ভীটে ছাড়া কিশোরী ও তার পরিবার, শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আশ্রয়ের পরিবর্তে

চিত্রা নিউজ ডেস্ক-

প্রতিবেশি মিলন মন্ডলের লালসার শিকার হয়েছিল কিশোরী মেয়েটি (জান্নাত খাতুন)। গর্ভে বাচ্চা আসার পরও বিয়ে করতে না চাওয়ায় কিশোরীর মা আদালতের আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিলন মোল্ল্যাকে (৩৫) ওই মামলায় যেতে হয় কারাগারে। এক পর্যায়ে বিয়ের কাবিন করে জামিনে মুক্তি পান। 

এদিকে কারাগার থেকে ফিরেই মিলন মোল্ল্যা কিশোরীকে স্ত্রী হিসেবে মানতে চাননি। এরই মধ্যে কিশোরীর গর্ভের বাচ্চা জন্ম নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখে। গ্রামের লোকজন বাচ্চাটির কথা চিন্তা করে মিলনের বাড়িতে তুলে দেন ওই কিশোরীকে। এরাপর শুরু হয় বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন। যা সহ্য করে স্বামীর বাড়ি পড়ে থাকলেও গত বছর ডিসেম্বরে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তালাকের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, মাঝে মধ্যে প্রাণনাশের হুমকীও দিচ্ছে। ভয়ে কিশোরীটির পরিবার গত এক বছর বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়বাড়ি-বগুড়া গ্রামের।

কিশোরীর মা রুপসী খাতুন জানান, একমাত্র মেয়ে রেখে তার স্বামী নিরুদ্বেশ হয়ে গেছে। তিনি বাবার বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপর  বড়বাড়ি-বগুড়ায় বসবাস করেন। ২০২০ সালের ২ জুলাই হতে ২০ জুলাই দিনগুলোতে নানা ভাবে তার মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তারই প্রতিবেশি মিলন মোল্ল্যা। একদিন তারা বিষয়টি দেখে প্রতিবেশিদের জানান। তারা বিচারের কথা বলে সময় নষ্ট করে। একটি সময় তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের কাছে নিলে জানিয়ে দেন মেয়ের গর্ভে বাচ্চা রয়েছে। এই কথা শুনে তারা পরিবারের পক্ষ থেকে মিলন মোল্লাকে চাপ দেন মেয়েকে বিয়ে করার। কিন্তু রাজি হয় না। শেষে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ঝিনাইদহ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মিলন মোল্ল্যা সহ ৫ জনকে আসামী করা হয়।  

কিশোরীর মামী মুক্তি খাতুন জানান, এই মামলায় মিলন মোল্ল্যা কারাগারে যান। প্রায় ৬ মাস কারাভোগের সময় পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে তাদের মেয়েকে বিয়ে করবেন বলে একটি সমঝোতা করেন। চার খাল টাকা কাবিন ও শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য নগদ তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়। আদালতে তাদের কাবিন হয়, যা জমা দিয়ে তিনি জামিন পান। জামিনের পর বাড়ি ফিরে তাদের মেয়েকে আর ঘরে নিতে চান না মিলন। এদিকে মিলনের জামিন হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের মেয়ের গর্ভে থাকা সন্তানের জন্ম হয়। গ্রামের লোকজন মেয়েকে মিলনের বাড়িতে তুলে দেন। 

মামী মুক্তি আরো জানান, লোকজনের চাপে মিলন তাদের মেয়েকে ঘরে নিলেও স্ত্রী হিসেবে মানতে পারেনি। উল্টো বাড়িতে আটকে রেখে সারাক্ষন নির্যাতন করেছে। তারপরও কিশোরীটি সহ্য করে স্বামীর বাড়িতে পড়েছিল। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের উপর সারাক্ষন চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে তালাক করার। এই কথায় রাজি না হওয়ায় তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

কিশোরীর মা রুপসী বেগম জানান, তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। তার কারনে তার বৃদ্ধা মা ও ভায়ের স্ত্রীও বাড়িছাড়া। মোট ৮ সদস্য বর্তমানে অন্যত্র ঘর ভাড়া করে আছেন। নিজেদের বাড়িঘর থাকতেও অন্যের ঘরে অত্যান্ত মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। তিনি একটি ক্লিনিকে কাজ করে মেয়ে আর মেয়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া ওই শিশুকে মানুষ করছেন। বিদেশে থাকা ভায়ের পাঠানো টাকায় ভায়ের স্ত্রী তার সন্তান আর তার মা বেঁচে আছেন। 

এ বিষয়ে প্রতিবেশি জামির হোসেন জানান, তারা একাধিকবার চেষ্টা করেছেন মেয়েটিকে নিয়ে মিলন মোল্ল্যা সংসার করুক। কিন্তু তিনি মামলা থেকে বাঁচতে নানা সময় কৌশল করেন। মেয়েটিকে বাড়িতে নেন আবার নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, এর একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি বাড়ি ছাড়াদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে এটা সকলেই আশা করেন।

মিলন মোল্ল্যা জানান, তিনি বিয়ে করেছেন এখন সংসার করতে চান। কিন্তু কিশোরীর পরিবার তাদের সংসার করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, মিমাংশার সময় টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তিনি এক লাখ টাকাও দিয়েছেন। এই টাকা তার স্ত্রীর কাছে থাকবে, কিন্তু অন্যরা নিতে চান। তিনি আরো বলেন, মূলত তারা টাকা নিতে চান সংসার করতে চান না। এছাড়া তাদের বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে বলেন, ঘটনা তার ও তার স্ত্রীর মধ্যে হয়েছে। কিন্তু মামলা করার সময় গ্রামের নিরিহ আরো ৫ জনের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। যে কারনে তারা এখন চাপ দিচ্ছে। এই কারনে তারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকেন।

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার এসআই আব্দুস শহীদ জানান, মামলায় তারা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এখন বিচার চলছে। তবে মিলন মোল্ল্যা মাঝে এসেছিলেন, তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। এ ব্যাপারে জানার জন্য উভয় পক্ষকে ডেকেছিলেন, কিন্তু তারা আসেনি। যে কারনে অভিযোগের তারা কোনো সমাধান করতে পারেননি। 


No comments

Powered by Blogger.