“সুখের সন্ধানে”-দ্বিতীয় পর্ব

আলহাজ্ব এম. এ. কাদের

(সাংবাদিক ও কলামিষ্ট)-

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে নিয়মতান্ত্রিক স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের বিধান দিয়েছেন। আর সেই বিধান মেনে চললে জীবনে সুখী হওয়া সহজ হবে। সৃষ্টিকর্তার উপর যার বিশ্বাস যত দৃঢ়, পার্থিব জগতে তিনি তত সুখী। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, এই জন্য পুষ্টি কর লোভ-লালসা পরিত্যাগ করা, স্বল্পতে সন্তুষ্ট থাকা, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা, পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, রাতে নিরুপদ্রবভাবে ঘুমানো, আনন্দ ও সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করা, বিশুদ্ধ পানি পান করা, ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর-মনের সুস্থতা বজায় রাখা। দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভাল সম্পর্ক অর্থবহ করে তোলে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বিবাহিত জীবনে দাম্পত্য সম্পর্ক মধুময় করে তোলে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবনী থেকে অনুকরণীয় বৈশিষ্ট্যাবলি নিজে আয়ত্ত্ব করে, গরিব-দুঃখী মানুষকে সেবাযত্ন ও দান-খয়রাতের মাধ্যমে আত্মতৃপ্ত একজন মানুষ সুখী হতে পারে। অন্যের ধন-সম্পদের প্রতি পরশ্রীকাতর না হয়ে সৃষ্টিকর্তা তাঁর থেকে আপনাকে অনেক সুখী রেখেছেন। এটা ভেবে সৃষ্টি কর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই সুখ। প্রত্যেক জীবের জীবদ্দশায় সুখ একটি গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়। মানুষের জীবন কাল শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সুখের নেশায়, সুখের আশায়, সুখের খোঁজে অতিবাহিত হয়। অনেকের অহেতুক ব্যস্ততার কারণে তার সুখ বিনষ্ট হয়। আবার সুখ না খুঁজলেও সে সুখ অনুভব করতে পারে না। অনেক ব্যক্তি সুখের মধ্যে ডুবে থাকা সত্ত্বেও সে সুখ পায়না। কারণ যার জীবনে কোন দুঃখ-কষ্ট নেই সে সুখ বুঝতে পারে না। কাজেই প্রকৃত সুখ পেতে হলে জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সুখের জন্য জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে  হবে। অর্থের প্রাচুর্যের মধ্যে, অনেক অর্থ উপার্জনের মধ্যে যে সুখ আছে এ কথাটি সত্য নয়। এ সম্পর্কে আমি আলোচনায় পরে আসতে চাই। আমাদের দেশে সাধারণত ৪/৫ বৎসর বয়সেই স্কুলে যেতে হয়। ঐ ছোট বয়সেই পড়াশুনা, ভালমন্দ বোঝার মন-মানসিকতা সৃষ্টি না হলেও ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অর্থাৎ ১০/১২ বৎসর বয়সে  অনেক জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি এসে যায়। তখন থেকেই আমাদের কে ভাল-মন্দ বেছে নিতে হবে। আস্তে আস্তে দায়িত্ব নিতে হবে এবং অন্যায়কে পরিহার করে দায়িত্বশীল হয়ে ভাল কাজকে বেছে নিতে হবে। সময়কে মূল্যায়ন করে সঠিক কাজে সময়কে ব্যবহার করতে হবে, শিক্ষক, গুরুজন ও বাবা-মার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” কথাটি মনে রেখে খাওয়া-দাওয়া, শরীর চর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে ভাল ভাবে জানতে হবে কারণ এই সময়কে ঝড়-ঝঞ্ঝার কাল বলা হয়। এই সময় নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে নেশাগ্রস্ত হলে, দুষ্টের প্রেমে পড়লে বা দুষ্ট বন্ধুর সঙ্গী হয়ে অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়লে সুখের জন্য সাজাতে যাওয়া জীবন যেমন ধ্বংস হতে পারে, তেমনি দুঃখ বয়ে আনতে পারে। কাজেই ১২ বছর বয়স অর্থাৎ ক্লাস সেভেন থেকে এইচ.এস.সি পর্যন্ত (১৮ বছর পর্যন্ত) সতর্কতার সাথে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে পার করতে পারলে ভাল হয়। তাছাড়া সময়কে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় লেখাপড়া করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। উচ্চ শিক্ষা নেয়ার  ক্ষেত্রে আগে থেকে ভেবে লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে। উচ্চ শিক্ষা নিতে সময় লাগে অনেক। এ সময় লেখাপড়ার সাথে সাথে পিতা-মাতা, ছোট ভাই-বোন ও প্রতিবেশীর দিকে খেয়াল রাখা দরকার । এতে করে সবার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। লেখাপড়ার শেষ পর্যায়ে অথবা শেষ করে চাকুরি অথবা কর্মে যোগদান করেই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপযুক্ত জীবনসঙ্গী নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। পাত্র-পাত্রীর  বয়সের পার্থক্যটাও খেয়াল রাখতে হবে। বয়সের পার্থক্য বেশি হলে অ্যাডজাস্টমেন্টে (খাপ খাওয়াতে) অসুবিধা হতে পারে। বিয়ে নামক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কাজটি ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় দেরিতে বিয়ের কারণে অনেক অসুবিধা ভোগ করতে হয়। দেরিতে সন্তান জন্মগ্রহণ করলে লালন-পালনে যেমন অসুবিধা, তেমনি মায়েদের সন্তান ধারণে (কনসিভ) অসুবিধা হতে পারে। কার্যকারণসূত্রে সন্তান না হলে সারা জীবন স্বামী/স্ত্রীকে অতৃপ্ত অবস্থায় জীবন কাটাতে হয়।

বিয়ের বিষয়টা অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। পাত্র/পাত্রী  নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সারা জীবন সুখ নষ্ট হবে। জীবনসঙ্গী নির্বাচন জীবনে সুখী হবার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে একটি কথা সবসময় মনে রাখতে হবে, পাত্র-পাত্রী উভয়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান যদি সমপর্যায়ের না হয়, তাহলে সারাজীবন টানা পোড়নের মধ্যেই চলতে হবে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে সামাজিক অবস্থান বেশি উচুঁ-নিচু হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সারাজীবন সংসার নামক ক্ষেত্রে বিচরণ করলেও তাদের জীবনটা কোনরকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে, সেখানে থাকেনা কোন প্রাণের স্পন্দন।

 Email: makader958@gmail.com

Phone: 01711-338182,01916-604161


No comments

Powered by Blogger.