কৃষকদের নতুন উদ্ভাবন, ক্ষেতের আইলে ঘাষের বেড়া মিলছে পশু খাদ্য, হচ্ছে ফসল রক্ষা

চিত্রা নিউজ ডেস্ক-

কৃষক বাবু মন্ডল ১৬ শতক জমিতে পেয়ারার চাষ করেছিলেন। এই পেয়ারার চারা রোপনের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতের আইলে নেপিয়ার ঘাষের চারাও রোপন করেন। উভয় চারা বড় হতে থাকে। ঘাষের গাছগুলো দেড় থেকে দুই ফুট উচু হলে বাঁশের চটা দিয়ে বেঁধে দেন তিনি। এভাবে এই ঘাষ গাছটিই হয়ে যায় ফসল রক্ষার বেড়া। আর ক্ষেতের মধ্যে থাকা পেয়ারার চারাও নিরাপদে বড় হয়ে ওঠে। 

কৃষক বাবু মন্ডল জানান, পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা বিক্রি করে যেমন পয়সা পেয়েছেন তেমনই আইলে থাকা ঘাষও বিক্রি করেছেন। কিছু ঘাষ বাড়িতে থাকা গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখনও তার ক্ষেতের আইলে এই ঘাষ রয়েছে। আগামীতে ওই জমিতে ঝাল গাছ লাগাবেন। ঝাল বিক্রির পাশাপাশি ঘাষও বিক্রি করবেন বলে আশা রয়েছে তার। 

বাবু মন্ডল একা নন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ফসল রক্ষায় বেড়া হিসেবে নেপিয়ার ঘাষ বেছে নিয়েছেন। মাঠের পর মাঠ এই ঘাষ লাগিয়ে তা দিয়ে বেড়া তৈরী করে  ফসলের ক্ষেত ঘেরা হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষেতের মধ্যে সহজে কেউ প্রবেশ করতে পারছে না। গরু-ছাগলও প্রবেশ করতে পারবে না। নিদ্ধারিত ফটক দিয়ে মানুষ ভেতরে যেতে পারবে। কৃষি বিভাগও বলছেন এটা খুবই ভালো খবর। ইতিপূর্বে কৃষকরা যা দিয়েই ক্ষেতের আইলে বেড়া দেন না কেন সেখানে জঙ্গল হয়ে যেতো। আর এই ঘাষ বড় হয়ে উঠলে তা কেটে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

সোমবার সরেজমিনে কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষিকুন্ডু, বলুহর, ফুলবাড়ি, এলাঙ্গী গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য ক্ষেত এই বেড়া দিয়ে ফসল রক্ষা করা হচ্ছে। ঘাষের বেড়ার মধ্যে নানা ধরনের সবজির চাষ করা হয়েছে। লক্ষিকুন্ডু গ্রামের মাঠে কথা হয় কৃষক বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, কোটচাঁদপুর এলাকায় এই নেপিয়ার ঘাষের চাষ হচ্ছে প্রায় ১৫/১৬ বছর। প্রথমে ফুলবাড়ি এলাকায় এই চাষ শুরু হয়। বর্তমানে গোটা উপজেলার সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের এলাকাতেও ব্যাপক ভাবে এই ঘাষের চাষ হচ্ছে। সাব্দালপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, একবিঘা জমিতে এই নেপিয়ার ঘাষের চাষ করলে বছরে তিন দফায় কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার ঘাষ বিক্রি করা যায়। এতে খরচ খুবই কম, এক বিঘায় সর্বচো ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তাই লাভজনক ফসল হিসেবে কৃষক এই চাষে ঝুকে পড়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী চলতি বছর কোটচাঁদপুর উপজেলায় প্রায় ১৩ শত বিঘা জমিতে এই ঘাষের চাষ হয়েচে। আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, গত ৩ থেকে ৪ বছর হলো কৃষকরা নিজেরাই এই ঘাষ গাছ দিয়ে জমিতে বেড়া তৈরী শুরু করেছেন। তিনিও একটি জমিতে এই ঘাষের বেড়া দিয়েছেন। এভাবে তিনি ফসল রক্ষা করছেন।  

বলুহর গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে কুল এর চাষ করেছেন। সেই জমিতে ঘাষ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রথমে ঘাষের চারা রোপন করতে হয়। অল্প সময়ে এটা বেড়ে ওঠে। দেড় থেকে ২ ফুট লম্বা হলেই বাঁশের চটা (সলা) দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। এরপর ঘাষ গাছগুলো এতো শক্ত হয়ে যায় যে ইচ্ছা করলেও গরু-ছাগলে নষ্ট করতে পারে না। তবে এই ঘাষের পাতা গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। তার বাড়িতেও ৩ টি গরু আর বেশ কয়েকটি ছাগল রয়েছে। এই বেড়া থেকে যে ঘাষ পান তা দিয়ে তিনি ওই পশুগুলোর খাবার জোগাড় করেন। আর এই ঘাষের বেড়ার কারনে কুল ক্ষেতে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কৃষক সামাউল ইসলাম জানান, প্রথমে ২/১ জন কৃষক জমির আইলে এই ঘাষ রোপন করেছিলেন। এখন অনেক কৃষক এই বেড়া তৈরীতে ঝুকে পড়ছেন। এখন মাঠের পর মাঠ এই ঘাষের বেড়া দেখা যায়। কৃষকরা মনে করেন এটা তাদের উদ্ভাবন, যা দিয়ে ক্ষেত রক্ষার পশাপাশি পশু খাদ্যের চাহিদা পুরন করে যাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো মহাসিন আলী জানান, ঘাষ দিয়ে বেড়া তৈরী করছেন কৃষকরা এটা তারা দেখেছেন। এটা অবশ্যই ভালো একটা কাজ। কৃষক এতে লাভবান হচ্ছেন। ক্ষেতের ফসল রক্ষার পাশাপাশি কৃষকরা জমির আইল থেকে পশুখাদ্য পেয়ে যাচ্ছেন। 


No comments

Powered by Blogger.