নির্মানের ১৫ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গেচুরে গেছে ডাকবাংলা-কালীগঞ্জ সড়ক, মেরামতের দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের থাকলেও উদ্যোগ নেই

 চিত্র নিউজ ডেস্ক-

প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যায়ে ২৩ কিলোমিটার সড়কের সংষ্কার হাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৫ মাস। এরই মধ্যে সড়কটির অসংখ্য স্থান ভেঙ্গেচুরে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা-কালীগঞ্জ বাজার ভায়া বাজারগোপালপুর সড়টির অনেক স্থান থেকে পিচ-পাথর উঠে গেছে। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই সড়কে যানবাহন ও পথচারী চলাচল দায় হয়ে যায়। 

অথচ সড়ক বিভাগ বলছে সংষ্কার কাজ শেষ হওয়ার পর ৩ বছর ওই সড়কের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। তাই ভেঙ্গেচুরে যাওয়া স্থানগুলো তাকেই মেরামত কওে দিতে হবে। প্রসঙ্গত, সড়কটি নির্মানের সময়ও একদফা পিচ উঠে যায়। ২৩ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ হতে না হতেই চাক চাক হয়ে পিচ-পাথর উঠে গিয়েছিল। যা নিয়ে সে সময় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। একাধিক বিশেষজ্ঞ দল এসে বিষয়টির তদন্ত করেন। কাজটিও বন্ধ হয়ে যায়, পরে শুরু হয়ে শেষ হয়। 

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহর থেকে গান্নাবাজার, গোপালপুর হয়ে ডাকবাংলা বাজার পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক সংষ্কার কাজ করেন ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ জন্য ২০ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯১ টাকা চুক্তি হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কাজটি পান খুলনার মোজাহার এন্টার প্রাইজ (প্রাঃ) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান। কাজ করেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম। ২০১৯ সালে শুরুর দিকে কাজ শুরু করে ২০২০ সালের ২৭ মে শেষ করা হয়। সড়কটি বর্তমানে একটি ব্যস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে। যশোর থেকে ঝিনাইদহ হয়ে যে যানবাহনগুলো চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর যেয়ে থাকে সেগুলো বর্তমানে এই সড়কটি ব্যবহার করছে। 

সরেজমিনে ওই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সড়কটির পূর্ব প্রান্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সংযোগ স্থান কালীগঞ্জের নিমতলা বাসষ্টান্ড থেকেই ভাঙ্গতে শুরু করেছে। নিমতলা থেকে আলাইপুর পর্যন্ত একাধিক স্থানে ভেঙ্গে গেছে। গোটা সড়কের ২৩ কিলোমিটারে কমপক্ষে ২০ স্থানে এই ভাঙ্গন রয়েছে। যার মধ্যে নিমতলা, শ্রীরামপুর, আলাইপুর এলাকায় বড় বড় ভাঙ্গ রয়েছে। এই ভাঙ্গন গত ৬ মাস পূর্বে থেকে শুরু হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ওই সড়কে কথা হয় ইজিবাইক চালক আলম হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, অনেক দিন পর অনেক টাকা ব্যায় করে সরকার একটি সড়ক নির্মান করলো। কিন্তু কাজটি নি¤œমানের হওয়ায় অল্পদিনেই তা নষ্ট হয়ে গেল। ভ্যান চালক মনিরুল ইসলাম জানান, সড়কটি সংষ্কারের পর ব্যাস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে। খুলনা, যশোর থেকে যে গাড়িগুলো ঝিনাইদহ হয়ে ডাকবাংলা বাজারের উপর দিয়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে যায় সেগুলো এখন এই সড়কের নিমতলা থেকে গোপালপুর হয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে সড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে। সড়কটি দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের সকলের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। সড়কে চলাচলে ভাঙ্গা স্থানগুলোতে তাদের ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। 

সড়কের পাশের বাসিন্দা শ্রীরামপুর গ্রামের ঝুমুর আলী জানান, সড়কটির কাজ শুরু থেকেই নি¤œমানের হয়েছে। শুরুর সময়ই একদফা পিচ পাথর উঠে যায়। যা মিডিয়াতে প্রচারের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে সেই সব স্থান মেরামতের সুযোগ দিয়ে কাজটি শেষ করেন। সে সময় ওই পিচ-পাথর তুলে ভালোভাবে আবার করা হলে আজকের এই অবস্থা হতো না। সেই সময়ে যে স্থানগুলোতে পিচ-পাথর উঠে গিয়েছিল, সেই স্থানগুলো ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। অনেক স্থান পিচ-পাথর এখনও জমাট বেঁধে উচু হয়ে আছে। গত ৬ মাস পূর্বে থেকেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। 

সড়ক বিভাগের একটি সুত্র বলছে, পিএমপি (প্রিয়ডিক মেন্টেনেস প্রোগ্রাম) প্রকল্পের কাজে তিন বছর পর্যন্ত দায়িত্ব থাকে ঠিকাদারের উপর। এই সময়কালে সড়কের কোনো ক্ষতি হলে ভেঙ্গেচুরে গেলে তা মেরামত ঠিকাদারকেই করে দিতে হয়। এই কাজের ক্ষেত্রে সেটাই হবে। এখনও দেড় বছর ঠিকাদারকে রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে। ফলে ভেঙ্গে যাওয়া স্থানগুলো ঠিকাদারকেই মেরামত করতে হবে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম জানান, সড়কটির কয়েকটি স্থানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যা দ্রুতই সড়কটি মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান। 

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি) মুকুল জ্যোতি বসু জানান, ঠিকাদকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি দ্রুত মেরামত করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।


No comments

Powered by Blogger.