“সুখের সন্ধানে” (৮ম পর্ব)

আলহাজ্ব এম. এ. কাদের (সাংবাদিক ও কলামিষ্ট)-

বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে কাছে রাখতে হবে, সম্ভব না হলে, দুরে থাকলেও সব সময় খোঁজ-খবর নিতে হবে, সেবা-যত্ন করতে হবে। এতে করে নিজের সন্তানদেরও মন-মানসিকতা ঐভাবে তৈরি হবে। অন্যথায় বৃদ্ধ বয়সে আপনারও খোঁজ-খবর নেয়ার কেউ থাকবে না। আপনিও শেষ বয়সে অভাব ও কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরন করতে পারেন। এমনও হতে পারে উচ্চশিক্ষিত সন্তানদের অনেকেই বাবা-মায়ের মৃত্যুর সংবাদে কানাডা, আমেরিকা থেকে আসার সময়টুকু পর্যন্ত করতে পারবে না। 

মানুষের জীবন কাল খুবই সংক্ষিপ্ত। মনে রাখতে হবে জীবনের সোনালী সময় ৩০ বছর বয়স থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। যা কিছু অর্জন, ভোগ এই সময়েই করতে হবে। এই সংক্ষিপ্ত ২০ বছরের জীবনে উপভোগ করা, সন্তান মানুষ করা, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা সবকিছু এরই মধ্যে শেষ করতে হবে। এরপরে অনেক কিছুই আগের মত সুন্দর, মনের মত হবে না। এসময়ে আপনার চুলে পাক ধরবে, চোখের জ্যোতি কমবে, শরীরে রোগ বাসা বাঁধবে। ধৈর্য, স্মৃতিশক্তি কমতে থাকবে। দরজায় বার্ধক্য কড়া নাড়বে, মনে হবে কবে যেন সুন্দর সময়গুলো পার করে এসেছি, বুঝতেই পারলাম না। হতাশা বাসা বাঁধবে মনে। এজন্য সময়ের মূল্য দিয়ে সময়ের কাজ সময়ে করলে আপনি মানসিক ভাবে তৃপ্ত থাকবেন, হতাশা, মনঃপীড়া তেমনভাবে আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। আপনি থাকবেন অনেকটাই তৃপ্ত, হবেন অনেক সুখী। ষাটোর্ধ্ব বয়সে মানুষের মনে মৃত্যুভয় বাসা বাঁধে, চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়ে, চলাফেরায় একাকীত্ব মনে হয়। এ সময় নিয়মিত শারীরিক চেক-আপের মধ্যে থাকতে হবে। ধর্মীয় কার্যক্রমে কমবেশী সম্পৃক্ত থাকলে, পারিবারিক পরিবেশে নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে চললে আপনি তৃপ্ত হতে পারবেন যা আপনাকে সুখী করবে।

আপনি সবচেয়ে সুখী হবেন, বাবা-মাকে সেবা-যত্নের মধ্যে দিয়ে। তাদের দোয়া আপনার মানসিক সুখ বৃদ্ধি করে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। মনে রাখতে হবে আপনি আপনার সন্তানদের জন্য যা করছেন, আপনার পিতা-মাতা এতটা করতে না পারলেও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কম করেননি। আপনি এখন সন্তানদের জন্য যা করছেন এর দশ ভাগের এক ভাগও যদি আপনার পিতা-মাতার জন্য করেন, তাহলে তাদের দোয়ায় আপনি অনেক সুখী হবেন এবং সুখ অনুভব করতে পারবেন। এর ব্যতিক্রম হলে পরবর্তী সময়ে অনুশোচনায় ভুগে সুখ নষ্ট হবে। সুখী হতে হলে টেনশন মুক্ত থাকতে হবে। অনেক ধন সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যস্ত জীবন টেনশন বাড়ায়। ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থায়, বিশেষ করে ইসলামী জীবনবিধান মেনে চললেই সুখী হওয়া যায়। আলোচনায় যা এসেছে সবই ধর্মীয় বিধান। সৎ মানুষ হলে, আপনার ও পরিবারের সদস্যদের সীমাহীন চাহিদা না থাকলে টেনশন কম থাকবে এবং আপনি সুখী হবেন। সুখী হতে হলে যে বিষয়গুলো ছোট বেলা থেকে খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো বাবা-মার উপদেশ, আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, সুস্বাস্থ্যর জন্য পরিমিত খাবার গ্রহণ করা, সৎ বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব করা, বড়দেরকে সম্মান করা, লক্ষ্য স্থির করে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা করা, সঠিক সময়ে বিয়ে করা, একের অধিক সন্তান নেয়া, সন্তানদের সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মানুষ করে গড়ে তোলা, সামর্থ্য থাকলে পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও সমাজের জন্য ভাল কিছু করা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক মধুর রাখা, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সেবা-যতœ করা, হিংসা, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে পরোপকারের মাধ্যমে মনকে উৎফুল্ল রাখতে হবে। আপনার করা একটি কটুক্তি, অসম্মান কারো জীবন হানির কারন হতে পারে। তাই সব সময় প্রতিযোগীতা নয়, সব প্রতিযোগিতায় সাফল্য আসেনা। কাজেই তাই মানুন- তাই করুন যাতে আপনার ও সবার মঙ্গল নিহিত আছে। মানুষের একটি অন্যতম সহজাত প্রবৃত্তি হলো চাহিদা নিবৃত্ত করা। আর চাহিদা নিবৃত্ত করতে পারলেই মানুষ লক্ষ্যে পৌঁছায়, সন্তুষ্টি বিধান হয় তথা সুখ বা শান্তি পায়। এই সুখের আশায় মানুষ নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। সে জানে না প্রকৃত সুখ কোথায়, তবুও সে সারাজীবন সুখের আশায় তার লক্ষ্য স্থির করে অভীষ্টে পৌঁছাতে চায়। একমাত্র শারীরিক সুখই প্রকৃত সুখ বা শান্তি নয়। মানুষ মানসিকভাবে তৃপ্ত হতে চায় বিভিন্ন পন্থায়। তবে একজন প্রকৃত ভাল মানুষ সে যে ধর্মেরই হোক না কেন মানবিক মূল্যবোধের চাহিদা পূরণ করে সুখী হতে পারে। ডিজিটাল এই যুগে মানুষ দীর্ঘসময় ধরে বইয়ের পাতায় চোখ রাখতে চায় না। একারণে অল্পতেই আলোচনা শেষ করছি। সমাজে সবার মঙ্গল কামনায়, সবার সাথে সম্প্রীতি বজায় রেখে, সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে গুরুজনকে মান্য করে, পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সাথে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ থেকে, নিজের সন্তানদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগরুকের মাধ্যমে “সুখের সন্ধানে” বইটি পাঠ করে আমরা বইটির বিষয়বস্তু আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে, মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হতে পারলে আমরা প্রকৃত সুখের সন্ধান পেতে পারি।

= সমাপ্ত =

                                                                                                                                                   Email: makader958@gmail.com

Phone: 01711-338182, 01961-604161

Facebook page: facebook.com/makader1958

 

 


No comments

Powered by Blogger.