স্থাপনের ৫ বছরের মধ্যেই বিএডিসি’র সেচ পাম্প অচল, কৃষকের প্রায় ৫ শত বিঘা জমির ধান চাষ ব্যহত

 

স্টাফ রিপোর্টার-

যান্ত্রিক ক্রটি, নদে পানি না থাকা ও ব্যবস্থাপকের খামখেয়ালীপনার কারনে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মাঠে থাকা বিএডিসি’র সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে গভীর নলকুপ স্থাপনের মাধ্যমে বাস্তবায়নকৃত এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫ শত বিঘা জমিতে সেচ এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যা তিনটি মৌসুম চলার পর বন্ধ হয়ে গেছে। 

কৃষকরা বলছেন, নলকুপ ব্যবস্থাপনা কমিটির ব্যবস্থাপক মোঃ ডিটল চৌধুরীর খামখেয়ালীপনার কারনে তারা ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ব্যবস্থাপক কৃষকের জমিতে প্রয়োজনের সময় পানি দেন না, যখন পাম্প চালানোর প্রয়োজন তখন কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখেন। এতে তাদের জমির ধানের ক্ষতি হয়। যে কারনে তারা ধানের জমিতে ধানের পরিবর্তে অন্য চাষ শুরু করেছেন। অবশ্য ডিটল চৌধুরী এ সকল অভিযোগের বিষয়ে বলেন, একজন মানুষ সকলের কাছে ভালো হতে পারে না। পানির লাইন যাবার সময় বা বিদ্যুতের খুটির গাড়ার সময় যে জমির মালিকদের একটু সমস্যা হয়েছে তারা অভিযোগ করতেই পারেন। তিনি দাবি করেন মূলত ফুটভাল্ব এর সমস্যা থাকায় ও যে স্থান থেকে পানি নেওয়ার কথা সেখানে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকায় পাম্প চালাতে পারেন না। যে কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, তাদের এলাকার মাটি বেলে ও বেলে-দোয়াশ মাটি। এই মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা খুব কম। যে কারনে কৃষকরা ধান চাষ করতে পারেন না। ধানের পরিবর্তে কলা, আখ, পাট, ভুট্টা ইত্যাদি চাষ করে থাকেন। এতে তাদের গ্রামের মানুষের ঘরে খাদ্য সংকট থাকে। আবার কোনো বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে কৃষকরা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হন। এই অবস্থায় তারা গ্রামের মানুষ বিকল্প পথ খুজে বের করা চেষ্টা করেন। তখন তারা খুজে পান গ্রামের পূর্ব দিক থেকে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ এর পানি ব্যবহার করতে পারলে তারা ধান চাষ করতে পারবেন। সেই আলোকে বিএডিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সুন্দরপুর গ্রামে মাঠে কপোতাক্ষ নদের ধারে একটি এল.এল,পি প্রকল্প হাতে নেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নদের ধারে একটি পাম্প স্থাপন করেন। যে পাম্পটি নদ থেকে পানি উঠিয়ে মাঠে সরবরাহ করবে। সেই লক্ষ্যে তাদের গ্রামের ছানার উদ্দিন এর মালিকানাধীন ৮ শতক জমির উপর একটি পাম্প স্থাপনের অনুমতি দেন। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বিএডিসি সেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন। 

বিএডিসি’র কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় কর্মরত ছিলেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, বর্তমানে নড়াইল জেলায় কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানান, প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যায় করে তারা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। ওই স্থানে কপোতাক্ষ নদ থেকে পানি উঠিয়ে মাঠে সরবরাহের জন্য গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে তা চালু করা হয়েছে। এই নলকুপ দিয়ে ৪৫০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা যাবে বলে তিনি জানান। কিন্তু পরবর্তীতে কেন নলকুপটি সেটা বন্ধ আছে তা তিনি বলতে পারেন না। নলকুপটি চালুর পর পরই তিনি ওই স্থান থেকে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যান।

সুন্দরপুর গ্রামের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করে জানান, গভীর নলকুপটি পরিচালনার জন্য একজন ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিয়োগ দেওয়া হয়। ডিটল চৌধুরী নামের ওই ব্যবস্থাপক খুবই খামখেয়ালী ভাবে পাম্পটি পরিচালনা করেন। কৃষকের ক্ষেতে পানি নিজেই ইচ্ছায় দেন। প্রয়োজনের সময় কৃষক ক্ষেতে পানি পান না। যে কারনে কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কৃষক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী জানান, তার ওই পাম্প এলাকায় ৩ বিঘা জমি রয়েছে। যেখানে ধানের চাষ করতেন। এ বছর পানি না পেয়ে ১ বিঘায় আখ করেছেন। অন্য দুইবিঘা স্যালো মেশিনের সাহায্যে ধান চাষ করছেন। তিনি বলেন, নলকুপটি যে স্থানে বসানো হয়েছে সেখান থেকে ক্ষেতে পানি যাবার জন্য পর্যাপ্ত পাইপ লাইন করা হয়নি। যে কারনে অনেক এলাকায় পানি নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে কৃষক সময়মতো পানি পান না। তিনি পাইপ লাইন বৃদ্ধির দাবি করেন। 

ব্যবস্থাপক ডিটল চৌধুরী দাবি করেন, পানি উঠানোর জন্য নলকুপের যে ফুটভাল্ব প্রয়োজন তা দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যা মেরামতের জন্য তিনি যশোর বিএডিসি কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়েছেন। কিন্তু তারা সেটা মেরামত করে দিতে পারেননি। এছাড়া যে স্থান থেকে পাইপের সাহায্যে পানি উঠানো হয় সেখানে বছরের সব সময় পানি থাকে না। এই জন্য ওই স্থানটি খননের প্রয়োজন। এটা নিয়েও তিনি কথা বলেছেন, ১ হাজার ফুট এরিয়া খনন করলে সারা বছর পানি পাওয়া যাবে। তাহলে কৃষকের ইচ্ছা অনুযায়ী পানি দেওয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ রয়েছে। তা সম্বেও পাম্পটি চালু করতে পারছেন না। অন্যরা তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিচ্ছেন সেটা ঠিক নয় বলে দাবি করেন। 

বিএডিসি’র ঝিনাইদহ কার্যালয়ের বর্তমান সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহ্জালাল জানান, পাম্পটি বন্ধ রয়েছে এটা তারা অবগত আছেন। তারা চেষ্টা করছেন দ্রুতই আবার চালুর ব্যবস্থা করবেন। ফুটভাল্ব এর চাহিদা দিয়ে প্রধান কার্যালয়ে লিখেছেন। ইতিমধ্যে খবর পেয়েছেন ফুটভাল্ব চলে আসছে। আর খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ চলছে বলে জানান। আর ব্যবস্থাপকের কর্মকান্ডে কৃষকরা সন্তষ্ট হতে না পারলে তারা চাইলে ওই পদও পরিবর্তন করা যেতে পারে বলে জানান। 


No comments

Powered by Blogger.