ভিয়েতনামী নারিকেল বাগান করে স্বপ্নভঙ্গ ঝিনাইদহের শতাধিক কৃষকের

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

ভিয়েনামী নারিকেল বাগান করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ঝিনাইদহের শতাধিক  কৃষক। ৩ বছরের মধ্য ফল ধরবে কৃষি বিভাগ থেকে এমন আশা দিলেও ৫ বছরেও ফল ধরেনি।  টাকা খরচ করে বাগান করে কোন ফল না ধরায় গাছ কেটে ফেলেছেন অনেকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে,  জেলার ৬ উপজেলায় ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ রয়েছে প্রায় ২১’শ আর বাগানী ও কৃষক রয়েছে শতাধিক। এখন পর্যন্ত শতাধিক কৃষকের কেউই তেমন ফল পাননি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বছরের পর বছর ফল না আসায় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে বাগানী ও কৃষকেরা।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রবাসি শরিফুল  জানান, সৌদিতে থাকা অবস্থায় তিনি টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে  ভিয়েনামি নারিকেল নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৬০০ টাকা দরে ৪০টি ভিয়েতনামি নারিকেল চারা লাগান। ৪ বছরেও গাছে নারিকেল না আসায় এবং অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তিনি আবারও বিদেশ চলে গেছেন। কিন্তু তার বাগান এখনও তেমনই রয়েছে।

সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের মকলেচুর রহমান জাহিদ জোয়ার্দ্দার জানান, তিনি ঝিনাইদহ হর্টিলাচারের একটি প্রদর্শনী প্লটের আওতায় ৪০টি ভিয়েতনামি নারিকেলের গাছ লাগিয়েছেন। ৫ বছরে দুই-চারটি গাছে চোমর বের হলেও নারিকেল দাঁড়ায়নি কোনো গাছে। হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধানে পরিচর্যা করা হলেও গাছে নারিকেল না আসায় চরম ক্ষুব্ধ তিনি। তিনি বলেন, যখন আমাকে প্রজেক্টটি দেয়া হয় তখন কোটি টাকার স্বপ্ন দেখানো হয় অথচ গাছে নারিকেল না আসায় এখন খোঁজ নেননা কেউ।

কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আশরাফ হোসেন স্বপন, শিবনগরের সুরত আলী গাছে নারিকেল না আসায় গাছ কেটে ফেলেছেন। তবে একই উপজেলার ঘিঘাটি গ্রামের খলিলুর রহমানের একটি গাছে ৩০-৩৫টি নারিকেল ধরলেও পরিনত হতে হতে নারিকেল ফেটে যাচ্ছে। এছাড়া নারিকেলগুলো আকারে বেশ ছোট।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজগর আলী বলেন, ভিয়েতনামী নারিকেল বাগান করতে প্রচুর পরিচর্যা করতে হয়। কৃষক ভাইয়েরা নিয়মিত পরিচর্যা করেন না বলে ফলন পাচ্ছেন না।

বারি’র সাবেক মহা পরিচালক ও নারকেল বিশেষজ্ঞা ড. নাজিউল ইসলাম বলেন, ভিযেতনামী নারকেল গাছের জন্য সর্বক্ষণ বাতাসের গতিবেগ থাকতে হবে ১৫-২০ কিলোমিটার। বাগানে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর কমপক্ষে ৩ মিটারের নিচে থাকবে না। দিন রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকবে না। সমুদ্র উপকুলীয় দেশ গুলোতে এ প্রজাতির নারকেল চাষের জন্য অনুকুল আবহাওয়া থাকে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ভিয়েতনামী নারকেল চাষের অনুকুল নয়। লাগানোর দু’আড়াই বছর পর ফল ধরে। কিন্তু ৭ বছর পর ফল ধরে না। গাছের জীবন কাল ১০ বছর। যারা বাগান করেছে, তারা ভুল করেছে বলে তিনি জানান।


No comments

Powered by Blogger.