কোটচাঁদপুরে বাওড় রক্ষায় হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীদের মানববন্ধন



রোকনুজ্জামান কোটচাঁদপুর থেকে-

 বাওড় রক্ষায় হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন তারা বাওড় পারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে। 
গত ১৩ এপ্রিল বাওড়ের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। 
এরপেক্ষিতে গত ১৪ এপ্রিল বাওড়ের তীরে নিশানা দিয়ে, ডিসি অফিসের নির্দেশে তা দখল নেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তা নিরুপমা রায় ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
বাওড় পাড়ে মাইকিং ও করেন সংশ্লিষ্টরা। এতে গত ১ মাস বাওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। সোমবার সকালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা জয়দিয়া বাওড় পাড়ে এমন মানববন্ধনে হাজির হন ৭০ বছর বয়সী শ্রী নিত্য হালদান, যার ৫৮ বছরই কেটেছে জাল দড়া টেনে। মানববন্ধনে হালদার সম্প্রদায়ের কয়েক’শ মানুষ উপস্থিত হয়ে বলেন আমরা বাওড় পাড়ের মানুষ। বাওড় ইজারা দিয়ে দিলে আমরা কি করে খাবো কেনে যাবো। তাদের পেটে লাথি না মারার আকুতি জানান জগো হালদার প্রসিদ হালদার,সন্তোষ হালদার,কার্তিক হালদার,শ্রীদাম হালদার,মাধব হালদার,পদ্ম রানি হালদার,শংকরি হালদার,দিলিপ হালদার, মানববন্ধনে দিলিপ হালদার নামে এক মৎস্যজীবী বস্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, হালদার সম্প্রদায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বলে এসেছেন “হয় বিষ দ্যান না হয় বাওড়ের মালিকানা দ্যান”। বাপ দাদার কর্মক্ষেত্র জয়দিয়া বাওড় ইজারা দেয়া হলে তারা সেচ্ছায় আত্মহুতির কর্মসুচি দিতে বাধ্য হবেন বলেও জানান এই মৎস্যজীবী। তাদের ভাষ্য, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমল থেকে তারা বাওড়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও বৃহৎ একটি পরিবার তাদের আয়ের উপর নির্ভরশীল। জীবন সয়াহ্নে এসে তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন জয়দিয়া বাওড়ের মালিকানা হারাতে বসেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন টেন্ডারের মাধ্যমে বাওড়গুলো ইজারাদানের পক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হাওয়া পথে । ফলে কর্ম হারানোর প্রহর গুনছেন বাওড়পাড়ের হাজারো মৎস্যজীবী পরিবার। নির্ভরশীল প্রায় ৪০০ হালদার পরিবারের মানুষের মাঝে নেমে এসেছে চরম হতাশা। 

মৎস্যজীবীরা জানান, সরকারের ভুমি মন্ত্রনালয় ঝিনাইদহের ৬টি বাওড় ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাওড়গুলো হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাঠগড়া, ফতেপুর, কোটচাঁদপুরের বলুহর, জয়দিয়া, কালীগঞ্জের মর্জাদ এবং বেড়গোবিন্দপুর। এ সব বাওড়ের মোট জলাকার হচ্ছে ১১৩৭ হেক্টর। ৬টি বাওড় এলাকায় ৭৬৭টি পরিবারের প্রায় ৫ হাজার সদস্য এ সব বাওড় থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মৎস্যজীবীরা সরকারের “জাল যার জলা তার” এই নীতির উপর ভর করে সেই ১৯৭৯ সাল থেকে বাওড়ে মাছ ধরে আসছিলেন। সুফলভোগী মৎস্যজীবী কার্তিক হালদার জানান, বাওড় ইজারা দিলে সরকারের এককালীন বেশি টাকা আয় হলেও একদিকে যেমন বাওড়গুলো ক্ষতির মুখে পড়বে, তেমনি মালিকানা হারিয়ে পথে বসবে বাওড়ের উপর নির্ভরশীল হাজারো পরিবার। ফলে ধ্বংস হবে জীববৈচিত্র্য। বাওড়গুলো চলে যাবে প্রভাবশালী মধ্যসত্বভোগীদের দখলে। ইতিমধ্যে একটি ভুইফোড় সমিতির নামে কোটি কোটি টাকার ডাক তুলে সিডি জমা দেয়া হয়েছে বলে মাধব হালদারের অভিযোগ। এ বিষয় কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উছেন মে বলেন, এটা ল্যান্ডমিস্ট্রিরী থেকে ইজারার বিষয় টা এসছে ওটা ডিসি অফিস দেখবে। আমরা লোকাল অথরিটি এখানে আমাদের কিছু করার নেই আমাদের দায়িত্ব ছিল বুঝিয়ে দেওয়ার আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি। 


No comments

Powered by Blogger.