দূর্যেগ সহনীয় ঘর নির্মানে দূর্যোগ কাটছে না, দুই বছরেও শেষ হচেছ না কাজ

 

ঝিনাইদহ প্রতিনধি-

রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকু (৫৫) আশা করেছিলেন সরকারের দেওয়া ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। মাথা গোজার একটা ঠাই হবে তার। সরকারের পক্ষ থেকেও রাকু’র জমিতে ঘর নির্মান শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু গত দুই বছরেও সেই ঘর নির্মান শেষ হয়নি। এখনও তাকে ঘরটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। রাকু’র নিজের কোনো ঘর না থাকায় অন্যের ঘরে থাকতে হচ্ছে। 

রাকু’র দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের হাতে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে এই ঘর বরাদ্ধ নিয়েছেন, এখন আরো ২৫ হাজার দাবি করা হচ্ছে। এই টাকা দিতে না পারায় ঘরের বাকি কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যা তিনি ইতিমধ্যে লিখিত ভাবে প্রশাসনে অভিযোগ দিয়েছেন। অবশ্য চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন রাকু মিথ্যা বলছে। ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। তাছাড়া তিনি কোনো টাকা নেননি, শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় কাজটি শেষ করতে দেরি হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অল্পদিনের মধ্যে কাজটি শেষ করবেন। 

রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকু ঝিনাইদহ শৈলকুপার বড়বাড়ি-বগুড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ এর পুত্র। তারা ৫ ভাই, রাকু তাদের মধ্যে দ্বিতীয়। রাকু জানান, নিজের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই, অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে কোনো মতে সংসার চালান। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নিয়ে ৫ জনের সংসার তার। নিজে যা আয় করেন তা দিয়ে আজো একটা বাড়ি করতে পারেননি। বাবা’র নিকট থেকে ৪ শতক জমি পেয়েছেন, সেখানে ঘর করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু অর্থের অভাবে এতোদিন সম্ভব হয়নি। তাই বড় ভাই রফিকুল ইসলামের রেখে যাওয়া একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন। ভাই রফিকুল থাকেন শৈলকুপা শহরে। 

রাকিবুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি জানতে পারেন সরকার থেকে তিন লাখ টাকা ব্যায়ে ঘর দেওয়া হচ্ছে। এই খবর পেয়ে তিনি স্থানীয় বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছে যান। তিনি একটি ঘর দাবি করেন। এরপর ২০২০ সালের প্রথম দিকে তার ঘর নির্মান কাজ শুরু হয়। চেয়ারম্যান নিজে প্রকল্পের সভাপতি হয়ে ঘর নির্মান শুরু করেন। কিন্তু শেষ না করে ফেলে রেখেছেন। ঘরের মেঝে করা হয়নি, পেছনের রান্নাঘর ও বাথরুম এর কাজ বাকি রয়েছে। এগুলো না করায় তিনি ঘরে উঠতে পারছেন না, তাকেও ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। রাকু জানান, ঘর বুঝিয়ে না দিলেও এবং নির্মান কাজ শেষ না করলেও তিনি বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে ওই ঘরের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে ঘুমান। আশায় আছেন নির্মান কাজ শেষ হবে, তিনি শান্তিতে এই ঘরে রাত কাটাবেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই ঘর নেওয়ার সময় তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। তিনি ২৫ হাজার টাকা দেন, বাকি টাকা না দেওয়ায় নির্মান বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা টিটো মিয়া জানান. দূর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মানে দূর্যোগই কাটছে না। কখনও টাকা চাওয়া হচ্ছে, আবার কখনও রাস্তা খারাপের অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। এতে করে গৃহহীন মানুষটির সরকারি ঘরে ঘুমানোর আশা আশায় থেকে যাচ্ছে।   

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সরকারী প্রকৌশলী মলয় কুমার জানান, ২০২০ সালের শুরুতে ঘর নির্মান শুরু করা হয়েছিল। বগুড়া ইউনিয়নে দুইটি ঘর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে শেষ হওয়ার কথাছিল। কিন্তু এখনও শেষ করতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে বার বার তাগাদা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে তিনি দ্রুত কাজটি যাতে শেষ হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। 

চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, রাকিবুল ইসলাম রাকু হতদরিদ্র হওয়ায় তিনি ঘর বরাদ্ধে তার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এখানে টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইউনিয়নে একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছেন, তারাই লোকজন দিয়ে এই সব মিত্যা অভিযোগ করাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন রাকু এতোগুলো টাকা দেওয়ার ক্ষমতাই রাখেন না। চেয়ারম্যান আরো জানান, যে স্থানে ঘরটি হচ্ছে সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি খুব খারাপ। তাই বর্ষা মৌসুমে কাজটি শেষ করতে পারেনি। দ্রুতই শেষ করে দেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

No comments

Powered by Blogger.