ভাঙ্গাচুরা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সড়ক বিভাগের, সংষ্কার কাজের ৫ দিনের মধ্যেই ভেঙ্গেচুরে সড়ক নষ্ট

 স্টাফ রিপোর্টার-

ভাঙ্গাচুরা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সড়ক বিভাগের। কখনও ৫ দিনের মধ্যে আবার কখনও সামনের অংশ কাজ চলমান অবস্থায় পেছনের অংশ ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। নতুন সংষ্কার তবুও দিতে হচ্ছে জোড়াতালি। ক্ষত স্থানগুলো মেরামত করার পর দেখলেই মনে হচ্ছে সড়কে পটি দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা ঝিনাইদহের সড়ক বিভাগের আঞ্চলিক মহাসড়কের। সর্বশেষ গত রবিবার শেষ হয়েছে জেলার কালীগঞ্জ-জীবননগর ভায়া খালিশপুর সড়ক উন্নয়নের কাজ। যার অনেক স্থানে ইতিমধ্যে ভেঙ্গেচুরে গেছে। 

সড়ক বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, সড়কটিতে ওয়্যারিংকোর্স (অভারলে) কাজ করা হয়েছে। ৪০ মিলি পিচপাথর দিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছে। গত ১০ পেপ্টেম্বর শনিবার কাজ শেষ করে ঠিকাদার তার যন্ত্রপাতি আর মালামাল ফেরত নিয়ে গেছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকেই সড়কটি ভাঙ্গতে শুরু করেছে, ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থানে পিচ-পাথর উঠে গেছে। ঠিকাদার বলছেন তারা দ্রুত মেরামত করে দেবেন। 

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের মেইন বাসষ্টান্ড হতে একটি সড়ক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে মিলেছে। এটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই সড়ক দিয়েই যশোর-চুয়াডাঙ্গার যোগাযোগ চলে। এই সড়কের ঝিনাইদহ অংশে ১৫ কিলোমিটার আর চুয়াডাঙ্গা অংশে ১০ কিলোমিটার ওয়্যারিংকোর্স (অভারলে) করার সিদ্ধান্ত নেন সড়ক বিভাগ। ৪০ মিলি কার্পেটিং করার কথা। পাশাপাশি সড়কে রং এর কাজ, পাশে পিলার গাড়া ও মাটির কাজ রয়েছে। এর জন্য ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বরাদ্ধের পর দরপত্র গ্রহন সহ অন্যান্য কাজ শেষ করেছেন কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে কাজটি পান মেহেরপুর জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সস জহিরুল লিমিটেড। কাজ করছেন চুয়াডাঙ্গার রনজু আহম্মেদ। তিনি দাবি করেছেন জহিরুল ইসলামের লাইসেন্স তিনি ব্যবহার করছেন। 

এদিকে গত আগষ্ট মাসের শেষ দিকে ঝিনাইদহ অংশের কার্পেটিং কাজ শুরু হয়। পেভার মেশিনে কাজ করায় দ্রুত শেষ হয়েছে। চলতি মাসের গত শনিবার কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। এখন পাশের মাটির কাজ, পিলার বসানো ও রং এর কাজ বাকি রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ দিন পূর্বে শেষ করা কার্পেটিং উঠতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সড়কে গিয়ে দেখা যায় অনেক স্থানেই কার্পেটিং ফেটে গেছে। তবে কাশিপুর, ঈশ^রবা, পাতিবিলা এলাকার অনেক স্থানে পিচপাথর উঠে যেগে। ঈশ^রবা এলাকার বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, পাঁয়ের আঙ্গুল দিয়ে নাড়া দিলেই পাথর উঠে যাচ্ছে। আরেক বাসিন্দা আজিজুর রহমান জানান, ২ দিন ভালো ছিল উন্নয়ন কাজ। তারপর দিন থেকেই উঠতে শুরু করেছে। পাতিবিলা এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, কাজে মানসম্পন্ন পিচ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ভালোভাবে জ¦ালানোর কাজটিও করা হয়নি, যে কারনে কাজ শেষ হতে না হতেই পিচপাথর উঠে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এই স্থানগুলো এখন মেরামত করলেও সেটা তবে তালিপটি মারা। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। 

এ বিষয়ে ঠিকাদার রনজু আহম্মেদ জানান, কাজটি তিনি খারাপ করেননি। যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু পেভার মেশিনের কাজ হওয়ায় কয়েকটি স্থানে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। খারাপ হয়ে যাওয়া স্থানগুলোতে পেভার মেশিনের তেল পড়েছিল। তেল পড়া জায়গায় পিচ ধরেনি, যে কারনে উঠে যাচ্ছে। তবে ২/১ দিনের মধ্যে মেরামত করে দেবেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, কাজটি তিন বছর দেখাশুনা তাকে করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে নষ্ট হলেই মেরামত করতে হবে। বিধায় কাজ খারাপ করার সুযোগ নেই।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি) মুকুল জ্যোতি বসু জানান, কয়েকটি স্থানে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। তিনি মেরামত করবেন বলে জানিয়েছেন। 

 প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা থেকে ডাকবাংলা ভায়া গোপালপুর ২৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজের মাত্র ৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ হতে না হতেই চাক চাক হয়ে পিচ-পাথর উঠে গিয়েছিল। দেড় বছর পূর্বে শেষ হওয়া এই কাজের জন্য ২০ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯১ টাকা চুক্তি ছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলনার মোজাহার এন্টার প্রাইজ (প্রাঃ) লিমিটেড এর সঙ্গে। কাজটি করেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম। যা নিয়ে সে সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি হলে তোলপাড় হয়েছিল। একাধিক বিশেষজ্ঞ দল এসে বিষয়টির তদন্ত করেন। কাজটিও বন্ধ হয়ে যায়, পরে শুরু হয়ে শেষ করা হয়। 


No comments

Powered by Blogger.