আম্পান ঝঁড়ের ক্ষত এখনও বয়ে চলছে বৈঁচিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উড়ে যাওয়া টিনের চাল মেরামত করতে না পেরে পড়েছে শ্রেণীকক্ষ সংকটে, ৪ শত শিক্ষার্থীর ক্লাস চলছে ৫ টি কক্ষে
আম্পান ঝড়ে হওয়া ক্ষত আজো বয়ে চলেছেন বৈঁচিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠানটির সেমিপাঁকা ভবনটির ছয়টি কক্ষের টিন উড়ে গিয়েছিল ওই ঝড়ে। কর্তৃপক্ষ অনেক কষ্টে চারটি কক্ষ মেরামত করতে পেরেছেন, আর্থিক কারনে বাকি দুইটি কক্ষ এখনও মেরামত করতে পারেননি। প্রায় ৪ শত শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ক্লাস চলছে কষ্ট করেই। এই অবস্থা ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌর এলাকার বৈঁচিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
শিক্ষকরা বলছেন, ৫৫ বছরের এই প্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত সরকারি ভাবে তিনকক্ষের একটি ভবন নির্মান হয়েছে। স্থানীয় ভাবে তৈরী করা সেমিপাকা ঘরেই চলছে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম। তাদের ভাষায়, বতর্মানে তারা ছোট ছোট তিনটি কক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, মহেশপুর উপজেলার মহেশপুর পৌরসভা এলাকার বৈঁচিতলা গ্রামে ৪ একর জমির উপর ১৯৬৮ সালে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী কিছু ব্যক্তি এলাকার ছেলে-মেয়ের শিক্ষার কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। আজো প্রতিষ্ঠানটি এলাকার শিক্ষা বিস্তার করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মহেশপুর-বেগমপুর সড়কের ধার ঘেষে বিশাল এলাকা জুড়ে বৈঁচিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে ক্লাস চলছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিন পাশের ছাদের ভবনটির তিনটি কক্ষের একটি শিক্ষক মিলনায়তন, বাকি দুইটিতে ক্লাস চলছে। আর উত্তর পাশের টিনসেড ভবনের ৬ টি কক্ষের তিনটিতে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বাকি তিনটি কক্ষের একটিতে প্রধান শিক্ষক অপর দুইটির চাল শুন্য অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন ১০ জন, আর কর্মচারি ১ জন। শিক্ষক ও কর্মচারি সংকট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। কর্মচারি নিয়োগের পক্রিয়া চলছে, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন বলে জানান শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ওয়ায়েজ উদ্দিন জানান, তাদের এই প্রতিষ্ঠাটি অনেক পুরানো। তাছাড়া মহেশপুর পৌরসভা এলাকায় বালক-বালিকা মিলিয়ে ৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে বৈঁচিতলা একটি। তারা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের পাঠদান করে আসছেন। সব সময় তাদের শ্রেণীকক্ষ সংকট রয়েছে। এই অবস্থায় ২০২০ সালে সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর তিনকক্ষের একটি একতলা ভবন তৈরী করে দেন। আর তারা নিজেরা জোড়াতালি দিয়ে ছয়টি কক্ষের একটি টিনসেড ঘরে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। যা কখনও ভেঙ্গে পড়ে, কখনও মেরামত হয়। এভাবে কষ্ট করেই চালাতে থাকেন প্রতিষ্ঠানটি।
এই অবস্থায় ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান ঝড়ে ছয় কক্ষের টিনসেডের ওই ঘরটির সম্পূর্ণ চাল উড়ে যায়। ঘরের টিনগুলো গাছের ডালে পাশে ক্ষেতের মধ্যে পড়ে ছিল। যা ভেঙ্গেচুরে নষ্ট হয়ে গেছে। এই অবস্থায় তারা প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান উপযোগি করতে ৩ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে চারটি কক্ষ মেরামত করে নিয়েছেন। উপরে টিন দিয়ে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে। এই কাজে শিক্ষকরা, প্রতিষ্ঠানের পুরাতন ছাত্ররা টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তাদের হাতে আর কোনো টাকা নেই। তাই বাকি দুইটি কক্ষ মেরামত করতে পারছেন না। দুই কক্ষ মেরামত করতে প্রায় ২ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানান। যা বিদ্যালয়টির পক্ষে জোগাড় করা কোনো ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।
মহেশপুর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বৈঁচিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ওয়ায়েজ উদ্দিন আরো জানান, ছেলে-মেয়েদের এই কষ্টের কথা চিন্তা করে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার আবেদন দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন আর আপাতত পাঠদানের জন্য ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ভবনটি মেরামতের। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এই অবস্থায় আর চলতে পারছেন না বলে জানান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি অল্পদিন হলো সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়ে ঘরের এই অবস্থার বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থেও বিষয়টি অবহিত করেছেন। মুলত টাকা না থাকায় আম্পানে উড়ে যাওয়া টিনের চাল মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিভাবে এই ভবনটি মেরামত করা যায়। কোমলমতি বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে সরকারের বিভিন্ন যোগাযোগ করছেন।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র পাল জানান, তিনি অল্পদিন হলো এই উপজেলায় যোগদান করেছেন। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ ভবন এখনও ভালো হয়নি বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
.jpg)
.jpg)
No comments