করোনা মোকাবেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন চেয়ারম্যান

চিত্রা নিউজ ডেস্ক-

ঠান্ডা, জ¦র আর কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে ঝিনাইদহের মানুষ। করোনার উপসর্গ নিয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। কখনও ভয়ে, আবার কখনও সুযোগের অভাবে তারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।   

এমন পরিস্তিতিতে নিজ ইউনিয়নকে ঝুকিমুক্ত রাখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেই নমুনা সংগ্রহ করছেন ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় তিনদিন প্রশিক্ষন নিয়ে নিজ হাতে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। ১৫ জুলাই থেকে নিজ ইউনিয়নে নেমে পড়েছেন। প্রথমদিনে বাড়িতে গিয়ে ৭ জনের আর পরিষদ ভবনে আসা ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এ পর্যন্ত ১২ দিনে ৫ দফায় তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ১০৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। 

হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের মৃত আবু ইস্কান্দার বাবু এর পুত্র আব্দুল্লাহ আল মাসুম (৩৮)। তারা দুই ভাই, ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যবসায়ী। মা জাহানারা খাতুন, স্ত্রী ইলা বাবু, একমাত্র পুত্র নোমান বাবুকে নিয়ে তার সংসার। তিনি হরিশংকরপুর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাশ করে মাগুরা সরকারি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করে যশোর এম.এম কলেজে অনার্স করেন। ২০০৪ সালে তিনি বিমানের জুনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৬ সালে সেই চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর ২০০৯ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলস কেয়ার প্রভাইডার) হিসেবে যোহদান করেন। ২০১৬ সালের ৭ মে নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পূর্বে তিনি সিএইচসিপি পদের চাকুরিটিও ছেড়ে দেন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানের পাশাপাশি ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্যে দায়িত্ব পালন করছেন। 

চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নে ২২ টি গ্রামে আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। যারা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। এরপর জুলাই মাসে ঠান্ডা, কাশি আর জ¦রের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই সময়ে তার ইউনিয়নে বেশ কয়েকজেনর শরীরে করোনা পজেটিভ এসেছে, আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে একজন। তিনি আরো জানান, নিজে গত এক সপ্তাহ পূর্বে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে ঠান্ডা-জ¦রের ঔষধ খেয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এই অবস্থায় সংক্রমন গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।   

চেয়ারম্যান মাসুম জানান, তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা নেওয়া এই মুহুর্তে সম্ভব নয়। তখন নিজেই বাড়ি বাড়ি যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক এর নিকট একটি আবেদন করেন। ১০ জুলাই তত্বাবধায়ক ডাক্তার মোঃ হারুন-অর রশীদ প্রশিক্ষনের অনুমিত দেন। অনুমতি পেয়ে ওই দিন থেকেই হাসপাতালে প্রশিক্ষন শুরু করেন। তার সঙ্গে নেন ইউনিয়নের ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শাহিন কবির ও আরেক কর্মী আরিফুর রহমান সিকদার। তারা ১০, ১১ ও ১২ জুলাই প্রশিক্ষণ নেন, ১৩ ও ১৪ জুলাই অন্যের সহযোগিতা ছাড়াই নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার নিজ এলাকায় নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন। প্রথম দিনেই ১২ জনের নমুনা নিয়েছেন। এভাবে প্রতিদিনই সকাল ১০ টা থেকে তার এই কাজ শুরু হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, দায়বদ্ধতা থেকে নয়, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকে এই কাজ শুরু করেছেন। গত ১২ দিনে তারা ৫ দফায় ১০৮ জনের নমুনা নিয়েছেন। যার মধ্যে এক পরিবারে ৪ জন আক্রান্ত রোগিও রয়েছেন। কোদালিয়া গ্রামের কামরুল ইসলামের বাড়িতে নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর চার জনের শরীরে করোনা পজেটিভ আসে।   

সরেজমিনে দেখা যায় হরিশংকরপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কাজী আফরোজ এর বাড়িতে তার স্ত্রী আয়েশা বেগমের নমুনা সংগ্রহ করছেন। আয়েশা বেগম জানান, ১২ দিন জ¦র আর ঠান্ডা নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা হচ্ছেন। এই অবস্থায় আনুমানিক ২২ কিলোমিটার দুরে হাসপাতালে যাওয়া খুবই কষ্টকর। তাই করোনা পরীক্ষা করাননি। চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে পরীক্ষা করছে এতে তিনি খুশি। নরহরিদ্রা গ্রামের রাজিন্দ্রনাথ বিশ^াস (৪৪) জানান, দুই সপ্তাহ পূর্বে থেকে ঠান্ডা, জ¦র আর কাশির সমস্যা। চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে নমুনা নেওয়ায় তিনি সহজেই করোনা পরীক্ষা করাতে পেরেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এসেছিলেন হরিশংকরপুর গ্রামের নাসির মন্ডল (৫৫)। তিনি স্ত্রী নাজমা খাতুন ও মা মাজেদা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে পরিষদে এসে নমুনা দিয়েছেন। 

ইউনিয়নের পানামী গ্রামের ইউপি সদস্য রওশন আলী জানান, তার গ্রামে ২৪ শত মানুষের বসবাস। তার মধ্যে ১ হাজারের অধিক মানুষের ঠান্ডা, কাশি, জ¦র হয়েছে। করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন সর্বচ্চো ৫০ জন। এখন চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। রাজধরপুর গ্রামের মোদাচ্ছের হোসেন জানান, তার গ্রামে ১৬ শত মানুষ বসবাস করেন। যার মধ্যে আনুমানিক ৪ শত মানুষের শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা গিয়েছিল, কিন্তু পরীক্ষা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ জনের। এখন চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগে অনেকে পরীক্ষা করছেন।       

এ বিষয়ে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউছুফ আলী জানান, উদ্যোগটি খুবই ভালো। তার এই উদ্যোগে স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা থাকলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ শামিম কবির জানান, চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগের কথা তাকে জানালে তিনি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের জন্য কিছু সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আশা করছেন তার এই উদ্যোগ ফলপ্রসু হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও তার এলাকায় নমুনা সংগ্রহের ক্যাম্প করা হবে বলে তিনি জানান।


No comments

Powered by Blogger.