মৌসুমী ফলগূলি কেন খাবো (প্রথম পর্ব)

তরিকুল ইসলাম, ইবিঃ
"ফলের রাজা আম, বেশী করে খান" এটি একটি উপদেশ ৷ শুধু আম নয়, মৌসুমী ফল খাওয়ার গূরুত্ব অপরিসীম ৷ সৃষ্টিকর্তা তাইতো নানান মৌসুমে নানান ফল আর ফুলের সমাহার ঘটান ৷ পরিমিত ফল প্রতিদিন খেলে যেসব উপকার হয়ঃ
ক. দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
খ. শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়
গ. ভিটামিন এর অভাব পূরণ হয়
ঘ. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
ঙ. ডায়াবেটিকস এর ঝুকি কমে যায়
চ. লৌহ ও খনিজ লবণের ঘাটতি থাকে না প্রভৃতি ৷
আমাদের দেশে সহজলভ্য এমন দশটি ফল নিয়ে আলোচনা করব ৷ এই পর্বে পাঁচটি ফলের কথা আলোচনা করা হলঃ
এক. আমঃ
ফলের রাজা আম, আর আম খাওয়ার মৌসুমে আমের ঘ্রাণ পাওয়া যাবে না এমন বাড়ির দেখা ভার ৷ আমগাছ বাংলাদেশের শহর কিংবা গ্রাম, প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায় ৷ পুষ্টিগুনে ভরপুর আম আমাদের শুধু দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও নানাভাবে উপযোগিতার শীর্ষে ৷ আম আচার, জেলি, মোরব্বা, শরবত করে খাওয়া যায় ৷ প্রক্রিয়াজাত করে আমকে অনেকদিন রেখেও খাওয়া যায় ৷
জনশ্রুতিমতে, প্রায় ছয় হাজার বছর আগে চাষ শুরু হওয়া আম রাজশাহী অন্ঞ্চলের চাঁপাইনবাবগন্ঞ্জ প্রসিদ্ধ ৷ আমের ইংরেজি নাম Mango এবং বৈজ্ঞানিক নাম Mangifara indica. কিছু কিছু আম ব্যতীত প্রায় সকল আমই সুস্বাদু ৷ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ প্রতি ১০০ গ্রাম আমের মধ্যে আছে ০.৫ ভাগ প্রোটিন, ০.১ ভাগ ফ্যাট, ০.৫ ভাগ খনিজ পদার্থ, ১২ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ০.০১ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ৷ এছাড়াও লৌহ, ভিটামিন এ, বি এবং সি ৷ অর্থকরী ফসল হিসেবে আমের এখন ব্যাপক জনপ্রিয় ৷
দুই. জামঃ
জাম একটি চমৎকার স্বাদের বিশেষ ধরণের ফল, যা ঔষধী ফল হিসেবেও বেশ পরিচিত ৷ কেননা, জাম রক্তের চাপ এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে ৷ ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে জনপ্রিয় ফল হিসেবে এর খ্যাতি রয়েছে ৷ বাংলাদেশের সর্বত্রই জাম বেশ জনপ্রিয় এবং অর্থকরী ফসল হিসেবেও অনেকে জাম চাষ করেন ৷ এর ইংরেজি নাম Java Plum এবং বৈজ্ঞানক নাম Syzygium cumir.
সকল ধরণের মানুষের জন্য জাম অনেক উপকারী ৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি পাওয়া যায় ৷ পরিপক্ক ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন প্রতি ১০০ গ্রাম জামে শতকরা ১৫.৬ ভাগ শর্করা, ০.২৫ ভাগ স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন ০.৭৫ ভাগ, ১৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৭৪ গ্রাম এবং লৌহ থাকে ৷ টক ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত জামের রস রক্তকে ফিলট্রেট করতে সহায়তা করে ৷
তিন. কাঁঠালঃ
জাতীয় ফল কাঁঠাল, যার ইংরেজি নাম Jack fruit এবং বৈজ্ঞানিক নাম Artocarepas heterophyllus. মাটির উপরিভাগ থেকে গাছের সরু ডাল পর্যন্ত যেকোন স্থানে কাঁঠালের মুচি (ফুল) হয়, যা পরিণত হয়ে বৃহৎ কাঁঠালে রূপ নেয় ৷ কাঁঠাল রসালো ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত ৷ কাঁঠাল পাতা ছাগলের প্রিয় খাবারের মধ্যে অন্যতম ৷
পুষ্টিগুণসম্পন্ন প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে জলীয় অংশ ৭৭ ভাগ, ২ ভাগ প্রোটিন, ১ ভাগ স্নেহ, ০.৮ ভাগ খনিজ লবণ, আঁশ ১.২ ভাগ, প্রায় ১৯ ভাগ শর্করাসহ লৌহ, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম থাকে ৷ অর্থকরী ফসল হিসেবে অনেকেই কাঁঠালের চাষ করে থাকেন গ্রামান্ঞ্চলে ৷
চার. কলাঃ
বারমাস পাওয়া যায় এমন একটি ফল কলা, তবে গ্রীষ্মকালের কলার চাহিদা ব্যাপক ৷ পার্বত্য অন্ঞ্চল ছাড়াও বরিশাল এবং ঝিনাইদহ কলা চাষের জন্য বিখ্যাত ৷ কলা মূলত দু'ধরনের হলেও বিভিন্ন জাতের কলা এদেশে চাষ হয় ৷ তরকারি হিসেবে কাঁচাকলা (কাঁচকলা নামে সমধিক পরিচিত) বেশি জনপ্রিয়, আর পাঁকা কলা হিসেবে সবরি, চিনি চম্পা ও সাগরকলাই বহুল পরিচিত ৷ কলার ইংরেজি নাম Banana এবং বৈজ্ঞানিক নাম Musa Species.
কলাতে শতকরা ১.৪ ভাগ প্রোটিন, ০.২ ভাগ ফ্যাট, ৩৭ ভাগ শর্করা, ০.০১ ভাগ ক্যালসিয়াম, ০.০৫ ভাগ ফসফরাসসহ ভিটামিন বি, সি এবং লৌহ থাকে ৷ এক কেজি পাঁকা কলায় প্রায় ১৫০০ ক্যালরি শক্তি থাকে ৷ কলা নিয়ে একটি জনপ্রিয় গান রয়েছে, " আমার দয়াল বাবা, কলা খাবা- গাছ লাগায়ে খাও, পরের গাছে হাত দিও, কেন মিটমিটাইয়া চাও বাবারে..."৷
পাঁচ. পেয়ারাঃ
পেয়ারা কাঠবিড়ালির প্রিয় খাবার ! তাই বলে আমাদের কম প্রিয় নয় ৷ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন ৷ এটি বর্তমানে দেশের গ্রামে-শহরে সর্বত্রই চাষ হয় ৷সহজলভ্য এই ফলটি বরিশাল ও চট্রগ্রাম অন্ঞ্চলে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ৷ পেয়ারা প্রাপ্তির প্রধান মৌসুম বর্ষাকাল ৷ এর ইংরেজি নাম Guava এবং বৈজ্ঞানিক নাম Pisidiune guava.
প্রতি কেজি পেয়ারায় ৬৬০ ক্যালরি শক্তি থাকে এবং শতকরা ১৪.৫ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ১.৫ ভাগ প্রোটিন, ০.২ ভাগ ফ্যাট, ০.৮ ভাগ খনিজ, ০.০৪ ভাগ ফসফরাসসহ লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি এবং সি পাওয়া যায় ৷ স্বাথ্যের জন্য পেয়ারা বেশ উপকারী ফল ৷ রক্তের প্রবাহমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা এবং পেয়ারা পাতার উপকার লক্ষ্যণীয় ৷ তাই সকলে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমী ফল খাওয়ার চেষ্টা করি, অন্যদেরকে সচেতন করি ৷ করোনাকে জয় করি...

তথ্যসূত্রঃ ইউকিপিডিয়া ও ফলদ উদ্ভিদ পরিচিতি ৷
লেখকঃ তরিকুল ইসলাম মাসুম
শিক্ষার্থী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷

1 comment:

  1. best পোষ্ট brother । ভালো লাগলো । ধন্যবাদ আপনাকে । বগুড়ার বিখ্যাত দই এবং ৫০+ রকমের সু-স্বাদু মিষ্টি নিয়ে এই সাইটটি দেখতে পারেন ।
    "অনলাইন দই & মিষ্টি সার্ভিস"

    ReplyDelete

Powered by Blogger.