ঈদ যাত্রায় বাড়ি পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের বাস দিলো ইবি প্রশাসন

তরিকুল ইসলাম, ইবি প্রতিনিধি:

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি ফিরতে সর্বাধিক সংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করেছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীবান্ধব ইবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য এমন মানবিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সাড়া ফেলায় শিক্ষার্থীদের প্রশংসায় ভাসছে। আগামীকাল ১৬ জুলাই ও ১৮ জুলাই বাসগুলি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাস, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে যাবে।

ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহণ দপ্তরের সূত্রমতে, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম দিন পাঁচটি ও দ্বিতীয় দিন রাজশাহী ও রংপুর রুটে দুইটি বা তিনটি করে বাসের ব্যবস্থা করেছে ইবি প্রশাসন। গত এক সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের ঈদ যাত্রায় নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে মাননীয় উপাচার্য, মাননীয় উপ-উপাচার্য, মাননীয় কোষাধ্যক্ষ এবং প্রক্টর ও পরিবহণ প্রশাসকের কয়েক দফা মিটিং হয়। ক্যাম্পাস ও প¦াশর্^বর্তী এলাকা এবং কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের নিকট অনলাইনে তথ্য চাওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য নিয়ে তালিকা করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, “আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন রুটে শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোট ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলে। সেই তালিকা থেকে মোট ৬৬৪ জন শিক্ষার্থী পরিবহন সেবা পাবেন, নিকটবর্তী জেলার ৮০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

ইবির পরিবহণ অফিসের সূত্রমতে, যেসব রুটে ক্যাম্পাস লেখা আছে সেসব বাস ক্যাম্পাস হতে ছেড়ে যাবে। এই রুটে কেউ পড়ে গেলে ক্যাম্পাস বাস কুষ্টিয়া হয়ে গেলে কাস্টম মোড় এবং ঝিনাইদহ হয়ে গেলে আরাপপুর থেকে বাসে উঠতে পারবেন। 

যেসব রুটে কুষ্টিয়া লেখা আছে সেসব বাস কুষ্টিয়া কাস্টম মোড় এবং যেসব শিডিউলে ঝিনাইদহ লেখা আছে সেসব বাস আরাপপুর থেকে ছেড়ে যাবে। এই রুটে কেউ পড়ে গেলে কাস্টম মোড় এবং আরাপপুরে বাসে উঠতে পারবেন। পাশাপাশি কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাস ঝিনাইদহ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও আরাপপুর থেকে উঠতে পারবেন।

এছাড়াও কোনো শিক্ষার্থী আবেদন থেকে বাদ পড়ে থাকলে পরিচয় পত্র দেখালেই চলবে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রমাণের জন্য যেকোনো ডকুমেন্ট দেখালেই চলবে (যেমন: রেজিস্ট্রেশন কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড, ফি প্রদানের রশিদ ইত্যাদি)।

আগামীকাল (৩নং গাড়ি) যেটি কুষ্টিয়া- বনপাড়া- বঙ্গবন্ধু সেতু- টাঙ্গাইল- ঢাকা রুটে যাবে, সেই গাড়ির যাত্রী যারা ক্যাম্পাসের আশেপাশে অবস্থান করছে, তাদের সকাল ৫ টার মধ্যে ক্যাম্পাস গেটে উপস্থিত হওয়া করা অনুরোধ রইলো। আপনাদের এই গাড়ি যেহেতু কুষ্টিয়া থেকে যাত্রা শুরু করবে তাই প্রশাসন কুষ্টিয়া প্রর্যন্ত যাওয়ার জন্য মাইক্রোর ব্যবস্থা রেখেছে।

যেসব রুটে বাস পরিচালনা করা হবে: 

প্রথম দিন - ১৬ জুলাই: 

ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩টি বাস -

১. ক্যাম্পাস- ঝিনাইদহ- রাজবাড়ীর মোড়- দৌলতদিয়া ঘাট- মানিকগঞ্জ- ঢাকা। ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা ঝিনাইদহ বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

২. ক্যাম্পাস- কুষ্টিয়া- রাজবাড়ী- মানিকগঞ্জ- ঢাকা। ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা ক্যাম্পাস বা এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

৩. কুষ্টিয়া- বনপাড়া- বঙ্গবন্ধু সেতু- টাঙ্গাইল- ঢাকা। ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা কুষ্টিয়া বা এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২টি বাস -

১. ক্যাম্পাস- ঝিনাইদহ- যশোর- খুলনা। যশোর, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের কোন কোন জেলার শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা ক্যাম্পাস ও ঝিনাইদহ বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

২. কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ- যশোর- খুলনা। যশোর, খুলনা ও এর পার্শ্ববর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা কুষ্টিয়া ও ক্যাম্পাস বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

দ্বিতীয় দিন - ১৮ জুলাই: 

রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২/৩টি বাস -

ক্যাম্পাস- কুষ্টিয়া- নাটোর- রাজশাহী। রাজশাহী বা এর পার্শ্ববর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা ক্যাম্পাস, ঝিনাইদহ, ক্যাম্পাস ও কুষ্টিয়া বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২/৩টি বাস -

ক্যাম্পাস- কুষ্টিয়া- নাটোর- বগুড়া- রংপুর। বগুড়া ও রংপুর বা এর পার্শ্ববর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা যাবে, যারা ক্যাম্পাস, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।

তবে প্রথম দিনের বাসগুলি দূরবর্তী বিভাগ বরিশাল, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা পর্যন্ত চেয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ইবিস্থ কিশোরগঞ্জ জেলার ওবায়দুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “জোর দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে, ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাস চাই। ময়মনসিংহ বিভাগে বাস দেওয়ার মত পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী আছে। তাই ভেবে দেখার বিনীত অনুরোধ রইলো প্রশাসনের প্রতি।” 

বরিশালের ২০ জনের অধিক ছাত্র আছেন যারা বাড়ি ফিরার অপেক্ষায় উল্লেখ করে সাবেক ইবিস্থ বরিশাল বিভাগ ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাবেক সেক্রেটারী রাকিবুল ইসলাম জানান, “শুনেছি, বরিশাল এর ছেলেদেরকে ফরিদপুর এর বাসে যেতে বলেছে, কিন্তু যে বাস ফরিদপুর যেতে পারবে সে বাস বরিশাল যেতে অসুবিধে কোথায়? ঢাকা রুটের ১ নং বাসটি বরিশাল পর্যন্ত দেওয়া উচিত ছিলো। বরিশাল এর জন্য প্রয়োজন একটি ছোট বাস এর ব্যবস্থা করতো। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে মহতী এই উদ্যোগে যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

উল্লেখ্য, ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনে বিভাগীয় শহরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে গত ৭ জুলাই মাননীয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি সম্মানিত পরিবহন প্রশাসক ও প্রক্টর মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হয়। মাননীয় ভিসি ও প্রো-ভিসির মহোদয় বিষয়টি অনেক পজিটিভলি গ্রহণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনাপূর্বক এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি এমন শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে যে সকল সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা ্এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। সকলের ঈদ যাত্রা নিরাপদ হোক সেই প্রত্যাশা রইল।”


No comments

Powered by Blogger.