সহকর্মী আব্দুর রাজ্জাকের স্মরণে দুটি কথা

 সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক বয়সে আমার এক বছরের জুনিয়র হলেও সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন সিনিয়র। ছোটবেলা থেকেই  আমরা প্রায়  একসঙ্গেই বেড়ে উঠেছি। ১৯৭০ সালে আমি নলডাঙ্গা ভুষণ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে রাজ্জাকের সাথে ঘনিষ্ঠতা আরও  বেড়ে যায়। সাংবাদিক রাজ্জাক ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় প্রধাণ শিক্ষক আব্দুর রহিম সাহেবের বড় ছেলে। স্যার আমাদের ইংরেজী পড়াতেন, সে কারনেই স্যারের বাড়িতে ছিল আমার যাতায়াত। স্যারের বাড়িতে আমরা যখন পড়তাম, তখন রাজ্জাককেও স্যার ডেকে নিয়ে আমাদের সাথেই যোগ করে আমাদের সহপাঠি হিসেবেই শিক্ষা দিতেন। সাংবাদিক রাজ্জাক ছোটবেলায় ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং চঞ্চল প্রকৃতির; তাঁর মেধা ও চঞ্চলতা দেখে মনে হতো, সে বড় হয়ে জীবনে অবশ্যই সফলতা অর্জন করবে। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭৬ সালে এস এস সি পাশ করে দৈনিক ঠিকানা সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। এর পরে তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক বাংলার বানী, দৈনিক পূর্বাঞ্চল, দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক খোলা কাগজে  ২০২০ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সাংবাদিকতার সাথে সাথে তার সম্পাদনায় অনেক ম্যাগাজিনের আত্নপ্রকাশ ঘটেছে। তিনি দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে সমাজের অনিয়ম, অনাচার, অসঙ্গতি পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি করেছেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরী ভালো না লাগায় ১৯৭৯ সালে সাংবাদিক  মনোজ সরকার ম্যান, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন ও ডাঃ আতোয়ার রহমানকে সঙ্গে নিয়ে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ সালে মোবারকগন্জ সুগার মিলে চাকরি শুরু করে ২০২০ সালে ৩১ শে জানুয়ারি স্টোর অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান। তাঁর মধ্যে ছিল প্রতিনিধিত্ব করার সামর্থ্য ও যোগ্যতা। একইসাথে আব্দুর রাজ্জাক চাকুরী, সাংবাদিকতা ও কালীগঞ্জের সাংবাদিকদের প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনড় ও আপোষহীন। তাঁর এই সততা এবং দৃঢ়তার কারণেই বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর উপরেই অর্পন করা হতো। যেকোন বিষয়ে লেখার হাত ছিল তাঁর অত্যন্ত সুনিপুন ও নির্ভূল। ঝিনাইদহ জেলা সহ অত্র অঞ্চলের সাংবাদিক হিসেবে ছিল তাঁর ছিল অত্যন্ত সুনাম ও পরিচিতি। এক কথায় সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাককে সবাই  চিনতো ও মানতো। কালীগঞ্জের সাংবাদিক জগতে প্রথম দিকে যারা সাংবাদিক পেশায় এসেছেন, তারা সবাই তাঁর হাত ধরে শিক্ষা নিয়ে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেছেন। যেকোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর ভুল হতোনা। ৯০ এর দশকে কালীগঞ্জে সাংবাদিকতার প্রসার ঘটায় কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই ভঙ্গুর সংগঠনকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তার চেষ্টায়  ১৯৯৭ সালে উভয় প্রেসক্লাব এক করে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি গত ২২শে অক্টোবর ২০২০ দিবাগত রাতে মৃত্যুবরন করেন। তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবন কালীগঞ্জের সাধারণ মানুষের মনে, বিশেষ করে সাংবাদিকদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।


এম.এ.কাদের। 

সাংবাদিক ও কলামিস্ট। 


No comments

Powered by Blogger.