প্রায় ৬০ বিঘা জমি মালিক,বানিয়েছেন আলীসান বাড়ি কালীগঞ্জে দিন মুজুর থেকে কোটিপতি সুদে কারবারি দুই সহোদর

স্টাফ রিপোর্টার-

চারভাই দুই বোনের সংসারে বাবা বারেক মোল্লা পরের ক্ষেতে কাজ করতেন। ভিটাবাড়ি ছাড়া মাঠে কোন ফসলি জমি নাথাকায় খুব কষ্টেই চলতো তাদের সংসার। বাবা বারেক মোল্লা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই নজরুল ইসলাম  সংসারে হাল ধরেন। তিনি সেই থেকে এখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আর মেঝো ভাই রেজাউল ইসলাম  গ্রামের মোতলেব মোল্লার বাড়িতে ও সেজো ভাই শরিফুল ইসলাম একই গ্রামের ছিদ্দিক লস্কারের বাড়িতে দিনমজুর থেকে কাজ করতেন। ছোট বেলায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে এভাবেই দিনোপথ চলতো তাদের। এখন সেই রেজাউল ও শরিফুল সুদে কারবারি করে হয়েছেন কোটিপতি। ক্রয় করেছেন এলাকায় প্রায় ৬০ বিঘা জমি,বানিয়েছেন আলীসান বাড়ি। কোলা বাজারে সিংড়া রোডে অবস্থিত সুনিল ঘোষের নিকট হতে প্রায় তিন বছর আগে রেজাউল ক্রয় করেছেন ৫৬ লক্ষ টাকার বিশাল একটি গো-ডাউন। বলছিলাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুদের কারবারি খ্যাত জামাল ইউনিয়নে বড়তালিয়ান গ্রামের সুদে কারবারী রেজাউল ও শরিফুল নামের দুই সহদরের কথা। তাদের চড়া সুদের অত্যাচারে কোলা,ডাউটি,বিনোদপুর,পারখালকুলা,খেদাপাড়া, কোলার দাসপাড়াসহ হিন্দু স¯প্রাদের অনেকে  এলাকা ছাড়া আবার অনেকে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। 

খোজখবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বড়তালিয়ান গ্রামের মৃত বারেক মোল্লার ছেলে সুদে কারবারি রেজাউল ও শরিফুল একসময় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। খাওয়া-পরা শেষে মাসে যে টাকা পেতেন তা তিনি অভাবগ্রাস্থ কৃষকের কাছে দ্বিগুন টাকা ফেরত দেওয়ার মৌখিক চুক্তিতে খাটাতেন। এভাবে সে ও তার ভাইয়ের সুদে কারবারির পথ চলা শুরু। ২০১৬ সালের পর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহতায় বীরদর্পে এই সুদে কারবার চালিয়ে যান দুইভাই। সুদে টাকার জামানত হিসাবে গ্রহিতার নিকট হতে তারা ফাকা ব্যাংক চেক ও খালি স্টা¤েপ স্বাক্ষর করে নিতেন। টাকা দিতে ব্যার্থ হলে জামাল ইউনিয়ন বোর্ড অফিসে বসাতেন শালিস। শালিসে জামাল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও কোলা পুলিশ ক্যা¤প আইসি উপস্থিত থাকতেন বলেও জানা গেছে। সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার উপর চড়াও হতেন তারা। দেখাতেন মামলার ভয়। সুদে কারবারির কারনে রেজাউল ও তার ভাইয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন। এছাড়া চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেনের সাথে সুদে কারবারি রেজাউল এর রয়েছে ইট,বালি, সারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। তাছাড়া সুদে কারবারি কোটিপতি রেজাউালকে চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন করে দিয়েছেন প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড ও ছেলেকে দিয়েছেন চাকুরী। 

সুদে কারবারি রেজাউল ও শরিফুলের ছোট ভাই ভ্যান চাকল মনিরুল ইসলাম জানান, আমাদের চারভাই দুই বোনের সংসারে খুবই অভাব ছিলো। অভাবের তাড়নাই আমার এক বোন গলাই ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করেছিল। রেজাউল ও শরিফুলের সাথে কোন স¯পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এসব অপছন্দ করি। আমি একটি মসজিদে কোনো বেতন ছাড়াই ইমামতি করি। রোজার সময় টাকা পয়সা ছাড়া আমি তারাবি পড়াই।

বড় তালিয়ান গ্রামের মৃত আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে মাস্টার আতিয়ার রহমান জানান, জামাল ও কোলা ইউনিয়নের সুদখোরদের দৌরাত্ব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে। চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষের সাময়িক অসুবিধা কে পুঁজি করে সরব অত্যাচার চালাচ্ছে সুদখোর রেজাউল, শরিফুল সহ ছোট-বড় অনেক সুদে কারবারিরা। ইউনিয়ন পরিষদের সব সুবিধা এই সুদে কারবারিদের প্রদান করে থাকেন জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। 


জামাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন জানান, এইসব নোংরা কাজের সাথে আমার কোনো স¤পৃক্ততা নেই। আমার কাছে কোন অভিযোগ আসলে আমি সমাধানের চেষ্টা করি এবং ভুক্তভোগীদের সতর্ক করি। রেজাউল কিংবা তার ভাইয়ের সাথে আমার কোন ব্যবসা নেই। সুদখোরদের বিরুদ্ধে আমি বরাবরই উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে কথা বলি। 

উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ বড় তালিয়ান নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রেজাউল ও তার ভাই শরিফুলকে আটক করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। এসময় জব্দ করা হয় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪ টি স্ট্যা¤প ও ১৫০ পাতার একটি হিসাব লিখিত খাতা।


  

No comments

Powered by Blogger.