শিক্ষিত যুবকের ব্যতিক্রমি স্বপ্ন



ঝিনাইদহ প্রতিনিধি॥

‘‘ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা ছিল ছোট বেলা থেকেই। ইন্টারনেটের বদৌলতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউটিউবে মেহেরপুরের ইসমাইল হোসেনের মাল্টা বাগানের ভিডিও নজরে আসে। কালক্ষেপন না করে পরের দিনই মাল্টা বাগানটি দেখতে মেহেরপুরে যাই। বাগান দেখে মন ভরে গেল। বাড়ি ফিরে এসে মাল্টা বাগান করা নিয়ে বাবার সাথে পরামর্শ করলাম। অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করালাম। এক সপ্তাহের মধ্যে জমি প্রস্তুত করে মাল্টা চাষি ইসমাইলের কাছ থেকে চারা নিয়ে এসে রোপন করি। আহদান এগ্রো প্রজেক্ট গড়ে তোলার শুরুর গল্পটি এভাবে বর্ণনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী(২৫)।’’ কৃষি উদ্যোক্তা রাব্বি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী গ্রামের  আসাদুল ইসলাম মোল্লার বড় ছেলে। রাব্বি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং এর মাস্টার্সের ছাত্র।



মাল্টা দিয়ে শুরু করলেও ১০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা আহদান এগ্রো প্রজেক্টে বর্তমানে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগান, ১ বিঘা জমিতে কমলা ও চায়না কমলাসহ  বাকি জমিতে মৌসুমী ফসলের চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ড্রাগন ও মাল্টা গাছে গত বছর থেকে ফল আসতে শুরু করেছে। ফল বিক্রি করে আশানুরুপ মুনাফা পাওয়ায় প্রজেক্ট আরো বর্ধিত করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এবারে প্রজেক্টে যোগ করতে চাচ্ছেন গবাদী পশুপালন।  

রাব্বি জানান, ২০১৬ সালে দেড় বিঘা জামিতে লাগানো মাল্টা গাছে মাত্র আড়াই বছর বয়সেই ফল এসেছিল। এবছর ১৫০ টি গাছের প্রায় প্রতিটি গাছেই ফল এসেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু গাছে ১ মণের বেশি ফল এসেছে। সাধারণত আগষ্ট, সেপ্টেম্বর মাসে ফল বিক্রির উপযোগি হয়। বয়সের সাথে সাথে ফলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে বলে রাব্বি জানান। বর্তমানে তার প্রজেক্টে ৩ বিঘা জমিতে বারি-১, বারি-২ ও ভিয়েতনামী জাতের মাল্টার চাষ  থাকলেও নতুন উদ্যোক্তাদের বারি-১ জাতের মাল্টা চাষের পরামর্শ দেন তিনি। ১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে মাল্টা গাছ লাগিয়ে ৫ বছরের মাথায় খরচ বাদে কমপক্ষে দেড় লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। 

গাছের পরিচর্যা নিয়ে কথা হলে রাব্বি জানান, মাল্টা গাছে অধিক পরিমাণে জৈব সার ও অল্প পরিমাণে ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। খরা মৌসুমে সেচ দিতে হয়। এছাড়া বাড়তি কোনো যতœ নিতে হয় না। 



মাল্টা গাছে সাধারণত ভাইরাস জনিত রোগ, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা যায়। ফল আসলে পিপঁড়া ও মিলিবাগ পোকার আক্রমণ হতে পারে। এই জন্য ক্যারাইটি, কপার অক্সিক্লোরাইড ও সাইফারম্যাথিন নামক কিটনাশক ব্যবহার করতে হয়। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকতা (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ূন কবীর জানান, এ উপজেলায় ৩-৪ বছর ধরে ড্রাগন ও মাল্টা চাষ হচ্ছে। এ দুটি ফসলই বেশ লাভজনক। বর্তমানে রাব্বিদের মতো অনেক শিক্ষিত যুবক কৃষিতে এগিয়ে আসছে। এরাই আমাদের আলোর দিশারী। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস এ ধরনের কৃষি উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে  বিভিন্ন সময়ে ট্রেনিং দিয়ে তাদেরকে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 


No comments

Powered by Blogger.