ইসলাম পর্দা পালনের ব্যাপারে কী বলে

 

চিত্রা নিউজ ডেস্ক-

ইসলাম বিশ্বজনীন একচিরন্তন শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিজাব পরিধান করা ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান যদি কেউ বিধানের অমান্য করে তবে অবশ্যই তাকে পরকালের জবাবদিহির পাশাপাশি শাস্তি ভোগ করতে হবে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকের অনেক স্থানে পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন

মূলত হিজাব বা পর্দা নারীর সৌন্দর্য মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ কার্যকর উপায়

বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, বিধান তোমাদের তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব: ৫৩)

ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি

বরং তাদের পবিত্রতা সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব: ৩৩)

জন্য পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে উম্মতের নারীদের জন্য অনেক বড় ইহসান। বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল

পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাবলীর মতো সুস্পষ্ট এক ফরয বিধান

আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। বিধান তোমাদের তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ (সূরা আহযাব: ৫৩)

বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকাই ঈমানের দাবি। বিধানকে হালকা মনে করা কিংবা বিধানকে অমান্য করার কোনো অবকাশ নেই। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানের বিরোধিতা করার অধিকার কারো নেই

প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা কোনো মুমিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট। (সূরা আহযাব: ৩৬)

পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের  উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব: ৫৯)

আয়াতে পর্দার সঙ্গে চলাফেরা করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে যে, পর্দার সহিত চলাফেরা করলে সবাই বুঝতে পারবে তারা শরীফ চরিত্রবতী নারী। ফলে পর্দানশীন নারীদেরকে কেউ উত্যক্ত করার সাহস করবে না

হাদীস শরীফেও পর্দার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (.) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, একদা তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তারা চুপ হয়ে গেলেন।  (কেউ বলতে পারলেন না)

অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তিনি বললেন, কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে) তারপর আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে) (মুসনাদুল বাযযার: ৫২৬)

এতে পর্দার গুরুত্ব পরিস্ফূটিত হয়। আর পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই। এছাড়াও পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় সম্মানিত হতে পারে

পর্দাহীনতার কারণে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, অপকর্ম ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট পাপের সূচনা হয়। যার কারণে ইভটিজিং, ধর্ষণ যৌন সন্ত্রাস প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে নানা অঘটনসহ ব্যক্তি পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়

মূলত পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের  স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রসূলুল্লাহ (রা.) তাদেরকে লানত দিয়েছেন। প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) লানত (অভিশাপ) দিয়েছেন সেসব নারীদেরকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। অর্থাৎ পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৭)

এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে আল্লাহর বিধানকে অমান্য করা হয়। আর অবাধ্যতার কারণে আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি

প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে আমি দেখিনি (অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে তাদের দেখা যাবে) এক. এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, আর সেই চাবুক দিয়ে তারা (অন্যায়ভাবে) মানুষকে প্রহার করবে

দুই. এমন নারী, যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও নগ্ন। তারা অন্যদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। (মুসলিম: ৫৪৪৫)

হাদীসে মূলত পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত করেই বলা হয়েছে যে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না

 

No comments

Powered by Blogger.