেল্য দল মত নির্বিশেষে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পরিবেশ দুষণ ঠেকাতে মৃত প্রায় নদীকে বাঁচাতে হবে। যেহেতু ক্ষমতাবান প্রভাবশালীরা নদীকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, নদীগুলো উদ্ধারের কাজে সরকারের সাথে সাধারণ জনগনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কাজকে বেগমান করলেই দেশের ২৩০ টি নদী বাঁচবে, জলজ প্রাণী বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচবে, ১৭ কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচবে।

এম. এ. কাদের
( সাংবাদিক ও কলামিষ্ট) 

No comments

Powered by Blogger.