ঝিনাইদহে টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো হয়রানি, মামলা থেকে বাঁচতে ৬ জালিয়াতের মানববন্ধন নাটক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- বেনামে ভুয়া ঋণ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ৬ প্রতারকের বিরুদ্ধে। মানুষের সহানুভুতি পেতে ও মামলা থেকে বাঁচতে মানববন্ধন নাটক করছে ওই ৬ জালিয়াত। আত্মসাতের টাকা না দেওয়ার পায়তারাসহ নানা কৌশল আটছেন প্রতারক ওই ৬ জন। জানা যায়, ঝিনাইদহের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিও’র ফরিদপুর শাখায় শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সুইগ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবিএম মাহবুবুর রশিদ, যশোর সদর শাখায় কর্মরত ছিলেন শৈলকুপা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মুবারক হোসেনের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন, ঝিকরগাছা শাখায় শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম, যশোর সদর শাখায় ফিল্ড অফিসারের দ্বায়িত্বে ছিলেন কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা গ্রামের মন্টু বিশ্বাসের মেয়ে তানিয়া খাতুন, ঝিনাইদহ সদর শাখায় শাখা ব্যবস্থাপকের দ্বায়িত্বে ছিলেন খুলনার খালিশপুর উপজেলার রায়ের মহল গ্রামের শেখ মোজাম্মেল হোসেনের মেয়ে মাছুদা পারভীন ও কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার শাখায় কর্মরত ছিলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষীনগর গ্রামের বোরহান উদ্দিন মোল্লার ছেলে আজিজুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতারক এবিএম মাহবুবুর রশিদ ফরিদপুর শাখায় কর্মরত অবস্থায় মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সদস্যদের নিকট থেকে সঞ্চয়ের টাকা, ডিপিএসএর টাকা, অগ্রীম কিস্তির টাকা আদায় করে অফিসে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে। এছাড়াও নামে বেনামে ভূয়া ঋণ বিতরণ দেখিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করে। এমনকি ফরিদপুর শাখার কর্ম এলাকায় ওই নামে কোন মানুষই নেই তার নামে ভূয়া আইডি কার্ড বানিয়ে ভূয়া ঋণ বিতরণ দেখিয়ে সেই টাকাও সে আত্মসাৎ করেছে। ফরিদপুর শাখায় অডিট হলে দেখা যায় সে ২৯ লাখ ৪০ হাজার ৭ শত টাকা আত্মসাৎ করেছে। জানা যায় প্রতারত মাহবুবুর রশিদ এর আগেও যেসকল প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছে সেই সকল প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে হীড বাংলাদেশ এনজিও ও পিদীম ফাউন্ডেশন এনজিও থেকেও বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে। যে কারণে তার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা চলমান রয়েছে । সিআর মামলা নং- এস/সি ২২৮৬৪/২০১৯। একই ভাবে প্রতারক তানিয়া খাতুন যশোর সদর শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় বড় লোন দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় এনে অফিসে জমা না দিয়ে আত্মসাত করে এবং একাধিক সদস্যর নামে ভুয়া ঋণ বিতরণ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়াও সদস্যদের কাছ থেকে সাধারণ সঞ্চয়ের টাকা, এফডিপিএস’র টাকা, অগ্রীম কিস্তির টাকা এবং অফিসের ক্যাশের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করে। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর বিষয়টি সে স্বীকার করে ১ সপ্তাহের সময় নিয়ে নিজ স্বাক্ষরিত ১৯ লক্ষ টাকার একটি চেক দেয়। প্রতারক আমিরুল ইসলাম যশোরের ঝিকরগাছায় কর্মরত থাকা অবস্থায় ফিল্ড অফিসারের যোগসাজসে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়াও প্রতারক তানিয়া খাতুন, মাছুদা পারভীন ও আজিজুল ইসলাম তার কর্ম এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। গ্রাহকের টাকা অফিসে জমা না দেওয়া, ভুয়া লোক দেখিয়ে ঋণ দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতারক এই চক্রটি। অডিট শেষে এই প্রতারণা ধরা পড়লে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সিও কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেএ প্রতারক এই ৬ জন পুরো টাকা আত্মসাতের জন্য পায়তারা শুরু করেছে। মামলা থেকে বাঁচতে মানববন্ধনসহ নানা ফন্দি আটছে তারা। সাংবাদিকদের কাছে দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্য। এ বিষয়ে অভিযুক্ত এবিএম মাহাবুবুর রশিদ, আমিরুল ইসলাম, সাবিনা ইয়াসমিন, তানিয়া খাতুন, মাছুদা পারভীন ও আজিজুল ইসলাম বলেন, সিও সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তারা এ মামলা থেকে পরিত্রান চাই। এ ব্যাপারে সিও’র সহকারী নির্বাহী পরিচালক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এই প্রতারক চক্র আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। আমরা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। মামলা করেছি। সেই মামলার তদন্তেও প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

No comments

Powered by Blogger.