আমার শিক্ষা জীবনের গুরু

এস এম টিপু, স্টাফ রিপোর্টারঃ যে মানুষটার শিক্ষায় আমি নিজেকে মানুষ বলে দাবি করি সে হলো আমার শিক্ষক।মা-বাবার পরে যে মানুষটা আমাদের হাতে ধরে পৃথিবীটাকে চিনিয়ে দিয়েছে সে মানুষটাকে আমরা কোনো একটা সময় ভুলেই যায়।পুরা শিক্ষা জীবনে আমাদের হাজারো অভিযোগ থাকে আমাদের শিক্ষকদের উপরে অথচ শিক্ষা জীবনে কখনো ভাবিনি যে এই মানুষ গুলোর জন্যই আমরা মানুষের মতো  মানুষ হতে পারবো। যে মানুষ গুলোর কড়া শাসনে আমরা বিরক্ত হয়ে থাকতাম সে মানুষ গুলো জন্য আমাদের চোখের কোনে জ্বল গড়ায়। শিক্ষকদের ভয়ে ভয়ে শ্রদ্ধা ও সন্মান করতাম। শিক্ষা জীবনে অথচ তারাই ছিলেন আমার বাবা-মায়ের মতন দ্বায়িত্বশীল একজন মানুষ। যে মানুষেরা আমাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিতেন ভালো মন্দ বোঝার জন্য আমার মতিষ্কে বুদ্ধি ও হৃদয়ে বিবেক তৈরি করে দিতেন অতি সুদক্ষ হাতে। মন থেকে ভালোবাসার আগেই আমরা অনেক সময় হারিয়ে ফেলি আমাদের শিক্ষকদের, যাদের জন্য আমরা মানুষ নাম ধারি। একটা সময়ে প্রতিটা মানুষ  তার শৈশবে ফিরে যেতে চায়। ঠিক তেমনি আমিও ফিরে যেতে চায়, সেই শৈশবে। খুব মনে হয় যদি আরেকটা বার ফিরে যেতে পারতাম সেই বিদ্যালয়ে, যেখানে সাদা শার্ট-প্যান্ট পরে দাড়িয়ে থাকতেন আমার শিক্ষকেরা, মায়ের মতো শাড়ির  আচলে জড়িয়ে  রাখতেন আমার ম্যাডামরা। অল্প বেতনে, ছোট্ট ঘরগুলোতে  থাকতেন আমার শিক্ষকেরা। দ্রব্য মূল্যের চড়া বাজারে সংসারের নানা টানা পড়েনকেও হার মানিয়ে আমার শিক্ষকেরা আমাদের সমাজে মাথা উঁচু করে চলেন।তাদের মুখে অকৃত্রিম হাসি ফুটে উঠতো যখন আমরা পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেতাম। সেই আনন্দময় জ্বল জ্বল করা চোখগুলো আমাকে ভীষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। বুকের ভিতর একটা হা-হা কার যেনো আমাকে পিড়া দেয়। সেই হা - হা কার যেনো শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন না করা।এই অনিয়মের সমাজে আজকাল শিক্ষকেরা বেত নিয়ে শ্রেণি কক্ষে  যেতে পারেন না। উচ্চ স্বরে এখন আর তারা কথাও বলতে পারেন না। কারণ শিক্ষার্থীদের একটা অংশ এখন নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। আমাদের সমাজে অপ-সাংষ্কৃতি দারুণ ভাবে মিশে যাচ্ছে। যার প্রভাবে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা, শিক্ষকদের সাথে নানা অপরাধ করতেও দ্বিধা বোধ করেন না। অথচ আমরা শিক্ষকদের ওই বেতের ভয়ে বা ধমকের ভয়ে একদিন মানুষ হওয়ার অদম্য লড়াই করেছিলাম।মাঝে মাঝে ভাবলে ভীষণ অবাক লাগে আমরা কতো অল্পতেই কতো বিরক্ত হয়ে যায় অথচ একটা পড়া না বুঝলে শিক্ষকদের কাছে কতো-শত বার জিজ্ঞেস করতাম তারাও আমাদের কতো যত্ন সহকারে অসংখ্য বার বুঝিয়ে দিতেন কিন্তু কখনো বিরক্ত হতেন না।ধৈর্যের মশাল হাতে দৃড়-চিত্তে সেই শিক্ষকেরাই আমাদের সঠিক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলোর অদম্য পরিশ্রম করেছেন অথচ  এই আমরাই পান থেকে চুন খসলেই তাদের হেও প্রতিপন্ন করার কোনো সুযোগই হাত ছাড়া  করতাম না। আজকাল ভীষণ যন্ত্রণা হয় ও বিবেকের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়। আমরা শিক্ষকদের সন্মান না জানিয়ে উল্টো তাদের নিয়ে রসিকতা করায় ছিলো আমাদের প্রধান কাজ। আজ চাইলেও ফিরে যেতে  পাবো না সেই সোনালী দিনগুলো।  সেখানে আমার শিক্ষকেরা ছিলেন আমাদের আদর্শের গুরু। তবুও আমি বার বার ফিরে যেতে চায় আমার ফেলে আসা দিনগুলোতে যেখানে আমি চিরঋণী হয়ে আছি  আমার সকল শিক্ষকদের কাছে। এখন খুব মিস করি আমার সকল শিক্ষা গুরুদের। 

Attachments area

No comments

Powered by Blogger.