ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর সন্তান প্রসব প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর

 

স্টাফ রিপোর্টার-
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অজ্ঞাত অন্তঃসত্তা মানষিক প্রতিবন্ধিকে নিয়ে গত কাল প্রকাশিত  গনমাধ্যমের প্রতিবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। ওই প্রতিবন্ধি শুক্রবার বিকালে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এরপর রাত সাড়ে টার দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা ছুটে আসেন হাসপাতালে। তারা মা সদ্যজাত নবজাতকের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন। ফুটফুটে চেহারার শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে জেলা প্রশাসক নাম দেন আদরী। পরে নিজ বাড়িতে আশ্রয় সেবাদানকারী উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ -ছাকিরন দম্পতির হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক এছাড়াও প্রতিবন্ধি মা শিশুর সুস্থতার জন্য যাবতীয় ব্যয় সরকারী ভাবে বহন করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। এর আগে নবজাতক প্রতিবন্ধি মাকে দেখতে বিকালে ছুটে যান স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার

উল্লেখ্য, আনুমানিক ২২/২৩ বছরের পরিচয়হীন এক মানষিক প্রতিবন্ধি মহিলা উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন । কখনও ময়লা কাপড় চোপড় শরীরে জড়িয়ে আবার কখনও অর্ধলঙ্গ অবস্থায় থেকে মুখে বিড় বিড় করে কি যেন বলতেন। কেউ কিছু বললে কখনও তেড়ে আসে। আবার কখনও দেখা যায় ঠান্ডা মেজাজে কিন্ত গত সপ্তাহ খানেক আগে দিন আগে ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। চোখ মেলে তাকাতে পারলেও তার ছিলনা কোন নড়াচড়া। সেই সময়ে পথচারী গ্রামের লোকজন ভীড় শুরু হয়। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। কিন্ত অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারও না কারও সন্তান বা বোন। এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আমজাদ আলী,আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হলো প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা। এরপর বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই বেডে শুয়েই সে শুরু করে অসহ্য পাগলামী। অস্থির করে তোলে গোটা হাসপাতাল এলাকা। বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করেই আবার তাকে নিয়ে এলাকায় যান। এরপর আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও অস্থিরতার কারনে সকলেই এড়িয়ে যান কিন্ত এমন অবস্থায় অসুস্থ পাগলীকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারেননি দিনমজুর আমজাদ আলী। গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে সেবা যত্ন করতে থাকেন। দিনমজুর আমজাদের অভাবের সংসার হলেও তার স্ত্রী ছাকিরন নেছা নিজের সংসারের সদস্যের মত করে সেবা যত্ন  চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাদের এই মহত্বের বিষয়টি তুলে ধরে  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়
এরপর শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ হাসপাতালে এই প্রতিবন্ধি ফুটফুটে চেহারার কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে বেজায় খুশি আমজাদ ছাকিরন দম্পতি

কালীগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফসানা পারভিন জানান, মিষ্ঠ হওয়ার আগে সাভাবিক না থাকায় ছোট্ট একটি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয়েছে। তবে মা নবজাতক এখনও সুস্থ আছেন

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে অসহায় প্রতিবন্ধির ব্যাপারে একাধিকবার কথা বলে খোঁজ খবর নিয়েছেন। যে কোন প্রয়োজনেই তিনি তার পাশে থাকবেন

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, প্রতিবন্ধি মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা অবশ্যই সহৃদয়তার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজে দিনমজুর হয়েও আমজাদ ছাকিরন দম্পতি প্রতিবন্ধিকে পরিবারের একজন সদস্যের মত করে সেবা করছেন এজন্য ওই পরিবার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ারযোগ্য। তিনি আরও বলেন,  গনমাধ্যমে প্রকাশিত খবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তাঁর পক্ষ থেকে আশ্রয়দাতা পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মা শিশুর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহন করা হবে

No comments

Powered by Blogger.