সস্তায় প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে ডিমের জুড়ি নাই।

এম. এ. কাদের-

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে খাদ্যতালিকায় দৈনিক মাথাপিছু ডিমের পরিমাণ অন্তত দ্বিগুন করতে হবে।  দেশে প্রতন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর-বন্দর, হাট-বাজারে মাএ ৬-৮ টাকার মধ্যে হাত বাড়ালেই ডিম পাওয়া যায়। প্রতিটি মানুষকে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।“সুস্থ সবল জাতি চাই, সব বয়সে ডিম খাই”এ স্লোগান বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্বল্প আয়ের  মানুষের মাঝে বেশি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে দেশের অপুষ্টির চিত্র আমুল পালটে যাবে। ডিমের পুষ্টিগুণের কথা কমবেশি সবারই জানা। কেউ হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করেন, কেউ আবার মুরগির। হাঁসের ডিমে কিছুটা আঁশটে গন্ধ থাকায় কেউ কেউ এটা পছন্দ করেন না। আবার অনেকের মুরগির ডিমে অরুচি আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁস ও মুরগি দুই ধরনের ডিমই শরীরের জন্য উপকারী। তবে পুষ্টিগুণের বিচারে এই দুই ডিমে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিম থেকে এনার্জি পাওয়া যায় ১৮৫ কিলো ক্যালোরি। অন্যদিকে ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে থাকে ১৪৯ কিলো ক্যালরি এনার্জি। কার্বহাইড্রেট ও খনিজের পরিমাণ সমান হলেও হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। দুই ধরনের ডিমেই ম্যাঙ্গানিজ, কপার, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও আয়রন পাওয়া যায়। তবে সব উপাদান হাঁসের ডিমে বেশি পরিমাণে থাকে। খাদ্যশক্তিও বেশি থাকে হাঁসের ডিমে। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ১৮১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। অন্যদিকে মুরগির ডিমে খাদ্যশক্তির পরিমাণ থাকে ১৭৩ কিলোক্যালরি। হাঁসের ডিমের ফ্যাট থাকে ১৩ দশমিক ৭ গ্রাম, মুরগির ডিমে থাকে ১৩ দশমিক ৩ গ্রাম। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ক্যালসিয়াম থাকে ৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৬৯ মাইক্রোগ্রাম। অন্যদিকে মুরগির ডিমে ক্যালসিয়াম রয়েছে ৬০ মিলিগ্রাম, আয়রন রয়েছে ২ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ রয়েছে ২৯৯ মাইক্রোগ্রাম।

হাঁসের ডিম এবং মুরগির ডিমের মধ্যে মূল পার্থক্য হল হাঁসের ডিম প্রায় ৫০ শতাংশ বড় হয়। হাঁসের ডিম দেখতেও একটু অন্যরকম হয়। হাঁসের ডিম দীর্ঘদিন ভালো থাকে কারণ হাঁসরা সাধারণত পানির ধারে ডিম পারে, সেকারণে হাঁসের ডিমের বাইরের অংশ শক্ত হয়। শক্ত হওয়ার কারণে অনেকদিন পর্যন্ত ডিম ভালো থাকে। তাড়াতাড়ি ভাঙেও না। হাঁসের ডিমের কুসুম মুরগির ডিমের থেকে বড় হয়। এতে ফ্যাটের পরিমাণও বেশি থাকে।

মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ১৩ দশমিক ৫ গ্রাম এবং অন্যদিকে মুরগির ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ১৩ দশমিক ৩ গ্রাম৷ যাদের মুরগির ডিমে এলার্জি থাকে তারা হাঁসের ডিম খেতে পারেন।

পুষ্টিতে ভরপুর হাঁসের ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ডি, আয়রনের পরিমাণ মুরগির ডিমের থেকে বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ থাকে ৩ দশমিক ১ গ্রাম। অন্যদিকে হাঁসের ডিমে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ মুরগির ডিমের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি থাকে। অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিমে বেশি থাকে। তবে মুরগির ডিমেও থ্রিয়োনিন, আইসোলিউসিন, ট্রিপটোফ্যান, লিউসিন, মিথায়োনিন, লাইসিন, কিস্টিন, টাইরোসিন, ভ্যালিন, সেরিন, গ্লাইসিন, প্রোলিন, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, হিস্টিডিন, অ্যালানিন ও আর্জিনিনের মতো অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে।

পুষ্টিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিম বেশি উপকারী। কারণ এতে পুষ্টি উপাদান মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি থাকে। তবে হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ থাকে ৮৮৪ মিলিগ্রাম। মুরগির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ থাকে মাত্র ৪২৫ মিলিগ্রাম। তাই কারো হৃদরোগের সমস্যা থাকলে হাঁসের ডিম না খাওয়াই ভালো। এছাড়া হাই প্রোটিন ডায়েট মেনে চললে হাঁসের ডিমের শুধু সাদা অংশটাই খাওয়া উচিত। অন্যদিকে, মুরগি ও হাঁসের ডিম বহুল প্রচলিত হলেও কোলেস্টেরলের কারণে অনেকেই খেতে পারেন না। এর বিকল্প হিসেবে কোয়েলের ডিম খাওয়া যেতে পারে। কোয়েলের ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো অ্যাসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে, এই ডিম শরীরের সব ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করে শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কোয়েলের ডিম থেকে মুরগির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ৩ গুণ বেশি এবং প্রোটিনের পরিমাণ মুরগির ডিম থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ বেশি। একারণে কোয়েলের ডিম অধিক সাস্থ্যসম্মত। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সচল রাখতে পারে কোয়েলের ডিম। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে কোয়েলের ডিম।

সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

No comments

Powered by Blogger.