কালীগঞ্জে বিক্রয় জমি রেজিস্ট্রী করা নিয়ে চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব, উল্টো আদালতে মামলা দায়ের চাচার

এম শাহজাহান আলী সাজু- ৪ বছর পূর্বে চাচা জহর আলী ওরফে জুলু ডাক্তারের নিকট হতে জমি ক্রয় করেন ভাতিজা সাহেব আলী। সাহেব আলীর ক্রয়কৃত জমি চাচা জহর আলী দখল সত্ব বুঝে দিলেও রেজিষ্ট্রি না করে কাগজপত্রের ত্রুটির কথা বলে ঘোরাতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ২০২০ সালে বিক্রি করে দেওয়া জমি ভাতিজাকে আর রেজিষ্ট্রী করে দেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চাচা জহর আলী। এমনকি ঐ জমি নিজ দখলে নিতে উল্টো আদালতে মামলাও করেছেন ভাতিজা সাহেব আলীর নামে। জমি নিয়ে চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বের ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামে। এঘটনায় স্থানীয় ভাবে কয়েক বার শালিশি বৈঠক হলেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। সাহেব আলী উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের মোঃ আলী মালিথার ছেলে। খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর পূর্বে ৪৭ নং ত্রিলোচনপুর মৌজার এসএ ২২৬ ও আরএস ৫৩৭/২৩৩ খতিয়ানের ১১৪০ দাগের মোট ৬৮ শতাংশ জমি সাহেব আলী তার চাচা জহর আলী ওরফে জুলু ডাক্তারের নিকট থেকে ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেন। ঐ সময় বাজার দর অনুযায়ী চাচা জহর আলী গ্রামের মুরব্বিদের উপস্থিতিতে জমি বিক্রয়ের মোট টাকা বুঝে নিলেও তা রেজিষ্ট্রী করে দেন না। জমির কাগজপত্রের ত্রুটির কথা বলে এবং তা ঠিক করে রেজিস্ট্রী করে দেবেন বলে ঘোরাতে থাকেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে ঐ জমির দাম বর্তমানে দ্বিগুন হওয়ায় জমি আর রেজিষ্টী করে দেবেন না বলে নানা ছলচাতুরী শুরু করেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে বসা উঠা করলেও তার কোন সুরাহ হয়নি। ভুক্তভোগী সাহেব আলী জানান, ৪ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বাড়িতে আসেন তিনি। এ সময় তার আপন চাচা নিকট হতে বাড়ির পাশের জমি কেনার জন্য রাজি হন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবাস জীবনের কষ্টার্জিত সব টাকাসহ ধার দেনা করে ৬৮ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তিনি। ক্রয়কৃত জমি তার চাচা দখল সত্ব দিলেও রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে শুরু থেকে ঘোরাতে থাকেন। একপর্যায়ে ২০২০ সালে বিক্রি করে দেওয়া জমি আমাকে রেজিষ্ট্রী করে দেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন চাচা। এমনকি ঐ জমি নিজ দখলে নিতে আদালতে মামলাও করেছেন আমার নামে। তিনি আরো জানান, ভিটের উপর টিনের ঘর ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। জীর্ণশীর্ণ টিনের তৈরি বাড়িতে বাবা-মাকে নিয়ে কোন রকমে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে পরের খেতে কামলা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সারাজীবনের অর্জিত অর্থ দিয়ে জমি কিনে চাচার দ্বারা প্রতারিত হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সুষ্ঠু বিচারের আশায়। তিনি বলেন, আমার সাথে চাচার এই প্রতারনা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার টাকা দিয়ে কেনা জমি আমার নামে দ্রুত রেজিষ্ট্রী করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলামের ছেলে আসাদুল ইসলাম বলেন, কোটচাঁদপুরে জুলুর বাড়িতে যেয়ে জমির ৪ লাখ টাকা আমি নিজে তুলে দিই তার হাতে। কয়েকবারে সে সাহেব আলীর কাছ থেকে জমির মূল্য বাবদ মোট ৯ লাখ টাকা নিয়েছে। গ্রামের সকলে তা জানে। জহর আলী জুলুও নিজেও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় চাচা ভাতিজাকে জমি লিখে না দিয়ে প্রতারনা করছে। আমরা গ্রামবাসী চায় অসহায় সাহেব আলীকে তার হক ৬৮ শতক জমি চাচা জুলু রেজিষ্ট্রী করে দিক। অভিযুক্ত চাচা জহর আলী ওরফে জুলু ডাক্তারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি সাহেব আলীর নিকট জমি বিক্রি করিনি। সে আমাকে টাকা দিয়েছে তার প্রমাণ কি? তাছাড়া ঐ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে আমি মামলা করেছি। আমি ইস্তেমায় আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবো বলে মুঠোফোনের সংযোগটি কেটে দেন। ৬ নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, চাচা ভাতিজার জমি-জমা ও লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকবার বসা উঠা করা হয়েছে পরিষদে। চাচা জুলু ডাক্তার জমি বিক্রি বাবদ ভাতিজা সাহেব আলীর নিকট থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু বর্তমানে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি সাহেব আলীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেবেন না। এই নিয়ে ঝামেলা চলছে। এখনো কোনো সমাধানে আসতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.