চিত্রা নদীর মধ্যে প্রভাবশালীর পুকুর, পাল্টে দিয়েছে পানির গতিপথ

চিত্রা নিউজ ডেস্ক-

অনেকটা গর্ব করেই পুটু মিয়া বললেন ৩০ বছরের অধিক সময় পুকুর কেটেছি, কেউ বাঁধা দেয়নি। সরকারের নদীর জায়গা, সরকার কেটে দিলে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে অনেক অফিসার দেখেছেন কেউ তার পুকুর কাটাতে পারেননি। অনেকবার মাপতে এসেছেন কিন্তু কাটতে পারেননি। তিনি পুকুর পুকুর কেটে মাছের চাষ করে খাচ্ছেন, এতে কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি পুকুর মালিকের।  

এই অবস্থা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল গ্রামের নিচে চিত্র নদীর। চোরকোল গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন ওরফে পুটু মিয়া নদীর বিশাল অংশ দখল করে পুকুর করেছেন। তার পুকুরের কারনে নদীর পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে ইতিপূর্বে আপত্তি দিয়ে কোনো ফল পাননি। ফলে এখন আর আপত্তি দেন না বলে জানিয়েছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা থেকে বেরিয়ে আসা চিত্রা নদী ঝিনাইদহের সদর, কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলা পেরিয়ে যশোরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এই নদী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল আর কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে। চোরকোল গ্রামের নিচে নদীর উত্তরে বিশাল আকৃতির একটি পুকুর রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় বেশিরভাগ অংশ নদীর মধ্যেই। নদীতে পাট ছাড়ানোর কাজে নিয়োজিত রুহুল আমিন জানান, এই পুকুরটি অনেকদিন পূর্বেই মোফাজ্জেল হোসেন ওরফে পুটু মিয়া কেটেছেন। তিনি কখনও অন্যের কাছে ইজারা দেন আবার কখনও নিজে মাছের চাষ করেন। গত সেনা সমর্থিত তত্ববাধায়ক সরকারের সময় অনেক স্থানে থাকা এ জাতীয় পুকুর তারা কেটে ফেলেছেন, কিন্তু পুটু মিয়া তার পুকুরাট কাটেননি। তিনি জোর দিয়েই বলে যান তার পুকুরে কেউ হাত দেবেন না। তিনি ওই গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও অনেকে সাহস পান না।  

অপর এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, এই পুকুরটির কারনে নদীর পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। পুকুর যে স্থানে রয়েছে সেখানে নদী বাঁকা হয়ে গেছে। এখন দেখলেই বোঝা যায় নদীর গতিপথ। তিনি আরো বলেন, পুকুরটির কারনে পানির শ্রোত অনেকটা কমে গেছে। পানি ওই স্থানে এসে বাঁধাগ্রস্থ হয়। এই অবস্থা দেখে তারা ইতিপূর্বে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে, তিনি এসে নদীর জায়গা মেপে পুকুরটি সরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই এই উদ্যোগ থেমে যায়। পুকুর সরানো হয় না। যে কারনে এখন তারা  প্রতিবাদ করেন না। তাছাড়া অভিযোগ করলে কাজ হয়না, উল্টো প্রভাবশালীর রোশানলে পড়তে হয় তাদের বলে জানান। 

এ বিষয়ে মোফাজ্জেল হোসেন জানান, তিনি এরশাদ সরকারের সময়ে এই পুকুর কেটেছেন। আজো কেউ তার পুকুরটি কাটতে আসেনি। এবকার নদীর জায়গা মাপা হয়েছে, পুকুরের কিছু অংশ পড়েছে সরকারি জায়গায়। তারপরও পুকুর রয়েছে। তিনি বলেন, এতোদিনেও যখন কেউ তার পুকুর কাটতে আসেনি, আর কাটবে না। তবে সরকার কেটে দিলে তিনি কোনো আপত্তি করবেন না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম শাহীন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে খোজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। 


No comments

Powered by Blogger.