জুতা সেন্ডেলের আঠার নেশায় বুঁদ হরিণাকুন্ডুর শিশু কিশোর

এম এ কবীর,ঝিনাইদহ-
ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, টাপেন্টাসহ নানা ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যের কথা হরহামেশায় শোনা যায়। কিছুদিন আগেও দেশের যুব সমাজের একটা বিশাল অংশ এসব মরণনেশায় ঝুঁকে পড়েছিলো। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী আর জোরদার অভিযানের ফলে এখন এসব মাদকদ্রব্যের আকাল চলছে। আর এসব নেশাদ্রব্যের দামও আগের তুলনায় অনেকাংশে বেশি।
ফলে বিকল্প হিসেবে এবার নতুন নেশাদ্রব্য ‘আঠা’তে ঝুঁকছে মাদকসেবিরা। উঠতি বয়সি ১০/১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের একটা ব্যাপক অংশ আসক্ত হচ্ছে এই মরণনেশা আঠায়। স্কুল- কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আর বখাটে এসব শিশু-কিশোররা এখন ক্রমেই এ নেশায় আসক্ত হয়ে বিপথগামি হচ্ছে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকসহ সচেতন মহল। এ অবস্থা ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পৌর এলাকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকার টাওয়ার পাড়া, তেতুলিয়ামোড়, বৃত্তিরপোলের ক্যানেল এলাকা, হরিণাকুন্ডু জোড়াপুকুরিয়া মাঠের একটি মেহগুনি বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন উঠতি বয়সি শিশু-কিশোররা এই ‘আঠা’ নেশায় মেতে ওঠে। জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক শিরিন আক্তার জানান, বাজারে ড্যান্ডি ও ড্যান্ডোরাইড নামে ইন্ডিয়ান দুটি কোম্পানির আঠা পাওয়া যায়। যা জুতা সেন্ডেল, কাঠের ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে রাবার জাতীয় দ্রব্যে জোড়াতালির কাজে ব্যবহার করা হয়। দেশের ফাইভ জেমস ও বেঙ্গল গ্রুপ ওই পণ্য দুটির প্যাকেট ও বাজারজাত করছে। এসব আঠা এখন উঠতি বয়সি যুবকরা নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি আরও জানান, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, টাপেন্টসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের দাম অনেক বেশি এবং এসব মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কঠোর অভিযান ও নজরদারির ফলে এখন এগুলোর আকাল চলছে। ফলে কম দাম পেয়ে এখন যুবসমাজ আঠা নেশায় ঝুঁকে পড়ছে। এ নেশায় আসক্ত একাদশ শ্রেণি পড়ুয়া এক যুবক জানায়, কিছুদিন আগে তারা ব্যাথানাশক ট্যাবলেট টাপেন্টা ও ঘুমের ট্যাবলেট কাশির সিরাপের মধ্যে মিশিয়ে ভোলাদানা তৈরি করে নেশা করতেন। ফার্মেসিগুলোতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি আর পুলিশি অভিযানের ফলে এখন আর এগুলো পাওয়া যায় না। তাই তারা কম দামে এখন বাজারের ইলেট্রনিক্সের দোকান থেকে এসব আঠা কিনে পলিথিনের মধ্যে দিয়ে ঝাঁকিয়ে তা হাতের তালুর সাহায্যে ঘষে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সেবন করেন। এতে ভালো নেশা হয় বলে জানায় ওই যুবক।
একইরকম অনুভুতি জানিয়ে ১৪ বছর বয়সের এক মিল শ্রমিক জানায়, এ নেশায় নিজেকে কিছু সময়ের জন্য রাজা মনে হয়। হরিণাকুন্ডু উপজেলা মোড়ের ইলেট্রনিক্স ব্যবসায়ী কাকন এন্টারপ্রাইজের মালিক টিটো জানান. একশ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ীরা ২৫/৩০ টাকা মূল্যের এসব আঠা ৫০/৬০ টাকা দামে উঠতি বয়সি ছেলেদের কাছে বিক্রি করে তাদের বিপথগামি করছে।
তিনি এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ জামিনুর রশিদ জানান, আঠা সেবনের ফলে সাময়িক মস্তিস্কের নার্ভাস সিস্টেমকে জাগ্রত করে মস্তিস্ক উত্তেজিত করে। আর কেউ দীর্ঘস্থায়িভাবে এ নেশায় আসক্ত হলে তার মস্তিস্ক, কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, শিশু-কিশোরদরে কাছে এসব আঠা বিক্রেতা অসাধু ব্যবসায়িদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।






     


No comments

Powered by Blogger.